সুচিত্রা
তিনি পরিচালক শেখর কপূরের প্রাক্তন স্ত্রী। তিনি টিনএজার গায়িকা কবিতা কপূরের মা। তবে এই পরিচিতিগুলোর বাইরেও তিনি নিজগুণে স্বতন্ত্র। তিনি অভিনেত্রী, গায়িকা, লেখিকা, চিত্রশিল্পী। বহুমুখী এই প্রতিভার নাম সুচিত্রা কৃষ্ণমূর্তি। নিজের লেখা একাঙ্ক নাটক ‘ড্রামা কুইন’ মঞ্চস্থ করতে সম্প্রতি শহরে এসেছিলেন অভিনেত্রী।
কলকাতায় কি প্রথম বার পারফর্ম করছেন? ‘‘না, গত মাসেই বিড়লা সভাঘরে পারফর্ম করেছি। এটা দ্বিতীয় বার,’’ বললেন সুচিত্রা। ‘ড্রামা কুইন’ লেখার পিছনের ভাবনাটা কী? ‘‘একটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছিল, যারা আমার ব্লগগুলোর একটা সংকলন বার করতে চাইছিল। তখন থেকেই ‘ড্রামা কুইন’ বইটি নিয়ে ভাবনাচিন্তার শুরু। তবে প্রথমে ভেবেছিলাম ব্লগের সঙ্গে সংযোগকারী কয়েকটি পিস লিখব। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখি, সেটা নিজস্ব রূপ পেয়ে গিয়েছে। তখনই লেখার ধরনটা একটু বদলায়। ২০১৩ সালে বইটি প্রকাশ পায়। আর তার ভিত্তিতেই লেখা একাঙ্ক নাটকটি গত বছর প্রথম মঞ্চস্থ করি,’’ নস্ট্যালজিয়ার ছোঁয়া শিল্পীর কণ্ঠে। যে মহিলাকে ‘ড্রামা কুইন’ উপাধি দেওয়া হয়, সমাজ কিন্তু তার কৃতিত্বকে খাটো করে দেখে। এর উত্তরে সুচিত্রা বলেন, ‘‘ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষণ। তবে এই নামটা আমার প্রকাশক বলেছিলেন। বইটার আগে নাম ছিল ‘ইররেসিস্টেবলি সিঙ্গল’। আসলে লেখার স্টাইলটা অতিরঞ্জিত, ওভার দ্য টপ। তাই এই নাম। আর সব মেয়ের মধ্যেই কম-বেশি ড্রামা কুইন আছে। তাই নামটা খুব ভুল নয়,’’ হাসতে হাসতে বললেন সুচিত্রা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘ড্রামা কুইন’-এর মূল সুর কিন্তু সুচিত্রার ব্যক্তিজীবন থেকে অনুপ্রাণিত।
স্পষ্টবক্তা হিসেবে সুচিত্রার নাম আছে। সোনু নিগমের পাশাপাশি আজান-বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘টুইটের জন্য প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছি। কিন্তু তা বলে চুপ থাকলে হবে না। যে সমাজে বাস করছি তার জন্য, আশপাশের মানুষের জন্য কথা বলতেই হবে। এ ক্ষেত্রে হয়তো আমি সেই কাজটাই করেছি। আর আমার প্রতিবাদ শুধু টুইটে সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তবেও কাজ হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরে আজানের সময়ে লাউডস্পিকারের শব্দসীমা বৈধ ডেসিবেলের মধ্যে আনা হয়েছে।’’
অভিনেত্রীদের উপর যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে সরব হয়েছে হলিউড থেকে টলিউড। ‘মি টু’ ক্যাম্পেন প্রসঙ্গে সুচিত্রার কী মতামত? ‘‘অনেক বছর আগেই আমি এই বিষয়ে কথা বলেছিলাম। মহিলাদের প্রতি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়া উচিত। কিন্তু ক্যাম্পেনটা একটা নিমিত্তমাত্র। এতে যদি আসল উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হয়, তবে তা দুঃখের বিষয়।’’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘ভয়ে তো আমরা কিছু বলতে চাই না। তবে কথা বললে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। মহিলারা যে নির্ভয়ে বলছেন, এটাও গুরুত্বপূর্ণ।’’
শেখর-সুচিত্রার মেয়ে কবিতা ইতিমধ্যেই গায়িকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সুচিত্রা নিজেও গায়িকা। মেয়েকে কী উপদেশ দিয়েছেন? ‘‘চাপের মুখে যেন ভেঙে না পড়ে। শুধু গানের উপরই যেন ফোকাস থাকে।’’ মা হিসেবে কি কড়া আপনি? ‘‘এটা বেশ কঠিন প্রশ্ন। আমি তো নিজেকে ‘সুপারকুল’, ‘ফান মাদার’ বলব। কবিতাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো অন্য উত্তর পাবেন,’’ হাসির দমক তাঁর গলায়। ‘‘তবে আমি অনেক অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়েছি। কবিতার ক্ষেত্রে আমি অত কড়া নই। ও মাঝে মাঝে বলে কোনও বিষয়ে ‘না’ বলতে, কারণ ওর বাকি বন্ধুর মায়েরা তাতে ‘না’ বলেছে। আমি হয়তো সেটাতে ‘না’ বলব না। আর সব মায়েরাই তো নিজেদের সেরাটুকু সন্তানকে দিতে চান,’’ বললেন সুচিত্রা।
নব্বইয়ের দশকে যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছে সুচিত্রা শাহরুখ খানের নায়িকা ‘অ্যানা’ (‘কভি হাঁ কভি না’)। রামগোপাল বর্মা পরিচালিত ‘রণ’ ছবিতে তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল। গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে কি আপনি ‘মিসফিট’ ছিলেন? ‘‘আমি কোনও দিন স্টারডমের পিছনে ছুটিনি। সৃষ্টিশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজের পূর্ণতা খুঁজেছি। প্রাতর্ভ্রমণে বেরোলে যদি চারদিক থেকে মানুষ আমাকে ঘিরে ধরত, তবে আমার দমবন্ধ মনে হত। সেটা কোনও দিন আমার লক্ষ্য ছিল না,’’ সুস্পষ্ট জবাব নায়িকার।
নিজের শর্তে বাঁচেন সুচিত্রা। সিঙ্গল মাদার, তাই চলার পথটা খুব একটা সহজ ছিল না। কখনও নিজেকে অসহায় মনে হয়েছে? ‘‘সত্যি অনেক সময়ই ভালনারেবল মনে হয়। নিজের খামতিগুলোকে গ্রহণ করা, অন্যের ভাবনার উপর নিজেকে নির্ভরশীল না করে ফেলা, এগুলোই আমার কাছে ক্ষমতায়নের পথ। তবে সত্যি কথা বলতে কী, সব সময়ে তেমনটা ভাবতে পারি না,’’ ড্রামা কুইনের কণ্ঠস্বরে ধরা দিল আক্ষেপের সুর।