আড্ডার ফাঁকে অভিনেত্রী।— নিজস্ব চিত্র।
‘রংবেরঙের কড়ি’ এবং ‘ধারাস্নান’— পর পর দু’সপ্তাহে দু’টো ছবি রিলিজ। ফের আগের ফর্মে ফিরলেন তো…
ফর্মে আমি তো ছিলামই। ঠিক নিজের মতো করে কাজ করে গিয়েছি। রিসেন্টলি ‘ভালবাসার বাড়ি’ দারুণ করেছে। (হাসি…)
‘রংবেরঙের কড়ি’তে আপনি কোন রং?
‘রংবেরঙের কড়ি’তে দুটো চরিত্র প্লে করেছি। পরিচালক রঞ্জন ঘোষ আসলে একটা ছবিতে চারটে আলাদা গল্প বলেছেন। আমি দু’টোতে রয়েছি। একটায় প্রস্টিটিউট। সেখানে ঋত্বিক রয়েছে, ধী রয়েছে। আমার আর ঋত্বিকের মধ্যে একটা দারুণ কেমিস্ট্রি হবে। সেটা পরে দেখা যাবে। এখন বলব না। শীর্ষ রায়ের ক্যামেরা। খুব ইন্টারেস্টিং লো লাইটে শুট করেছে। ছবিটার মধ্যে অনেক রকম ফ্লেভার আছে। আর একটা মায়ের চরিত্র। ছেলের চরিত্র করেছে ঋতব্রত। ছেলেটির বাবা ঢাকি ছিল। সে কী ভাবে ঢাকের প্যাশানটা নিয়ে এগোয়... তার মা অসুস্থ ছিল, সেই অসুস্থতা কোথায় নিয়ে যায়, কী হয় তার পর, সেটা নিয়েই এগোবে গল্প।
আর ‘ধারাস্নান’?
হরনাথ চক্রবর্তীর ছবি। অসম্ভব ভাল গল্প। মিসম্যাচ কাপল। কী ভাবে মেয়েটা সারাজীবন যুদ্ধ করে একজন অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সেটা দেখবার মতো।
কিন্তু ‘রংবেরঙের কড়ি’তে চারটে গল্প, আপনি একা লিড নন। রাজি হলেন কেন?
ছবিটা একটা নতুন ফর্ম্যাটের কথা বলছে। একটা নতুন দিক সৃষ্টি করছে বাংলা সিনেমায়। আমার ধারণা এই সব দিকগুলো খুব ইন্টারেস্টিং। আমি সব সময় নতুনের মধ্যে থাকতে চাই। নতুন গল্প, নতুন আঙ্গিক বা নতুন ভাবে টেকনিক্যালি একটা ছবিকে এনহ্যান্স করা বা নতুন স্টোরি টেলিং, আমি এই জায়গাগুলো পছন্দ করি। এই ছবিটায় নতুন আঙ্গিকে গল্প বলা হবে।
আরও পড়ুন, পুরনো প্রেম থেকে কী শিখলেন ইমন?
আর লিড ক্যারেক্টার?
এখানে যে দু’টো কাজ করেছি আমিই তো লিড। দেখুন, অভিনয়টা আমার প্যাশন। যে কোনও ইন্টারেস্টিং চরিত্র, অবশ্যই প্রধান চরিত্র, সেটা পেলেই মনে হয় আমি চার্চড।
‘রংবেরঙের কড়ি’র একটি গল্পে ঋতুপর্ণা এবং ঋত্বিক। ছবি: রঞ্জন ঘোষের সৌজন্যে।
এখন ইন্ডাস্ট্রিতে সকলেই বিগ প্রোডাকশন হাউজের ছাতায় থাকতে চান। কিন্তু সেখানে আপনি ব্যতিক্রমী। এই লড়াইটা কি ওই নতুনদের সঙ্গে থাকার ইচ্ছে থেকেই?
আসলে এই লড়াইটা আমি অনেক দিন ধরে করছি। এটা এখন আমার কাছে আর লড়াই মনে হয় না। এটা আমার অভ্যেস। আমার জীবনের উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে, আমি লড়ে পেতে চাই। আমার কাছে জীবনটা খুব সহজলভ্য নয়। আমি কিছু কিছু প্রিন্সিপালে বিশ্বাস করি। আমার ভেতরকার গুডনেসকে কখনও নষ্ট হতে দিই না। কোনও কিছুর মূল্যেই নয়। আমার মধ্যে কিছু ইমোশনাল জায়গা আছে। সেটা নষ্ট করতে পারব না। ইমোশন থেকেই এই কাজের ভাবনা। আসলে সবটা যে আমি টাকা দিয়ে ক্যালকুলেট করি তা নয়। আই ক্যালকুলেট লট অফ থিঙ্গস উইথ ইমোশনস।
ইমোশনাল হলে কাজে এফেক্ট পড়ে না?
দেখুন, প্রথম থেকেই আমার কাছে কাজের জায়গাটা শুধু প্রফেশনাল নয়, ইমোশনালও। সে জন্যই বোধহয় এত বছর ধরে কাজটা করতে পেরেছি। আর এখন তো আমার কাছে অনেক নতুন পরিচালক আসেন। যাদের কাছে ভাল স্ক্রিপ্ট রয়েছে। প্রোডিউসার নেই। আমি যতটা সম্ভব তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করি। অথবা তাদের অন্য কোনও জায়গায় রেকমেন্ড করতে চেষ্টা করি, যাতে সেখান থেকে ভাল কিছু আমরা করতে পারি। আরও একটা জিনিস খুব ইমপর্ট্যান্ট জানেন…
আরও পড়ুন, ‘অপ্রিয় সত্যি বলে ফেললে প্রিয়পাত্রী হওয়া যায় না’
কী?
কনফিডেন্স। ট্যালেন্টের ওপর আমার কনফিডেন্সটা রাখতে হবে। না হলে হবে না। নিজের ব্যাপারে ইনসিকিওর্ড হলে হবে না। ইনসিকিওর্ড হলেই মানুষের ছোট ছোট প্রবলেমগুলো অ্যারাইজ করতে থাকে। ইনসিকিওরিটিটা বাদ দিতে হবে। নিজে কতটা ভাল পারফর্ম করতে পারি, সেটাতে ফোকাস করলে নাথিং লাইক ইট। আমার কাছে হাউজ বা লবি বা টিম এ সব দিয়ে কিছু এসে যায় না।
টলিউড পলিটিক্স তা হলে ঋতুপর্ণাকেও এফেক্ট করে?
পলিটিক্স প্রত্যেক মুহূর্তে আছে, প্রত্যেক দিন আছে। প্রত্যেকটা কাজের মধ্যে আছে। কিন্তু আমি কখনও আমার লাইফে পলিটিক্সকে আমল দিইনি। আমি পিওর কাজটাকে আমল দিয়েছি। পলিটিক্সের জন্য হয়তো কোথাও একটু পিছিয়েও গিয়েছি। আবার এগিয়ে যাওয়ার যে নতুন পথটা তৈরি করতে হবে, সেটা একটু একটু করে ঠুকে ঠুকে তৈরি করেছি। ওই পথ তৈরি করাটা আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট। কারা এসে সেটা ভাঙছে, সেটা ইম্পর্ট্যান্ট নয়। আমি আবার বানাব। আবার আমি সেতু তৈরি করব। আমার কাছে এটাই জার্নি।
আরও পড়ুন, বিয়ে করে কি কেরিয়ারে পিছিয়ে পড়লেন? মুখ খুললেন সমতা
২৩ মার্চই রিলিজ করছে রানি মুখোপাধ্যায়ের ‘হিচকী’। ‘রংবেরঙের কড়ি’র ব্যবসা মার খাবে না?
না, ব্যবসা মার খাবে না। রানিও এখন খুব ডিফারেন্ট কাইন্ড অফ স্টোরি পছন্দ করেছে। হিচকীও ভাল হবে বলেই মনে হয়। আমার ট্রেলারটাও ভাল লেগেছে। ‘রংবেরঙের কড়ি’ও তো বাংলা সিনেমার একটা নতুন গল্প বলছে। এখানে কোনও ক্ল্যাশ হবে বলে মনে হয় না। দুটো দুরকমের ছবি। একই অডিয়েন্স দুটোই দেখবে। আমি চাইব দুটোই ভাল হোক।
‘রংবেরঙের কড়ি’র অন্য একটি গল্পে ঋতুপর্ণা এবং ঋতব্রত। ছবি: রঞ্জন ঘোষের সৌজন্যে।
পয়লা বৈশাখে তো ‘দৃষ্টিকোণ’ আসছে। ফের প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণা জুটি…
(মুচকি হাসি) সঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কৌশিকদার সঙ্গে আমাদের প্রথম কাজ। তিনজনেরই একসঙ্গে প্রথম।
এত বছর পর প্রসেনজিতের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে কিছু মিস করেন?
অ্যাকচুয়ালি না। অভিনয়টা আমাদের মজ্জাগত। দুজনের কেমিস্ট্রিটাও মজ্জাগত। আমরা ওই ব্যাপারটার মধ্যেই আসি না। কতটা নিজেদের জায়গাটাকে উন্নত করব সেটার ওপরই আমাদের কনসেনট্রেশন থাকে।
আরও পড়ুন, দেবলীনা কি আপনার গার্লফ্রেন্ড? মুখ খুললেন গৌরব
অডিয়েন্সকে নতুন কী কী দেবে এই জুটি?
অনেক ম্যাচিওরিটি দেবে। গল্পটাই খুব ম্যাচিওর্ড। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতির জায়গাগুলো ধরে ধরে বলা আছে। দুজনের অভিনয়ের মাধুর্য অন্য লেভেলে নিয়ে গিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। সেটা হয়তো দর্শক বিচার করতে পারবেন।
এত সাফল্যের পর, ঋতুপর্ণা আজও প্রতিদিন নিজেকে কী চ্যালেঞ্জ দেন?
আমার কাছে প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ হল, আবার নতুন কী করব, এখনও মনে হয় ক্যামেরার সামনে আমি নতুন কী শিখব। ডিরেক্টরদের জিজ্ঞেস করি, আমার হচ্ছে তো? ঠিক করে বল, আমি আরও কিছু করতে চাই। ওই খিদেটা। ওই নতুন করে আবার দেখানোর বাসনাটাই চ্যালেঞ্জ। কারণ আমি পারফর্মার। পারফর্ম করতে করতেই চলে যেতে চাই।