Sushant Singh Rajput

সুশান্তের মৃত্যু আর বলিউডের ভিতরটা আমি যা জানি

দীর্ঘ দিন বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে আমি জানি, এখানে পক্ষপাতিত্ব আছে। তার মানে এটাও নয়, সবাই এই দলে। তা হলে বলিউডের প্রতি অবিবেচনা করা হবে।

Advertisement

বাবুল সুপ্রিয়

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ১১:৩৭
Share:

সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে কলম ধরলেন বাবুল সুপ্রিয়। ফাইল চিত্র।

আমি একটা লাইন খুব মজা করে বলতাম। হিন্দিতে সেই লাইন ছিল, ‘এক সময়ই হ্যায় যো ওয়াক্ত কে সাথ বদলতা হ্যায়’। কী হাস্যকর না! সময় আর 'ওয়াক্ত' কি আলাদা? তবু লোকে বলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে 'ওয়াক্ত' আসবে। নতুন কেউ মুম্বই গেলে লোকে বলবেই এটা। কিন্তু ২২ বছরের সেই ছেলেটা, সুপ্রিয় বড়াল তাঁর জীবন দিয়ে দেখেছে, এই সময় আসবে 'ওয়াক্ত' হলে এটা ফেক কথা। ভুল!

Advertisement

আমার বাড়িতে সব সময় সাদা একটা বোর্ড ছিল, যেটা এখন আমার বড় মেয়ে মুম্বইতে নিয়ে গিয়ে রেখেছে। ওই বোর্ডের মাথার ওপরেই লেখা আছে, ‘ইউ হ্যাভ টু বি ইয়োর ওন গডফাদার’। কেন গডফাদার থাকতে হবে সকলের? আমি মনে করি না। আমার কে ছিল?

বলিউডের জগত ফিল্মের চিত্রনাট্য। তাতে চিত্রনাট্যকারের ভূমিকা থাকে। তারা তাদের ক্ষমতা, মেধা সব কিছুর ওপর নির্ভর করে চিত্রনাট্য লেখে। সেই চিত্রনাট্যের ভিত্তিতে তারা অভিনেতাদের চরিত্র দেয়। পুরোটা ভাগ্য নয়। আমি বলতে চাইছি, সুযোগের সঙ্গে প্রস্তুতির যখন দেখা হয়, তখন ভাগ্য তৈরি হয়। শিল্পীকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে কখন তার কাছে সুযোগ এসে পড়ে। সুশান্তের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি পুরো মাত্রায় ছিল। কিন্তু সুযোগটা ‘আনফেয়ারলি’ সুশান্তের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেউ এই বিষয়কে বলতেই পারে, যা করা হয়েছে তা প্রফেশনের কথা মাথায় রেখে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু বলার নেই।

Advertisement

সবাই এখন জ্ঞানী, সবাই সব কিছুর সমঝদার। তাই সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এত বাগযুদ্ধ। এই সূত্রেই খুঁজে পেতে কিছু লোককে বেছে কাদা ছেটানো চলছে। কৃতী শ্যাননের কালকের পর পর পাঁচটি টুইট দেখে আর চুপ থাকতে পারলাম না। মনে হল এ বার কিছু বলা উচিত।

টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম, শেখর কপূরও। সঞ্জয়জির কাছে প্রথমে অনুরোধ, মহারাষ্ট্রে এখন ত্রিশক্তি জোট সরকার চলছে। কংগ্রেস সেখানে ক্ষমতাসীন দল। তাই আপনি দয়া করে দুটো কাজ করবেন? এক, সবার আগে কুৎসা বন্ধ করুন। দুই, ভাল করে তদন্ত করান প্রশাসনকে দিয়ে। সুশান্তের মৃত্যুর আসল কারণ জানার চেষ্টা করুন।

সুশান্তের মৃত্যুর পরেও বলব, বলিউডের সব খারাপ নয়। সবাই খারাপ নন। ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ দিন বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে আমি জানি, এখানে পক্ষপাতিত্ব আছে। তার মানে এটাও নয়, সবাই এই দলে। তা হলে বলিউডের প্রতি অবিবেচনা করা হবে।

বলিউডে যদি তারকা সন্তানেরাই শুধু সুযোগ পেতেন, তা হলে বলিউডের বাইরে থেকে আসা বহু নতুন মুখ পর্দায় দেখা যেত না। তাই সুশান্তের মৃত্যুর পরেও বলব, বলিউডের সব খারাপ নয়। সবাই খারাপ নন।

সাল ১৯৯২। গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ধরে দাদারে পা রেখেছিল ২২ বছরের যে যুবক, সে মুম্বইয়ের কেউ নয়। সে বাংলার বাবুল বড়াল। তার পরেও সেই যুবককে, আজকের এই বাবুল সুপ্রিয়কে প্রযোজকেরা সুযোগ দিয়েছিলেন। অডিশনে পাশ করার পর আমি গান গেয়েছি। বাইরে থেকে আসা এই আমি ব্যাঙ্ক থেকে লোন পেয়েছি বাড়ির জন্য। এবং সে সময় আমার গ্যারেন্টার হয়ে ব্যাঙ্কের লোন পেপারে সই করেছিলেন আরেক গায়ক দাদা অভিজিৎ।

আরও পড়ুন: তদন্তে নয়া মোড়? সাত ঘণ্টা পর থানা থেকে বের হলেন রিয়া

সোশ্যাল মাধ্যমও এখন মজার উপকরণে ভরা। যার যা মনে এল গলগলিয়ে উগরে দিল। খুব আলোচনা চলছে সুশান্তের মতো পটনার মধ্যবিত্ত জীবন থেকে উঠে আসা মানুষ চার লাখের বেশি টাকা মাসে বাড়ি ভাড়ার পেছনে কেন খরচ করবে? আরে! অদ্ভুত ব্যাপার। এক জন প্রকৃত স্টারের মুম্বইতে চকচকে জীবযাপন করতে কত টাকা লাগে? সে তো খুব দামি জামা পরে রোজ রাস্তায় হাঁটে না। হ্যাঁ, পার্টিতে গেলে পরে। আমি শুনেছি সুশান্ত আর রিয়া বাড়ি খুঁজছিল। এর মাঝে ও মুম্বইতে ওই টাকায় ভাড়া দিয়ে থাকতেই পারে। আমি প্রথম দিকে লোখান্ডওয়ালাতে তো বাড়ি ভাড়া নিয়েই থাকতাম। তখন ৪২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ছিল। বাড়িতে কত রকম মিটিং হয়। বাড়িতে সুশান্তের হয়তো জিম আছে। আরে বিরাট কোহালিও তো মুম্বইতে ১১ লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকে। মানুষের জীবন যাপনে কত অর্থই বা লাগে? তার বাইরে যে যা করছে তার পুরোটাই তো বাহুল্য। এখন সে সেই টাকা নিয়ে পার্টি করবে, বিদেশ যাবে, গাড়ি কিনবে, বাড়ি বানাবে... সেটা তার ব্যাপার। সুশান্তের আর্থিক সমস্যা হয়েছিল বলেও তো শুনিনি। লোকে ১ লক্ষ ১০ হাজারের ঘড়ি কেন পরে? আমার বাবা আজীবন টাইটানের ঘড়ি পরে চালিয়ে দিল, বাবার সময় তো ভালই যাচ্ছে! মেয়ে আমেরিকায়। ছেলেকে মোটামুটি কাজের জন্য সকলে চেনে।

তাই কাউকে দাগিয়ে দেওয়ার আগে একটু ভাবুন। যাকে বলল, তার কোথায় গিয়ে লাগল দেখলই না! প্রয়াত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাই এক বার মোক্ষম কথা বলেছিলেন, “সামলাতে পারলে সামলাও, না পারলে এড়িয়ে চল।”

তাই নিন্দুক বলবেই। কী ভাবে সামলাবেন সেটা নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে।

আপনি যদি নিজের গান, ছবির কাজ লক্ষ লোকের কাছে পৌঁছোনোর জন্য সোশ্যাল মাধ্যমকে হাতিয়ার করেন, তা হলে তার আগে এটাও মনে রাখবেন, এই মাধ্যমই কিন্তু আপনার কাজ নিয়ে মূর্খের মতো সমালোচনায় মুখর হবে।

আরও পড়ুন: সুশান্তের মৃত্যুর পরে বিতর্কিত মন্তব্যে চাপে তারকারা

আসল ঘটনা, এক জন পরিচালক বা প্রযোজকের কাছে এক লক্ষ স্বপ্নসন্ধানীর ভিড়। তিনি কাকে ছেড়ে কাকে সুযোগ দেবেন! আবার প্রতিভা যেমন ‘বিরল’ তেমনই তাকে আবিষ্কার করার জহুরির চোখ বিরলতম। তাই নিজেকে প্রমাণ করে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকবেন কে, সেটা একমাত্র ঠিক করতে পারেন সেই মানুষটিই। তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারলে রয়ে গেলেন। না পারলেই...

বাকিদের মতো আমিও সুশান্তের মৃত্যুতে প্রচণ্ড নাড়া খেয়েছি। কারণ, শিল্পী মাত্রেই তিনি মারাত্মক সংবেদনশীল, অনুভূতিপ্রবণ। ঘটনাচক্রে মনে পড়েছে এক অভিনেত্রীর নাম, যিনি বলেছিলেন স্বপ্নের অপমৃত্যু দেখতে পারবেন না। তাই তাঁর ফুরিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

সুশান্তকে আমরা ব্যক্তিগত ভাবে কেউই চিনি না। তাই তাঁর মৃত্যু নিয়ে কাটাছেঁড়া বন্ধ করে বরং প্রিয় মানুষ বা কাছের বন্ধুর দিকে নজর দিন। তিনিও আরেক জন সুশান্ত সিংহ রাজপুত হওয়ার পথে হাঁটছেন না তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন