সামিউল ও যশোজিৎ
এক জন ইতিমধ্যেই একটি ছবি করে ফেলেছে। আর এক জন এক্কেবারে নতুন। কিন্তু তাদের দেখলে তা বোঝা দায়। দু’জনেই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। অরুণাচল প্রদেশে অ্যাডভেঞ্চার সেরে ফিরে এসেছে জোজো আর শিবু। ছবির শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দু’জনের বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি মোটেও। তাই দেখা হতেই শুরু হয়ে গেল মোবাইল গেম সংক্রান্ত আড্ডা!
অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে যশোজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যাবে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘অ্যাডভেঞ্চার্স অব জোজো’ ছবিতে জোজোর ভূমিকায়। এটিই যশোজিতের প্রথম ছবি। নার্ভাস হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু শুরুতেই ছক্কা হাঁকাল খুদে অভিনেতা, ‘‘প্রথম প্রথম নার্ভাস লাগছিল ঠিকই। তবে পরে কনফিডেন্স পেয়ে গিয়েছিলাম। কখনওই সেটা হারাতে দিইনি। তাই ভয় লাগেনি।’’ বাবা নাকি শুরুতে তোমার অভিনয় করায় রাজি হননি? ‘‘না। বাবা প্রথমেই রাজি হয়ে গিয়েছিল। আমিই রাজি ছিলাম না। তার পরে আমাকে কনভিন্স করানো হয়। আসলে আমি চাইছিলাম আগে পড়াশোনাটা করতে। আর সেই সময়ে স্কুলও আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল...’’
আবার ‘সহজ পাঠের গপ্পো’র চেনা মুখ সামিউল আলমের বাবা বেজায় খুশি ছেলের সাফল্যে। ‘‘অভিনয়টা আমার ভাল লাগে। অভিনেতাই হতে চাই। কোনও কাজের সুযোগ এলে আব্বুকে বলি, ‘আগে তুমি জেনে নাও সব। তার পরে আমি করব।’ উনি নিজেও খুব খুশি,’’ ক্লাস নাইনের সামিউলের চোখে তখন আনন্দের ছোঁয়া।
আরও পড়ুন: ‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকে শোলাঙ্কির এন্ট্রি
পড়াশোনা ছাড়া যশোজিতের বাকি সময়টা কাটে বই পড়ে, গান শুনে। ইদানীং মন দিয়েছে ডুডলিংয়ে। বইপোকা যশোজিতের পছন্দের লেখক ডেভিড ওয়ালিমস। সামিউল পড়ার ফাঁকে নেমে প়ড়ে মাঠে ফুটবল খেলতে। পর্দার জোজোর মতো যশোজিৎ অতটাও অ্যাডভেঞ্চারাস নয়। ‘‘কিন্তু আমি স্কুলের কোনায় কোনায় ঘুরে বেড়াই। এত বড় স্কুল আমার,’’ বলছে যশোজিৎ। আর সামিউলেরও খেলে বেড়ানো, গাছে চ়ড়া... কিছুই বাদ নেই।
অরুণাচলে শুটিং করতে গিয়ে হাতির পিঠে চড়েছে দু’জনে। সামিউল আবার একাই হাতির শুঁড় বেয়ে উঠে তার পিঠে চড়েছে। তার কথায়, ‘‘এক দিন রাজ আঙ্কল এসে বলল, হাতির শুঁড়ের উপর দিয়ে উঠতে হবে। মাহুত এসে হিন্দিতে কী সব বলতে লাগল! বুঝতেই পারছিলাম না। তার পরে হাতির কান দুটো ধরে শুঁড়ের উপরে পা রাখতেই তুলে নিল পিঠে! এক বারেই শিখে গিয়েছিলাম।’’ হাতির পিঠে চড়া নিয়ে মজাও হয়েছে দেদার। যশোজিৎ বলছে, ‘‘আমাদের ওখানে দুটো হাতি ছিল। এক দিন আমরা গ্রাসল্যান্ডে শুটিং করছিলাম। আমরা দু’জনে ছিলাম একটা বড় হাতির পিঠে। একটু দূরে ছিল ছোট হাতিটা। ওরা দু’জনেই বোন। বোন হাতি হঠাৎ ডাক দিতেই দিদি হাতি আমাদের পিঠে নিয়ে দুদ্দাড় জঙ্গলের ভিতরে দৌড়তে শুরু করল!’’ সামিউল যোগ করল, ‘‘আর হাতি তো খুব জোরে দৌড়য়। যশোজিৎ আমার পিছনে ছিল। যখনই হাতি দৌ়ড়ল, ও আমাকে পিছন থেকে জাপটে ধরেছিল।’’ অবশ্য শেষ অবধি মাহুত এসে থামায় সেই হাতিকে।
আরও পড়ুন: নতুন কাহিনিতে অপরাজিতা-শ্রাবন্তী
অরুণাচল ভাল লাগলেও বেশ গরম ছিল। তাই শুটিংয়ের ফাঁকে ঝেঁপে বৃষ্টি নামার মতো আনন্দ আর কিছুতে পায়নি যশোজিৎ-সামিউল। ‘‘জিতু (কামাল) আঙ্কল কী মজার মিমিক্রি করত,’’ হেসে গড়িয়ে পড়ল দু’জনে। এত মজার মাঝে তাই বাড়ি ছেড়ে শুটিংয়ে যাওয়ার মনখারাপ জাঁকিয়ে বসেনি।
হঠাৎ টিভির পর্দায় এসে জোজো-শিবু এখন অনেকের চেনা। সামিউলকে যেমন লোকে মাঝেমাঝেই ডেকে ফেলে গোপাল বা শিবু নামে। আর যশোজিৎ? প্রথমে কিছুতেই বলতে রাজি না হলেও পরে জানা গেল, একটি স্কুলে ছবির ট্রেলার লঞ্চে গিয়ে অনেক মেয়ে ঘিরে ধরেছিল যশোজিৎকে! অবশ্য তাদের দাবি এমন বেশি কিছু না, অটোগ্রাফ। আর এই ঘটনা বলতে গিয়েই লজ্জায় একসা যশোজিৎ! তার গালের লালচে আভা তখন পড়ন্ত সূর্যের আলোকেও হার মানায়।