নিজেকে বলিউডের লোক মনে করেন না বলেই চকমকে দুনিয়ার বাইরে আটপৌরে জীবন কাটাতে কলকাতায় পালিয়ে আসেন। এখনও বলেন, পরিচালকের আগে তিনি একজন ফুটবলার। যতটা অনায়াসে সেলেব্রিটির জার্সি খুলে ফুটবল পায়ে মাঠে নেমে পড়তে পারেন, ততটা অনায়াসেই ‘আনকন্ডিশনাল লাভ’ খুঁজতে পারেন! তাঁর আগামী ছবি ‘অক্টোবর’ এমন প্রেমের গল্প বলে, যেখানে কোনও শর্ত নেই। আছে শুধু সমর্পণ!
প্র: অক্টোবর মাস, শিউলি ফুল বাঙালির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই ছবিতেও কি বাঙালিয়ানার ছোঁয়া পাওয়া যাবে?
উ: পরিচালক যখন বাঙালি, খানিকটা বাংলা টাচ তো থাকবেই (হাসি)! আমাদের কাছে শিউলি ফুল মানেই দুর্গাপুজো। ছবির নাম ভাবার সময় শিউলি ফুলের প্রসঙ্গে অক্টোবর নামটা মাথায় আসে। এই ছবির মধ্য দিয়ে দর্শক শিউলি ফুলের গন্ধ পাবেন, এটুকু বলতে পারি।
প্র: ‘ইয়াহাঁ’, ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’, ‘ভিকি ডোনার’, ‘পিকু’ প্রত্যেকটাই বিষয়গত দিক থেকে আলাদা। ছবির গল্প বাছাই করেন কী ভাবে?
উ: আমার ছবিতে তো সে ভাবে গল্প থাকে না। একটা সুতো বাঁধতে বাঁধতে এগোই। আমার ছবি এক্সপিরিয়েন্স করলে বেশি মজা। ‘পিকু’র কথাই ধরুন। বাবা, মেয়ে আর কনস্টিপেশন। ব্যস! চিত্রনাট্য নির্ভর কাজ করি। যতক্ষণ না মনের মতো স্ক্রিপ্ট পাচ্ছি, ততক্ষণ ঘষামাজা চলতে থাকে। নিজের পারিপার্শ্বিক থেকেই গল্পের রসদ পাই। যে কারণে চরিত্রগুলো খুব জীবন্ত। দীপিকা যেমন ভীষণ ভাবে পিকু হয়ে উঠেছিল। ‘অক্টোবর’-এও তেমনই। বরুণ এখানে শুধুই ড্যান।
প্র: বরুণ ধবন যে ধরনের ছবি করেন, আপনি তার সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ছবিতে বিশ্বাসী।
উ: একেবারে নর্থ পোল-সাউথ পোল! আমি তো বরুণের কোনও ছবিই দেখিনি (হাসি)!
আরও পড়ুন: মাধুরী দীক্ষিত কো গুস্সা কিঁউ আয়া?
প্র: তাই!
উ: হ্যাঁ। তবে ফোনে কথা হতো। একসঙ্গে কাজ করতে চাইত। একদিন ফোন করে দেখা করতে চাইল। সে দিনই আবার আমি কলকাতা চলে আসছি। তাও ডেকে নিলাম। বরুণ সেই ঘুম থেকে ওঠা জামাকাপড়েই চলে এল। আমার অফিসে এসে চপ্পল খুলে সোফায় পা মুড়ে বসল। ওর চোখের দিকে তাকিয়েই মনে হল, এই বরুণকে তো আমি আগে দেখিনি। ওকে চা করে দিলাম। সেটা আবার হাত থেকে ফেলে দিল! সব মিলিয়ে বড্ড ভাল লেগে গেল ছেলেটাকে। ওর কয়েকটা ছবি তুলে আমার প্রযোজক রনি (লাহিড়ি) আর স্ক্রিপ্টরাইটার জুহিকে (চতুর্বেদী) পাঠালাম। ওরাও ভাবতে পারেনি, আমি বরুণকে নিয়ে এতটা এক্সাইটেড হব! এ দিকে তো ড্যানকে খোঁজার জন্য সারা ভারত তোলপাড় করে ফেলেছি। বনিতার কাস্টিং যেমন একদম প্রথমে হয়েছিল। একটা বিজ্ঞাপনে ওকে দেখে পছন্দ হয়ে যায়। বরুণ তো আমার রাডারেই ছিল না।
প্র: বরুণকে তো গ্রুম করতেও হয়েছে?
উ: হ্যাঁ। ওকে আমার দুনিয়ায় নিয়ে আসতে হয়েছে। আমি তো আর ওর দুনিয়ায় যেতে পারব না (হাসি)! ও সকালে উঠেই মোবাইল হাতে তুলে নেয়। বারণ করে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, বাড়িতে গাছ থাকলে সেখানে গিয়ে চুপ করে ১০ মিনিট বসে থাকবি। ওকে মেডিটেশন শিখিয়েছি। এ ভাবেই বরুণকে আমার দুনিয়ায় এনেছি।
প্র: আপনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন, ব্যবসায়িক সাফল্যও। তাও বলিউডের তথাকথিত নামজাদাদের তালিকায় আপনাকে ফেলা হয় না! একটু যেন অন্তরালে...
উ: (সময় নিলেন) আমি তো আসলে বলিউডের লোক নই। পার্টিগুলোতেও আমাকে দেখা যায় না। মুম্বইয়ে কাজ না থাকলে কলকাতায় পালিয়ে আসি। দিল্লির ছেলে হলেও এখন কলকাতাতেই বেশি স্বস্তি পাই। জীবনে মাটি আঁকড়ে চলাটা খুব জরুরি। এখানে এলে আমার মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাই। আমি আর আমার স্ত্রী ঠিক করেছিলাম, মেয়েদের বলিউডের পরিবেশের বাইরে রাখব। কলকাতায় আসার আর একটা নেশা ফুটবল।
প্র: এই জন্যই কি আপনার টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা, ‘ফার্স্ট ফুটবলার, দেন ফিল্মমেকার’?
উ: (দরাজ গলায় হেসে উঠলেন) ফুটবল আমার প্রাণ। কলকাতায় এলেই মাঠে নেমে পড়ি।
উপল (সেনগুপ্ত), অনুপমকে (রায়) কখনও ডেকে নিই সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে। অনেকেই জানে, শুটিং শেষ করেই আমি আবার ফুটবল খেলতে ছুটি। ফিল্ম আমার কাছে ফুটবলের পরে।
প্র: এ বার ফুটবল নিয়ে ছবিটা হয়ে যাক।
উ: সেই কবে থেকেই তো ১৯১১-র মোহনবাগানের শিল্ড জয় নিয়ে ছবির পরিকল্পনা করছি। চিত্রনাট্য এখনও মনের মতো হচ্ছে না।
প্র: উধম সিংহকে নিয়ে ছবি করছেন?
উ: হ্যাঁ প্রস্তুতি চলছে। পিরিয়ড ফিল্ম তো... একটু সময় লাগবে।
প্র: রণবীর কপূর মুখ্য চরিত্র করছেন?
উ: রণবীরের সঙ্গে আমার নিয়মিত দেখা হয়। আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলি। সেই জন্যই লোকে ভাবছে, আমি রণবীরকে কাস্ট করব। তবে কাস্ট এখনও চূড়ান্ত নয়।
প্র: উধম সিংহ করতে চেয়ে শাহরুখ খান নাকি আপনার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন?
উ: সে রকম কিছু না। শাহরুখের সঙ্গে অনেক প্রজেক্ট নিয়েই আমার কথা হয়। দু’জনে মিলে কিছু একটা ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই করব।