Nachiketa Ghosh Birth Centenary

‘বাবার দাপটে হেমন্তবাবু, মান্নাদা ডুয়েট গেয়েছেন’, নচিকেতা ঘোষের শতবর্ষে সুপর্ণকান্তি

পরিচালক হরপ্রসাদ মণ্ডলের তথ্যচিত্র ‘মেজাজটাই তো আসল রাজা’য় ধরা দেবেন ‘ব্যক্তি’ নচিকেতা ঘোষ। আইসিসিআর সভাগৃহে একঝাঁক শিল্পী গান শোনাবেন তাঁর। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনে বাবাকে নিয়ে ছেলের স্মৃতিচারণ।

Advertisement

সুপর্ণকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:২৮
Share:

সুরকার নচিকেতা ঘোষের জন্মশতবর্ষে সুপর্ণকান্তি ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

বাবার জীবন জুড়ে অজস্র ঘটনা। বাবা যখন কাজ করতে শুরু করলেন তখন রবীন চট্টোপাধ্যায়, অনিল বাগচি, সলিল চৌধুরীদের রমরমা। ওঁরা মধ্যগগনে। বাবার সুর দেওয়া গান তাঁদের সৃষ্টিকে ছাপিয়ে বাংলা গানের দুনিয়ায় ভিন্ন রাস্তা তৈরি করেছিল। তাঁদের ধারা আর বাবার সুরের মেজাজ ছিল আলাদা। সেই জোরেই নচিকেতা ঘোষের সুর, নচিকেতা ঘোষ স্বয়ং জনপ্রিয়। সে কারণেই খ্যাতনামী সুরকারদের ভিড়েও নচিকেতা ঘোষ হারিয়ে যাননি।

Advertisement

তা হলে কি সেই যুগে শিল্পী, সুরকারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল না? অবশ্যই ছিল। তার মধ্যেও ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা, সম্মানবোধ। সব ছাপিয়ে ছিল আত্মীয়তা। গানের দুনিয়ার প্রত্যেকে যেন এক পরিবার। অন্তরে পরস্পরের প্রতি চোরা টান। সেই অনুভূতির কারণেই কেউ কাউকে পিছন থেকে টেনে ধরা বা নামানোর চেষ্টা করতেন না।

এই আত্মীয়তা ছাপ ফেলেছিল ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ছবিতে। বাবার সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর মান্না দে একসঙ্গে গেয়েছিলেন। অথচ ওই ছবির বেশির ভাগ গান বাবা মান্নাদাকে দিয়ে গাইয়েছিলেন। যখনই সংস্কৃত স্ত্রোত্র গানের আকার নিল তখনই বাবা অনুরোধ জানালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে। ‘কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ’ গানটি ওঁর গায়কির সঙ্গে মানানসই বলেই বাবা হেমন্তবাবুকে ওই গানের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলি, বাবার আমলে প্রচুর শিল্পী। হেমন্তবাবু, মান্না দে ছাড়াও আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, আরতি মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র এবং আরও অনেকে। তার পরেও বাবা কিন্তু কোনও দিন কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেননি। যে গান যাঁর কণ্ঠে মানাবে তাঁকে দিয়ে সেই গান গাইয়েছেন।

Advertisement

বাবা খুব কড়া শিক্ষক ছিলেন। তাঁর গান আগে ভাল করে অভ্যাস করবেন শিল্পী, তালিম নেবেন তাঁর কাছে, তার পর গাইবেন— এমনই নির্দেশ তাঁর। এমনও হয়েছে, বাবার দাপটে এক ছবিতে ডুয়েট গেয়েছেন হেমন্তবাবু, মান্নাদা! কেউ কোনও ওজর-আপত্তি তোলেননি, টুঁ শব্দ করেননি। এখনকার গানের দুনিয়ায় সে সব কই? কারও সঙ্গে কারও কোনও সম্পর্ক নেই। একসঙ্গে বসা নেই, গান নিয়ে আলোচনা নেই, মহড়া নেই।

বাবার আমলে রেকর্ডিংয়ে শিল্পী থেকে গীতিকার, সুরকার, বাদ্যযন্ত্রী— সকলে উপস্থিত থাকতেন। এখন দেখুন! যে যার মতো করে এসে গেয়ে যাচ্ছেন। সেটা ট্র্যাকে ধরে রাখা হচ্ছে। কোনও গানে দ্বৈত শিল্পী থাকলেও তাঁরা একসঙ্গে গান না। যিনি আগে রেকর্ড করেন তাঁর গান শুনে দ্বিতীয় জন গান! আমি এখনও এ সব ভাবতে পারি না। এই জন্যই এখনকার গান কালজয়ী হয় না। এখনও অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের থেকে তাই আমার সুরে মান্না দে-র গাওয়া ‘কফি হাউস’ গাওয়ার অনুরোধ পাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement