মহাব্রত বসু। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
‘রেনবো জেলি’— ছবির এমন একটা নাম দিলেন কেন? অনেকেরই নাকি ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে…।
সৌকর্য: (হাসি) ঠিক এই কারণেই নামটা দেওয়া। জেলি তো বাচ্চাদের খুব প্রিয় খাবার। আমার ছবির চরিত্র পরীপিসি, মানে যেটা শ্রীলেখা মিত্র অভিনয় করেছেন— একটা ডিশ রান্না করবেন, যেটার নাম রেনবো জেলি।
আপনার ছবির মূল অভিনেতা মহাব্রত। স্পেশ্যাল চাইল্ড। ওকে খুঁজে পেলেন কী ভাবে?
সৌকর্য: মৌসুমিদি মানে মৌসুমি ভৌমিক এই ছবিটায় গান গেয়েছেন। আমি যখন ওঁকে গল্পটা বলছিলাম, স্পেশ্যাল চাইল্ডদের নিয়ে স্ক্রিপ্ট- উনি বলেছিলেন আমি একটা স্কুলে ওয়ার্কশপ করাতে যাই সেখানে একটা ছেলে আছে, দেখতে পারো। তার পর মহাব্রত আমার বা়ড়িতে আসে।
তখনই ওকে কাস্ট করার ডিসিশন নিয়েছিলেন?
সৌকর্য: না। ওকে দেখে, ওর সঙ্গে কথা বলে আমি খুব একটা কনভিন্সড হইনি। তার পর হঠাত্ই ও হেসে ওঠে। সেই হাসিটা আমার খুব ঝলমলে লেগেছিল। সেটা দেখেই ওকে নিয়ে ছবিটা করব ভেবেছিলাম।
আরও পড়ুন, ‘পুরস্কারের জন্য আমি কাউকে বোতল দিতে পারব না’
শুটিং শুরুর আগে ওয়ার্কশপ করেছিলেন?
সৌকর্য: অবশ্যই। তিন মাস ওয়ার্কশপ করেছিলাম আমরা। দিনে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা করে। খুব টাফ ছিল সেটা।
কেন?
সৌকর্য: আসলে মহাব্রতর অভিনয়ের কিছু সমস্যা ছিল। সেটা সলভ করতে হয়েছিল। ডিফিকাল্টিস জয় করার মধ্যেও তো একটা মজা আছে…। ওকে নিয়ে কাজ করাটা বেশ কঠিন ছিল। অনেক রকম মেথড আবিষ্কার করতে হয়েছিল।
কঠিন ছিল কেন বলছেন?
সৌকর্য: দেখুন, মহাব্রত এখন পাঠভবনের ছাত্র। ও আগে যে স্কুলে পড়ত সেখানে নাটক করেছে। আসলে স্কুলে বা পাড়ার নাটকের ওর একরকমের অভিজ্ঞতা ছিল। সেটার সঙ্গে তো সিনেমার কোনও মিল নেই। ওগুলো না করে এলে ও কিছুই জানত না। কিন্তু করার ফলে ওর মধ্যে যা ছিল সেগুলো ভাঙতে হয়েছে। অনেক কিছু আনলার্ন করাতে হয়েছে।
মহাব্রতর সঙ্গে পরিচালক। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
কী মেথড আবিষ্কার করেছিলেন?
সৌকর্য: ও বাবা! সে অনেক কিছু। যেমন ধরুন, ওকে বলেছিলাম অভিনয় নয়, আমার সঙ্গে যে ভাবে কথা বলছিস সেটাই ক্যামেরার সামনে বলতে হবে। ওর ক্যামারের ভয় তাড়াতে সময় লেগেছিল। তার পর ডায়লগ বলা…। অন্য কেউ ডায়লগ বললে রিঅ্যাক্ট করা শেখাতে হয়েছে। আমি ওর খাতায় সাতটা ইমোজি এঁকে দিয়েছিলাম। সেটা প্র্যাকটিস করিয়েছি। অন্য কেউ ডায়লগ বললে আমি চিত্কার করতাম, স্মাইলি ওয়ান, স্মাইলি থ্রি— সেটা শুনে ও রিঅ্যাক্ট করত। আমি তো বলব, শুটিংয়ের থেকেও ডাবিংয়ে আমরা বেশি চ্যালেঞ্জ ফেস করেছি।
কেন?
সৌকর্য: কারণ শুটিংয়ের অনেকদিন পরে আমরা ডাবিং করেছিলাম। তখন মহাব্রত প্রায় সবটাই ভুলে গিয়েছে। আর ডাবিংয়ে অভিনয়টা বাচিক, সেটা ও একেবারেই করতে পারছিল না। আমাদের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ডাবিংয়ে আমি কানে হেডফোন পরে মহাব্রতর পায়ের কাছে বসতাম। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আমাকে কমান্ড দিতেন। আমি ওর পায়ের কাছে বসে অ্যক্টিং করতাম। ও সেটা দেখে ডাবিং করেছে।
আরও পড়ুন, প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?
মহাব্রতর থেকে কী শিখলেন?
সৌকর্য: ওর জেদটা ভয়ঙ্কর। এটা পারছিস না বললে সেটা যতক্ষণ না পর্যন্ত পারছে করেই যাবে। আর মহাব্রতর সেন্স অফ সারেন্ডারটা মারাত্মক। আমার ওপর অদ্ভুত বিশ্বাস ছিল ওর। ওকে বমি করতে হবে বলেছিলাম। ও কিন্তু আসল বমিই করেছে। এতটাই বিশ্বাস…।
এখন নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে মহাব্রতকে ছাড়া ঘোঁতন (ছবিতে মহাব্রতর চরিত্রের নাম) হত না?
সৌকর্য: দেখুন, ছবির আগের মহাব্রত আর পরের মহাব্রতর মধ্যে বিস্তর ফারাক। ওকে ছাড়া ঘোঁতন হত কিনা জানি না। তবে ওকে ছাড়া ঘোঁতন হয়তো এরকম হত না।
কৌশিক সেন, শ্রীলেখা মিত্র, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়কে একেবারে আউট অফ বক্স চরিত্রে ভেবেছেন তো?
সৌকর্য: এরা প্রত্যেকেই অসাধারণ কাজ করেছেন। আর লুকের ভাবনাটা আমার স্ত্রী পূজার। ও এই ছবির কস্টিউম ডিজাইনার। গল্পটা দু’বছর আগের। ও তখন থেকেই জানে। দু’বছর ধরে গল্পটার সঙ্গে লিভ-ইন করেছে। আর আমার ভাললাগা গুলো ওর জানা। ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ দু’বছরের প্রসেস।
ছবির একটি দৃশ্যে শ্রীলেখা মিত্রের সঙ্গে মহাব্রত। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
ফুড ফ্যান্টাসি নিয়ে ছবি তৈরি করলেন, আপনি কি ফুডি?
সৌকর্য: সে জন্যই তো ছবিটা করলাম। খেতে ভালবাসি, খাওয়াতেও ভালবাসি। আমি রান্নাও করি নিয়মিত। দেখেছি, মন খারাপ হলে রান্না খারাপ হয়। আবার মন ভাল থাকলে অন্যরকম। মানে যেটা বলতে চাইছি, একই রান্না মনের অবস্থা অনুযায়ী পাল্টায়। সেটা দেখেই খাবার আর রূপকথা নিয়ে গল্পটা লিখেছিলাম।
আরও পড়ুন, ছেলেকে নিয়ে অন্য উড়ান ‘মিসেস ইন্ডিয়া’ চুমকির
রিলিজের আগে ভয় লাগছে, নাকি আপনি কনফিডেন্ট?
সৌকর্য: দেখুন, ট্রেলারের খুব পজিটিভ রিঅ্যাকশন। এখনও পর্যন্ত অনেককেই ছবিটা দেখিয়েছি। সকলেরই ভাল লেগেছে। ফলে দর্শক যখন হল থেকে বেরোবেন মুভড হবেন। আমার বিশ্বাস এই ছবিটাতে বৃত্তটা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। আসলে ব্যক্তিজীবনে আমরা এত ধাক্কা খাই, এত বার হারি— এখানে একটা হেরে যাওয়া ছেলে জিতে যাচ্ছে। ফলে ছবিটা দেখে মানুষ হয়তো ভাববেন আমি আবার জিততে পারি।