OMG 2 Movie Review

শিবঠাকুরের আপন দেশে আইনকানুন কতটা সর্বনেশে? ‘ওএমজি ২’ দেখে জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

১১ বছর পর বড় পর্দায় দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে ফিরল ‘ওএমজি’ ছবিটি। অক্ষয় কুমারের সঙ্গে পঙ্কজ ত্রিপাঠির জুটি কি আদৌ মন কাড়ল?

Advertisement

শ্রুতি মিশ্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১৩:৩৮
Share:

‘ওএমজি ২’ ছবিতে বলি অভিনেতা অক্ষয় কুমার। ছবি: সংগৃহীত।

২০১২ সাল। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় এক দশক। এখন বলতে গেলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের যুগ। সিনেমা নিয়েও দর্শকের রুচিতে কম বদল আসেনি। এখন বড় পর্দায় ১১ বছরের পুরনো স্বাদ ফিরিয়ে আনতে চাইলে দর্শক তা চেটেপুটে খাবেন তো? তার উপর আবার অক্ষয় কুমারের ঝুলি একের পর এক ফ্লপ ছবিতে ভরে গিয়েছে। ‘ওএমজি ২’ ছবির প্রথম ঝলক মুক্তির পর দর্শকের মনে প্রশ্ন ছিল বিস্তর। ছবি মুক্তির আগেও শংসাপত্র নিয়ে সেন্সর বোর্ডে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ‘ইউ/এ’ শংসাপত্রের বদলে প্রাপ্তবয়স্কদের ছবির তকমা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল ‘ওএমজি’ ছবির দ্বিতীয় পর্ব। ১১ বছর পর পরিচালকের আসনে পরিবর্তন এসেছে। বদলে গিয়েছে তারকাদের মুখও। কিন্তু ‘শিবঠাকুরের আপন দেশে’র মতো ‘ওএমজি ২’ ছবিতেও কি ‘আইনকানুন সর্বনেশে’ হয়ে উঠল?

Advertisement

২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ওএমজি’ ছবির জোরদার চিত্রনাট্য যেমন দর্শকের মন কেড়েছিল, ঠিক তেমনই অক্ষয় কুমারের সঙ্গে পরেশ রাওয়ালের বন্ধুত্বের রসায়ন পর্দায় জমে ক্ষীর হয়েছিল। উমেশ শুক্ল পরিচালিত ছবিতে অক্ষয়কে দেখা গিয়েছিল কৃষ্ণের চরিত্রে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ভগবানের কর্ম হিসাবে দাগিয়ে হিন্দু দেবদেবীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছিল কাঞ্জি লালজি মেহতা (পরেশ)। কিন্তু ‘ওএমজি ২’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে এ বার ছিলেন অমিত রাই। অক্ষয়কেও কৃষ্ণের বদলে দেখা গেল শিবের ‘অনুচর’-এর চরিত্রে (শোনা গিয়েছিল, চরিত্রটি প্রথমে ছিল স্বয়ং মহাদেবের।

‘ওএমজি ২’ ছবিতে শিবের ‘অনুচর’-এর চরিত্রে অক্ষয় কুমার। ছবি: সংগৃহীত।

সেন্সর বোর্ডের চাপে ভগবানের দূত হিসাবে দেখানো হয়েছে)। চিত্রনাট্যে আপাদমস্তক পরিবর্তন। মুখ্য চরিত্রেও মুখ বদল। পরেশকে আর দেখা যায়নি দ্বিতীয় পর্বে। তার বদলে পঙ্কজ ত্রিপাঠি এবং ইয়ামি গৌতমের মতো বলিপাড়ার নামকরা তারকাদের ‘ওএমজি ২’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কমেডি ড্রামা ঘরানার এই ছবির শংসাপত্র পরিবর্তনের কি সত্যিই প্রয়োজন ছিল?

Advertisement

‘ওএমজি ২’ ছবিতে অক্ষয় কুমার এবং শিবভক্তের চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠি। ছবি: সংগৃহীত।

‘ওএমজি ২’ ছবির গল্প শুরু হয় কান্তিশরন মুদগালের (পঙ্কজ) ছেলের স্কুলজীবনকে ঘিরে। সহপাঠীদের কাছে মজার পাত্রে পরিণত হয় কান্তিশরনের ছেলে। যৌনাঙ্গের আকার-আকৃতি নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন জাগতে শুরু করে তার মনে। স্কুলে তার স্বমেহনের ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়তে সমাজের ভ্রুকুটির শিকার হয় কান্তিশরনের পরিবার। আর তার পরেই পর্দায় আবির্ভাব হয় শিবের অনুচরের। কমেডি ঘরানার ছবি ধীরে ধীরে কোর্টরুম ড্রামা ঘরানার দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। ‘ওএমজি’র প্রথম পর্বের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে এই ছবিতেও হিন্দুশাস্ত্রের কথা টেনে আনা হয়েছে। পুরাকালে ছাত্রাবস্থায় সকলকে যৌনশিক্ষা সম্পর্কিত পুঁথি পড়ানো হলে বর্তমানে তা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে কেন?

কান্তিশরন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তার ছেলেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু ছবির মূল কেন্দ্রবিন্দু তার ছেলে এবং পরিবারকে ছেড়ে স্কুলের পাঠ্যক্রমকে ঘিরে পাক কাটতে শুরু করে দেয়। দেশের সমস্ত স্কুলের পাঠ্যক্রমে যেন যৌনশিক্ষা বিষয়ে পড়ানো হয়, সে দাবি নিয়ে আদালতে লড়তে থাকে কান্তিশরন। আড়াই ঘণ্টা দীর্ঘ এই ছবির প্রথমার্ধের গতি বেশ শ্লথ। কাহিনির বুননে এত সময় খরচ হলেও কান্তিশরনের সঙ্গে তার ছেলের সম্পর্কের রসায়ন বা শিবের অনুচরের সঙ্গে শিবভক্ত কান্তিশরনের বন্ধুত্ব— কোনও কিছুই যেন ঠিক মতো ধরা পড়ে না। তাই আগের পর্বে অক্ষয়-পরেশের জুটিকে দর্শক ‘মিস্’ করতে বাধ্য।

‘ওএমজি ২’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির প্রথমার্ধে চিত্রনাট্য খানিকটা দুর্বল হলেও দ্বিতীয়ার্ধে ছবি যেন দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে। ছবির বেশির ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। বরাবরের মতো পঙ্কজের অভিনয় বেশ সাবলীল। পর্দায় কম জায়গা পেয়েছেন অক্ষয়। তবে কম সময়ের মধ্যেও কী ভাবে জমাতে হয়, তা এই ছবিতে প্রমাণ করলেন তিনি। মাথায় শিবের জটা, সারা শরীরে ছাই মাখা অবস্থায় অক্ষয় যে ভাবে নাচের দৃশ্যগুলিতে অভিনয় করেছেন তা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য বটে। অক্ষয় এবং পঙ্কজের মতো অভিনেতারা থাকলেও এই ছবিতে বলে বলে ছক্কা মেরেছেন ইয়ামি গৌতম। তাঁর অভিনয় এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে, শুধুমাত্র অভিনেত্রীর জন্যই এই ছবিটি দেখা যায়।

‘ওএমজি ২’ ছবিতে বলি অভিনেত্রী ইয়ামি গৌতম। ছবি: সংগৃহীত।

তবে ‘ওএমজি ২’ ছবিতে হাস্যরসের সঙ্গে গল্পের গুরুগম্ভীরতার মিশেলে ছন্দপতন হয়নি কোথাও। মজাদার সংলাপের অভাব নেই ছবিতে। পেটে খিল ধরানো না হলেও ঠোঁটে সে হাসির রেশ লেগে থাকবে বেশ কিছু ক্ষণ। শুক্রবার ‘ওএমজি ২’-এর পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘গদর ২’। বক্স অফিসে দুই ছবির ব্যবসা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘ওএমজি ২’-এ ‘গদর ২’ ছবির রেশ টেনে দর্শকের জন্য চমক উপহার দিয়েছেন অমিত।

‘গদর’ ছবিতে উদিত নারায়ণের কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘উড় যা কালে কাওয়া’ গানটি। ‘ওএমজি ২’ ছবিতে অক্ষয়ের মুখেও শোনা যায় এই গান। পরিচালক এই দৃশ্যের মাধ্যমে যে কোন দিকে ইঙ্গিত করলেন, তা স্পষ্ট। ‘ওএমজি’ ছবির দ্বিতীয় পর্বে ‘শিবঠাকুরের আপন দেশে, আইনকানুন সর্বনেশে’ ছিল তো বটেই। শিবের অনুচরের মাধ্যমে সেই সর্বনাশও দূর হল। কিন্তু দর্শকের মনে কোনও দৃশ্যই দাগ কাটল না। যৌনশিক্ষা আদতে পাঠ্যক্রমে রাখা প্রয়োজনীয়, তা প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন পরিচালক। ছবির শেষে তা প্রমাণও হল। সামাজিক বার্তা দিতে সফল হলেও ১১ বছর পর ‘ওহ মাই গড’-এর মতো ফুরফুরে মেজাজ ফেরাতে পারল না এই ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন