জোট বেঁধে

ভোটের বাজারে জোট চর্চা তুঙ্গে। বিজ্ঞাপনের বাজারেও কিন্তু তাই। ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টে সেলেব জুটির চাহিদা ঊর্ধ্বগামীঅফস্ক্রিন কাপলকে বিজ্ঞাপনী প্রচারে শামিল করার অন্যতম প্রধান কারণ, এঁদের রসায়নকে কাজে লাগানো।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share:

রণবীর-দীপিকা

একা একা কোনও কিছু করা আর জোট বেঁধে করার মধ্যে যে ফারাক... ঠিক সেটাই রয়েছে বিজ্ঞাপনে সিঙ্গল এনডোর্সমেন্ট আর কাপল এনডোর্সমেন্টের মধ্যে। ধরা যাক, রণবীর সিংহ একটি বিজ্ঞাপনের মুখ। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হলেন দীপিকা পাড়ুকোন। স্বাভাবিক ভাবেই বিজ্ঞাপনটির ওজন বেড়ে যাবে। সম্প্রতি রণবীর-দীপিকা, বিরাট কোহালি-অনুষ্কা শর্মা বা করিনা কপূর-সেফ আলি খানকে একাধিক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে। শাহরুখ খান-গৌরী খান, অক্ষয়কুমার-টুইঙ্কল খন্না, অভিষেক বচ্চন-ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন... সকলেই রয়েছেন এই তালিকায়। বাংলায় দেব এবং রুক্মিণী একত্রে বিজ্ঞাপন করছেন। তার আগে প্রসেনজিৎ ও অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে। জুটিতে ব্র্যান্ড এনডোর্সের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ।

Advertisement

ব্যক্তিগত রসায়ন

Advertisement

অফস্ক্রিন কাপলকে বিজ্ঞাপনী প্রচারে শামিল করার অন্যতম প্রধান কারণ, এঁদের রসায়নকে কাজে লাগানো। বিরাট-অনুষ্কার বিজ্ঞাপনগুলি খেয়াল করলে বোঝা যাবে তাঁদের প্রেম-খুনসুটি-পারস্পরিক বোঝাপড়া, কী ভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। একই কথা দীপিকা-রণবীরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিজ্ঞাপন নির্মাতা বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জুটিদের নিজস্ব কিছু গল্প থাকে। ক্লায়েন্ট চায় সেগুলো কাজে লাগাতে। বিরাট-অনুষ্কা বিয়ের আগে একটি পোশাকের বিজ্ঞাপন করেছিলেন। সেটি খুবই জনপ্রিয় হয়। বিয়ের পরেও তাঁদের দিয়ে ওই সংস্থা বিজ্ঞাপন করায়। দু’টি কমার্শিয়াল দেখলে বোঝা যাবে, কী ভাবে গল্প তৈরি হয়েছে। কাপলের নিজেদের সমীকরণই এ সব ক্ষেত্রে ইউএসপি।’’

দীপিকা আর রণবীরকে একটি এয়ার কন্ডিশনারের বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে। বিয়ের পরে দু’জনের এটাই প্রথম বিজ্ঞাপন। সেখানে রণবীর-দীপিকার সম্পর্কের মিষ্টি রসায়ন সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘‘ক্রিয়েটিভ বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যক্তিগত ছোঁয়া খুব জরুরি। কখনও সেটা সংলাপের মধ্য দিয়ে আসতে পারে, কখনও অভিব্যক্তি দিয়ে,’’ বক্তব্য বৌদ্ধায়নের।

প্রডাক্টের বিচারে

কোনও বিজ্ঞাপনে জুটিকে মুখ হিসেবে ব্যবহার করা হবে কি না, তা নির্ভর করে প্রডাক্টের ধরনের উপর। নরম পানীয় সংস্থার জন্য সেলেব কাপলের চাহিদা না-ও থাকতে পারে ক্লায়েন্টের। কিন্তু গৃহস্থালি বা পরিবার সংক্রান্ত কিছু হলে দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি অনেক বেশি কার্যকরী। পরিচালক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘সেলেব থাকা মানেই সেই পণ্য অতিরিক্ত মাইলেজ পাচ্ছে। তার উপরে সেলেব দম্পতি হলে গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি। কিন্তু আগে দেখতে হবে প্রডাক্টের জন্য ওই জুটি প্রাসঙ্গিক কি না।’’ সম্প্রতি সেফ-করিনা একটি হসপিটালিটি সার্ভিসের প্রচার করেছেন।

বিরাট-অনুষ্কা

হিসেবনিকেশ

জুটিকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করালে লাভ যেমন বেশি, ব্যয়ের অঙ্কও কম নয়। কাপল এনডোর্সমেন্টের বাজেট অনেক বেশি। বিরাট ও অনুষ্কা আলাদা ভাবে যে টাকা নেন, জুটিতে বিজ্ঞাপন করলে সেই অঙ্ক অনেকটাই বেড়ে যায়। অনিরুদ্ধর কথায়, ‘‘ক্লায়েন্টের বাজেট পারমিট করলেই আমরা সেলেব কাপল নেওয়ার কথা ভাবি। কারণ দু’জন সেলেবকে একসঙ্গে ব্যবহার করা মানে বিশাল অঙ্কের প্রসঙ্গ চলে আসে। এ ক্ষেত্রে আমরা শুধু তারকার মুখ নয়, তাঁদের সমীকরণকেও ব্যবহার করছি।’’

দেব-রুক্মিণী

এর একটা অন্য দিকও আছে। বাজারের নিরিখে বিচার করলে দীপিকা বা রণবীরের ফেস ভ্যালু অনেকটাই কাছাকাছি। কিন্তু এমন অনেক সময়েই হয় যে, কাপলের মধ্যে এক জন হয়তো বড় তারকা, অন্য জন সেই মাপের নন। সে ক্ষেত্রে কী হবে? ‘‘দু’জন নামী ব্যক্তিত্ব থাকলে বাজেট নিঃসন্দেহে বেশি হবে। এক জন যদি ততটা জনপ্রিয় না হন, তা হলে বাজেট কম হতে পারে। কিন্তু একেবারে কমও হবে না। কারণ জুটি হিসেবেই তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে,’’ বক্তব্য অনিরুদ্ধর। তিনি সম্প্রতি দেব এবং রুক্মিণীর সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপন করেছেন। দেবের জনপ্রিয়তার তুলনায় রুক্মিণী অনেকটাই পিছিয়ে। কিন্তু তাঁদের দু’জনের একত্রে আসাটাই বিজ্ঞাপনে বাড়তি মাত্রা আনছে। তবে জাতীয় পর্যায়ের কাপল এনডোর্সমেন্টের পারিশ্রমিকের সঙ্গে এখানকার তুলনা করার যুক্তি নেই।

আসলে ব্যক্তিগত জীবনে সেলেবদের সমীকরণ যেমনই হোক, বিজ্ঞাপনের বাজারে দর ধরে রাখতে সব সময়েই ‘হ্যাপি কাপল’ হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন