কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা সমাজের অন্যতম অসুখ। বিষয়টিকে পাত্তা দেন না বা চুপচাপ ঝামেলা এড়িয়ে গা বাঁচান যাঁরা, তাঁরাই সমস্যাটিতে আচ্ছা করে ‘তা’ দেন। এঁদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, মেয়েদেরই দোষ। তাঁরা কিন্তু খানিক ঠিক। কিছু মেয়ের সত্যিই দোষ থাকে। পরিস্থিতির চাপে বা লোভে পড়ে তারা শোষিত হতে যায় বলেই কলিযুগের দুঃশাসনদের দুঃসাহস বাড়ে। আবার অনেক মেয়েই (বা ছেলে) অসম্মান মানতে না পেরে জলপ্রপাতে ঝাঁপ দেয়। নিজে না মরলে, তাদের খাদে ছুড়ে দেওয়া হয়। ভাবা হয়, ‘শি ইজ গন’। বিধাতার মায়ায়, এদের চোখের জলই একদিন সুনামি হয়ে ফেরে। সব পাপ গ্রাস করে নেয়। তাকেই বলে নিয়তি। কিংবা অতীত। বা ভূত। অথবা মহাকাল। যে ঘড়ির মধ্যে টিকটিক এগোয়। এই ছবিতে সে-ই পুরনো দোলনায় দুলছে।
সিনেমার মধ্যে সিনেমা, হরর-এর মধ্যে থ্রিলার, সংলাপের ভিতর বার্তা, জীবনের মধ্যে মৃত্যুকে পুরে বাংলা ছবি তৈরির নতুন ‘রুট’-এ চলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক রাজীব চৌধুরী। বিদেশি থ্রিলার প্রসঙ্গ, ছবি-করিয়ের খুঁতখুঁতানি, অবসাদ থেকে উঠে আসা রোম্যান্টিসিজম ব্যবহার করেছেন। ফলে ছবিটি পাকামিতে ঠাসা মনে হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তের বিশ্ব-সিনেমার ক্লাসটিতে বাংলা ছবি যে বেঞ্চে বসে নোট লিখছে, তাতে তার অনেকগুলো নতুন ধরনের পিরিয়ডের প্রয়োজন।
কায়া— দ্য মিস্ট্রি আনফোল্ডস
পরিচালনা: রাজীব চৌধুরী
অভিনয়: রাইমা, প্রিয়ঙ্কা,
কৌশিক, শান্তিলাল
৪.৫/১০
নব্বই দশকসুলভ সুরের তালে টাইটেল কার্ডের অদ্ভুতুড়ে ব্যবহার চমকদার। কৌশিক সেন বরাবরই ধূসর-চরিত্র ফোটাতে পারেন। স্নায়ুর চাপে পায়ের আঙুল থরথরানো, টলমলে অস্তিত্বের পিছু হাঁটায় তাঁর স্বকীয়তার স্বাক্ষর। ‘আমি কেন ভাগ পাব না?’— মত্ত পদচারণায় মরীচিকার পিছু নিয়ে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ও তাক লাগালেন। স্ক্রিনপ্রেজেন্স রাইমার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। সেটি আরও ব্যবহারযোগ্য। মনে ধরল শিল্পিত শেষ দৃশ্য। সে কারণেই অতি-মন্থর ছবির অসংলগ্নতা, অনর্থক শরীর প্রদর্শন, পুরুষের পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির মতো একরাশ বিচ্যুতি উপেক্ষা করে ভালর দিকে তাকানোর প্রচেষ্টা।