Uunchai-Sooraj barjatya

কম সংখ্যার প্রেক্ষাগৃহে চলেও ‘উঁচাই’ ছোঁয়া গেল, এই কৌশলই কি নতুন পথ দেখাবে বলিউডকে?

মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহে পা রাখছে সুরজ বরজাতিয়ার ‘উঁচাই’। দেশে পাঁচশোরও কম পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। কেন এমন পন্থা নিলেন নির্মাতারা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৮:১৪
Share:

কম সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘উঁচাই’। ছবি: সংগৃহীত

হিন্দি ছবির সাফল্যে বক্স অফিস পরিসংখ্যান এবং প্রেক্ষাগৃহের অনুপাত শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একই দিনে ছবি মুক্তির লড়াই, ‘ফার্স্ট ডে কালেকশন’ কিংবা শো-এর সংখ্যা নিয়ে রেষারেষি— বার বার এই প্রশ্নই তুলে ধরেছে, কে আগে? বিষয়বস্তু না কি সিনেমা ‘বিক্রি’র বাজারকৌশল। অতিমারি পরবর্তী পর্যায়ে ‘সুপারস্টার’দের যেমন নতুন ভাবে ভাবতে হচ্ছে, ঠিক তেমনই ছবি মুক্তির কৌশল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন প্রযোজক থেকে শুরু করে হল মালিকরা। সেখানে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে সুরজ বরজাতিয়া পরিচালিত ‘উঁচাই’ ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন পথ দেখাচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

Advertisement

গৌরচন্দ্রিকা

১১ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে ‘উঁচাই’। ছবিতে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খের, বোমান ইরানি, ড্যানি ডেনজংপার মতো বি-টাউনের এক দল বর্ষীয়ান অভিনেতা। বিগ-বি’র ছবি, তার উপর সুরজের কামব্যাক ছবি। অথচ ছবিটা দেশে পাঁচশোর কিছু কম স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে! ছবির প্রযোজক ‘রাজশ্রী প্রোডাকশনস’-এর তরফে নির্দেশ ছিল, সকাল বা বেশি রাতের শো-এর প্রয়োজন নেই। সিঙ্গল স্ক্রিন বিশিষ্ট প্রক্ষাগৃহে দিনে ১ থেকে ২টো শো যথেষ্ট!

Advertisement

‘উঁচাই’ ছবির প্রচারের ফাঁকে অনুপম খের, অমিতাভ বচ্চন, সুরজ বরজাতিয়া ও বোমান ইরানি। ছবি: সংগৃহীত।

বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ

ভালমন্দের মিশেলে মোটের উপর ‘উঁচাই’ নিয়ে দর্শকের তরফে ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া গিয়েছে। বক্স অফিসে ‘উঁচাই’ প্রথম দিন ১ কোটি ৮১ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছিল। সিনেমা বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ এই পরিসংখ্যান নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। বরং পাশাপাশি তাঁরা জানিয়েছিলেন, ছবির ব্যবসা ধীরে ধীরে বাড়বে। তা হলে প্রথম সপ্তাহের শেষে কেমন ফল করল এই ছবি? বুধবার পর্যন্ত এই ছবির ব্যবসার অঙ্কের পরিমাণ ১৫ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা।

রাজ্যের ছবিটা কী রকম?

এ রাজ্যে ‘উঁচাই’-এর পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছ ‘জালান ডিসট্রিবউটর’। স্বল্প পরিসরে ছবি মুক্তির এই কৌশল কে তারা কী ভাবে দেখেছে? সংস্থার তরফে কুশাগ্র জালান বলছিলেন, ‘‘সিনেমা বাজারে রাজশ্রীর ৭৫ বছরের অভিজ্ঞতা। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত এবং সেটা সফল হয়েছে। আমি তো খুব খুশি।’’ রাজ্যে কমবেশি ৪৫টা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘উঁচাই’। শুরু থেকেই কানে আসছিল, ছবিটা নাকি একটু প্রৌঢ় দর্শকের কথা মাথায় রেখেই তৈরি। তাই নাকি ছোট পরিসরে রিলিজ করা হয়েছে। ‘‘সম্পূর্ণ যুক্তিহীন ধারণা। একটা গল্পের আবেদন দু’জনের কাছে দু’রকম হতে পারে। তার উপর অমিতাভ বচ্চনের ভক্ত আট থেকে আশি,’’ মত কুশ্রাগ্রর।

আশাবাদী হল মালিকরা

‘উঁচাই’-এর মুক্তি কৌশলকে এক অর্থে মান্যতা দিচ্ছেন বাংলার হল মালিকরা। মাল্টিপ্লেক্সে এই ছবির ইনিংসটা কী রকম? আইনক্স-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর (ইস্ট) অমিতাভ গুহ ঠাকুরতা জানালেন, প্রথম সপ্তাহে তাঁদের ১০ টা মাল্টিপ্লেক্সে ‘উঁচাই’-এর মোট ৭৯টি শো দেখানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম সপ্তাহে ছবিটা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উৎসাহ রয়েছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ বা দক্ষিণী ছবি ‘কান্তারা’র মতো শো হাউসফুল না হলেও আমরা এই ছবিটার ক্ষেত্রে বড় সংখ্যায় দর্শক পেয়েছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে ছবিটা আরও ভাল ফল করবে।’’ কলকাতায় দুটো সিঙ্গল স্ক্রিন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহে চলছে সুরজ বরজাতিয়ার এই ছবি— উত্তর কলকাতার ‘স্টার’ এবং দক্ষিণ কলকাতার ‘প্রিয়া’। প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘বিষয়বস্তু অনুযায়ী রিলিজ পরিকল্পনা করতে হবে। সেখানে ওরা খুব ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কম প্রেক্ষাগৃহ মানে বেশি দিন ছবিটা চলবে। তার পর লোকমুখে ছবির প্রচার হলে দ্বিতীয় সপ্তাহে পর্দার সংখ্যা বাড়ানো যায়।’’

শহরের একটি সিঙ্গল স্ক্রিন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ। ফাইল চিত্র।

উল্লেখ্য, বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও এই ফর্মুলা কাজে দিয়েছে। ‘ছোট’ বাজেটের ছবি হওয়া সত্ত্বেও প্রসূন চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দোস্তজী’ ছবিটাকে নিয়ে দর্শকের কৌতূহল বেড়েছে। ছবির পরিবেশক শতদীপ সাহা জানালেন, প্রথম সপ্তাহে ছবিটা ২৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। দ্বিতীয় সপ্তাহে হল বেড়ে সংখ্যাটা হয়েছে ৩৭। এই প্রসঙ্গেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক হল মালিক বললেন, ‘‘আয় বুঝে ব্যয় করাই তো ভাল। এখন পরিবেশকরাও ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করছেন জেদ করে বা জোর করে ছবি চালালে আখেরে কারও লাভ নেই!’’ আবার অপর এক হল মালিক মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘তার মানে আবার এই নয় যে, শাহরুখের ‘পাঠান’-এর মতো ছবি ‘উঁচাই’-এর মতো কম সংখ্যক পর্দায় মুক্তি পাবে!’’ ছবির বিষয়বস্তু এবং টার্গেট অডিয়েন্স যে আগামী দিনে সিনেমার ব্যবসাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করবে, সে কথা স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই।

ফিরে দেখা

‘রাজশ্রী’র ঘর থেকে নব্বইয়ের দশকে একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবি বেরিয়েছে। বারুইপুর শো হাউস-এর কর্ণধার শান্তনু রায়চৌধুরী কথা প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন অতীতে। বলছিলেন, ‘‘মনে পড়ছে ‘হম আপকে হ্যায় কওন’ কলকাতায় দুটো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। টানা হাউসফুল শো। এ বারে ওরা ছবির দর্শক বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন তার ফলও পাচ্ছে।’’ অরিজিৎ দত্তর মনে পড়ছে, ‘‘প্রিয়া তে ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবিটার ৪টে শো চলত। হলের বাইরে মানুষের লম্বা লাইন। সে সব এখন অতীত।’’

‘হম সাথ সাথ হ্যায়’ এবং ‘হম আপকে হ্যায় কওন’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত।

উল্লেখ্য, এক সময় কলকাতায় ‘রাজশ্রী’র নিজস্ব অফিস ছিল। সে অফিসের দরজা অনেক আগেই বন্ধ করেছেন সুরজ। ৭ বছর আগে সুরজের পরিচালনায় শেষ ছবি ছিল ‘‘প্রেম রতন ধন পায়ো’’। এ রাজ্যে ছবিটি পরিবেশনার দায়িত্বে ছিল ‘ওম মুভিজ’। সংস্থার তরফে দেবাশিস দে জানালেন, সেই সময় ছবিটা কমবেশি ২২২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এখন ২৮ দিন একটা ছবি চালাতে জিএসটি নিয়ে ডিজিটাল খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা! সেখানে ‘রাজশ্রী’র কৌশল অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির কাছে শিক্ষণীয়।’’ তবে সেই সঙ্গে কিছুটা হতাশাও ফুটে ওঠে তাঁর কণ্ঠে। ‘‘কিন্তু এই পেশায় শেষে খারাপটাই সবাই গ্রহণ করে। ‘দৃশ্যম ২’ নিয়ে ইতিমধ্যেই লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। লড়াই করে কার ক্ষতি করছি আমরা,’’ পাল্টা প্রশ্ন তাঁর।

আগামী সপ্তাহের সম্ভাবনা

পরিবেশক সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে বক্স অফিসে প্রথম সপ্তাহের ইতিবাচক ফলাফল দেখে আগামী সপ্তাহে ‘উঁচাই’-এর শো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুশাগ্রর কথায়, ‘‘আমার মনে হচ্ছে আরও ১০টা মতো হল বাড়বে। ছবিতে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প অভিযান দেখানো হয়েছে। তাই উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে ছবিটার ভাল চাহিদা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন