Golper Parban 1432

৩০ বছরের সফরে শ্রীকান্ত-সোনি, প্রচারের আলোয় সৃজিত, তাঁর ‘কিলবিল’ নায়িকা কৌশানী

“এই যে আমার বৌ”! দর্শকাসনে বসে পিয়া চক্রবর্তী। মঞ্চ থেকে আরও একবার সকলের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ১৩:২১
Share:

‘গল্প পার্বণী ১৪৩২’-এ তারকাদের হাট। নিজস্ব চিত্র।

আমন্ত্রণলিপিতে তিনটি রং নির্দিষ্ট— লাল, সাদা, কালো। পোশাকেও যেন সাবেকিয়ানা থাকে, অনুরোধ ছিল তেমনটাই। সেই অনুরোধ রেখেছিলেন আমন্ত্রিত প্রত্যেকে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার বিলাসবহুল হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে উপরোক্ত তিন রঙের ঢেউ। ষোল আনা না হোক, অনেক দিন পরে বারো আনা বাঙালিয়ানার ছটায় উদ্ভাসিত ‘গল্পের পার্বণ ১৪৩২’। আয়োজনে প্রযোজনা সংস্থা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্ম।

Advertisement

অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, উজান গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

সাল ২০২৬-কে নজরে রেখে একগুচ্ছ ছবি আর সিরিজ়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। তারকাদের জমায়েত তো হবেই! সন্ধ্যা নামতেই রুপোলি পর্দার তারকারা লাল গালিচায় হাজির। তাঁদের সঙ্গে খুনসুটি, মজার প্রশ্নে মেতে সঞ্চালক সোমক ঘোষ, জ়িনিয়া। ঘড়ির কাঁটা রাত পৌনে ৮টা। মঞ্চের দখল নিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। দুধসাদা পাঞ্জাবি, চোস্তের উপরে সিক্যুইনের হাঁটুছোঁয়া জ্যাকেট। সে সব ছাপিয়ে নজর কেড়েছে ভারতীয় বিজ্ঞানী সিভি রমনের মতো গেরুয়া টুপি! পরমব্রত আপাতত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘কিলবিল সোসাইটি’ ছবির মুখ্য অভিনেতা। ‘হেমলক সোসাইটি’র ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির এই পর্বে তাঁকে চুলের বিশেষ ছাঁট দিতে হয়েছে। সে কারণেই মাথা ঢাকতে হয়েছে, মঞ্চে এসেই অকপট ঘোষণা তাঁর। নেপথ্যে পর্দা জুড়ে এসভিএফ প্রযোজিত নানা ছবির দৃশ্যের কোলাজ। কখনও সেই কোলাজ বদলে যাচ্ছে হইচই-এর নানা সিরিজ়ের টুকরো মুহূর্তের দৃশ্যে।

গৌরব চক্রবর্তী, ঋদ্ধিমা ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

অনুষ্ঠানের নান্দীমুখ যদি পরমব্রতের মাধ্যমে হয় তা হলে গৌরচন্দ্রিকার দায়িত্ব বর্তেছিল শ্রীকান্ত মোহতা আর মহেন্দ্র সোনির কাঁধে। ৩০ বছর ধরে বাংলায় রাজপাট তাঁদের। তার জমাখরচের হিসাব দেওয়া কি সহজ কথা? তাই প্রযোজনার সংস্থার দুই কর্ণধার পালা করে মেলে ধরেছেন কর্মকাণ্ড। সকলের ‘মণিদা’ বলে খ্যাত প্রযোজক কথা বলেছেন হিন্দি-ইংরেজিতে, শ্রীকান্ত ঝকঝকে বাংলায়। তাঁর দাবি, “বাংলায় কাজ করতে এসেছি। পোশাকের পাশাপাশি ভাষাতেও তার ছোঁয়া থাকা উচিত।” উপস্থিত প্রত্যেকে চমৎকৃত। হলঘর ফেটে পড়েছে স্বতঃস্ফূর্ত হাততালিতে। একটি বিষয়ে তাঁর দু’জনেই এক মত, উৎসবের রং কালো। তাঁদের পোশাকে তাই সেই রঙের বাহুল্য।

Advertisement

পোশাকে কালো রঙের দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, নন্দিতা রায়, সৃজিত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তা হলে কি সাদা ম্লান তার কাছে? একেবারেই না। স্বয়ং ‘ইন্ডাস্ট্রি’ নিজেকে সাজিয়েছিলেন সাদা পোশাকে। এ দিন প্রচারের অনেকটা আলো শুষেছিলেন পাশে বসা ছেলে তৃষাণজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ের ব্যাটন কি বাবার হাত থেকে এ বার ছেলের হাতে যেতে চলেছে? জানা যায়নি। তবে এ দিন তিনি কালো পোশাকে সুপুরুষ।

রানা সরকার, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

৩০ বছরের স্মৃতি ৩০ মিনিটে তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। তবু বলতে বলতে ‘মণিদা’ ফিরে গিয়েছেন সেই সময়ে যখন কোনও অবাঙালি প্রযোজনা সংস্থা বাংলা ছবিতে চট করে বিনিয়োগ করতে চাইত না। মোহতা এবং সোনি পরিবার সেই ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বাংলা ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি বাংলা গানের চ্যানেল, প্রথম বাংলা ওয়েব প্ল্যাটফর্ম, প্রেক্ষাগৃহ হয়ে গত বছর থেকে তাঁরা হইচই টিভি-ও এনেছেন। এই কথার সূত্র ধরেই জুটিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন অপর্ণা সেন। পরমব্রতর সাম্প্রতিকতম ছবি ‘এই রাত তোমার আমার’ ছবির নায়িকা। অপর্ণা আজীবন রঙিন। এ দিন তাঁর স্বামী কল্যাণ রায় সাদা পোশাকে সাজলেও পরিচালক-অভিনেত্রী আকর্ষণীয় লাল পাড় হলুদ জমিনের ইক্কত সিল্কে। খোলা চুলে হলুদ গোলাপ, মানানসই গয়না আর চোখ ঢাকা বড় মাপের রোদচশমায়। মঞ্চে উঠে তাঁর দাবি, “আমার মতো তথাকথিত সমান্তরাল ছবির পরিচালককেও এসভিএফ সাদরে ডেকে নিয়েছেন কাজ করার জন্য। যাতে বাণিজ্যসফল ছবির পাশাপাশি তাঁদের ঝুলিতে ভাল ছবিও থাকে। আমি কৃতজ্ঞ ওঁদের কাছে। আগামী দিনে আবারও ছবি করলে সকলের আগে শ্রীকান্ত-মহেন্দ্রর সঙ্গেই হাত মেলাব।” পাশে দাঁড়িয়ে বর্ষীয়ান পরিচালক-অভিনেত্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, “ওঁরা না থাকলে আমার ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর সঙ্গে ‘অটোগ্রাফ’-এর মতো ছবি হত না।”

জ়িনিয়া সেন, মহেন্দ্র সোনি, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যেই তারকা এবং সাংবাদিকদের আমন্ত্রণরক্ষার জন্য ধন্যবাদ জানালেন সঞ্চালক পরমব্রত। হঠাৎ খুনসুটি, “দর্শকাসনে পিয়া চক্রবর্তীকে দেখতে পাচ্ছি। আমার বৌ পিয়া...।” একটু দূরের টেবিলে বসে অনুপম রায়। সঞ্চালকের বলার ধরনে হেসে ফেলেছেন সাদা পোশাকে ‘রাজহংসী যথা’ শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। অনেক বছর পরে শুভশ্রী আবারও তাঁর পুরনো প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজে চুক্তিবদ্ধ। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরলে যা হয়! একমুঠো কাজ তাঁর ঝুলিতে। শুভশ্রীর হাসি ছড়িয়ে পড়েছে লাল-কালো মিলমিশে বানানো সিল্কের শাড়ি পরে আসা সোহিনী সরকারের মুখেও।

ঘোষণা পর্ব মিটতেই ছুটি ছুটি মেজাজ। পানীয়ের গ্লাস হাতে হাতে ফিরেছে কমবেশি সকলের। হঠাৎ ডিজে-র সৌজন্যে হল জুড়ে জনপ্রিয় হিন্দি এবং বাংলা গানের সুর। খোশমেজাজে গানের তালে পা মেলাচ্ছেন প্রায় সকলেই। উপস্থিত সাংবাদিকেরাও এ দিন পেশা ভুলে তারকাদের ‘বন্ধু’! তবে এ দিন সৃজিত-কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের রসায়ন সকলের নজর কেড়েছে। পদবিতে মিল। কৌশানী এখন সৃজিতের মনোযোগী ছাত্রী। লাল সিক্যুইনের পোশাকে সৃজিতের পাশে দাঁড়িয়ে জৌলুস ছড়িয়েছেন মঞ্চে, মঞ্চ থেকে নামার পরেও!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement