থ্রিলারে ম্লান হয়ে গেল রোম্যান্স

পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া শেষ ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’র চেয়ে এ ছবির রং-রূপ অনেকটাই আলাদা। যোগসূত্র বলতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শেষ কয়েকটি ছবিতে তিনি নিজেকে যে ভাবে ভাঙছেন ও গড়ছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:১২
Share:

রবিবার লুকে প্রসেনজিৎ-জয়া

Advertisement

রবিবার

পরিচালনা: অতনু ঘোষ

Advertisement

অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জয়া আহসান

৫.৫/১০

বাংলা ছবির সাম্প্রতিক পরিচালকরা তাঁদের ট্রেডমার্ক বজায় রাখতেই স্বচ্ছন্দ। সে দিক থেকে অতনু ঘোষের ‘রবিবার’ এক্সপেরিমেন্টাল। এ ছবি প্রে‌মের নয়, প্রেম ভাঙারও নয়। বরং এ গল্প দুই প্রাক্তনের চোর-পুলিশ খেলার। দুই পোড় খাওয়া মানুষের একে অপরের মনের তল খুঁজে পাওয়ার। এবং তাদের জার্নির মধ্য দিয়ে দর্শকও ছুঁতে চাইছেন সেই ধূসর অতলকে।

ছবির মুখ্য দুই চরিত্র অসীমাভ (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) এবং সায়নীর (জয়া আহসান) পনেরো বছর পরে দেখা এক রবিবারের সকালে। অসীমাভ নামটি ছবি শেষের মিনিট পনেরো আগে দর্শক জানতে পারেন। এর পিছনে পরিচালকের উদ্দেশ্য ঠিক স্পষ্ট নয়। অস্পষ্টতা এই ছবির একটি চরিত্রও বটে। সায়নী ও অসীমাভর চরিত্রায়নে তা ফুটে ফুটে উঠেছে। কিন্তু চিত্রনাট্যের অস্পষ্টতা এই জার্নিতে বাধাও সৃষ্টি করেছে। কয়েক সেকেন্ডের দৃশ্যকে দীর্ঘায়িত করেছে।

এই ধরনের ছবিতে সংলাপ বেঁধে রাখে দুই মুখ্য চরিত্রকে। সেখানেও খামতি চোখে পড়েছে। তবে ন্যারেটিভে উইট রয়েছে। ক্লাইম্যাক্সে চমকও রয়েছে। কোনও রকমের ফ্ল্যাশব্যাক না দেখিয়ে ছবি নির্মাণেও স্মার্টনেস দেখিয়েছেন পরিচালক। অতনুর ছবিতে কাহিনি কখনও মুখ্য হয় না। জার্নির মধ্য দিয়ে আবেগের রূপকথা বোনেন তিনি। কিন্তু এ ছবির কোনও দৃশ্যেই আবেগ সেই উচ্চতায় পৌঁছয় না। দেবজ্যোতি মিশ্রের আবহ সঙ্গীতে যে মূর্ছনা তৈরি করা হয়েছে, তা দৃশ্যে রূপান্তরিত হয় না।

পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া শেষ ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’র চেয়ে এ ছবির রং-রূপ অনেকটাই আলাদা। যোগসূত্র বলতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শেষ কয়েকটি ছবিতে তিনি নিজেকে যে ভাবে ভাঙছেন ও গড়ছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। দুরন্ত অভিনেত্রী জয়া আহসানের পাশে প্রসেনজিৎ নজর কেড়েছেন বেশি। জয়া তাঁর চরিত্রে সুন্দর, সাবলীল। প্রথম বার তাঁদের পর্দায় একসঙ্গে দেখতে ভালই লেগেছে। তবে ছবির পার্শ্বচরিত্রদের অনেকেরই অভিনয়ে জড়তা।

দু’টি সাবপ্লটে যাঁদের দেখানো হয়েছে, তাঁদের জন্য এতটা স্ক্রিন টাইম দেওয়ার কী যৌক্তিকতা, তা-ও ছবিতে স্পষ্ট নয়। একজন সুপারি কিলারের নাম শুনে অন্য চরিত্রের যতটা বিস্ময়, সায়নী ও অসীমাভর প্রথম দেখাতেও ততটা বিস্ময় ছিল না। ছোট চরিত্রে ‘সোনার পাহাড়’খ্যাত শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ঝকঝকে, ফুরফুরে। তবে তার চরিত্রের নাম দেখানোরও প্রয়োজন মনে হয়নি চিত্রনাট্যে। তার পরিণতিও বোধগম্য হল না।

এক্সপেরিমেন্ট হোক। ছবির ভাষাবদলে তা জরুরি। কিন্তু এই ছবির থ্রিলারে পথ হারিয়েছে রোম্যান্স, ক্যামেরার হলুদ আলোয় ম্লান হয়ে গিয়েছে আবেগের সেতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন