Devlina Kumar

ওর বিয়েতে ‘কন্যা সম্প্রদান’ হবে না, বার বার বলে দিয়েছে দেবলীনা

যখনই একটু বড় হয়েছে দেবলীনা তখন থেকেই ওর বায়না, আমার বিয়ে দেবে। কিন্তু কন্যা সম্প্রদান করবে না।

Advertisement

দেবযানী কুমার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:২০
Share:

দেবলীনা এবং গৌরব।

একটা মাত্র মেয়ের বিয়ে। এক কথায় কি ফুরোয়? যদিও সবাই বলেন, মেয়ের বাড়ি আর কালীপুজোর রাত নাকি এক। দেবলীনার বিয়ে দিতে গিয়ে দেখছি, কোথায়? কেনাকাটি, আয়োজন, উদযাপনেই পাখা মেলে উড়ে গেল অনেকগুলো দিন।

Advertisement

মঙ্গলবার ছিল মেয়ের মেহেন্দি, নাহ্নীমুখ। চোখের সামনে একটু একটু করে বড় হওয়া মেয়েটা আস্তে আস্তে যেন পর হয়ে যাচ্ছে! যত বার দেবলীনাকে দেখছি, যত বার কথাটা মনে পড়ছে, চোখে যেন সব ঝাপসা দেখছি। বুধবার সকাল থেকে ব্যস্ততা চরমে। গঙ্গাবরণ, জল সইতে যাওয়া, দধিমঙ্গল, নাপিত আসা, কলাতলা, গায়ে হলুদ নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়েছে। এগুলো করেছেন আমাদের বাড়ির জগদ্ধাত্রী মন্দিরের পুরোহিত মশাই।

দেবলীনা সারা দিন এক কাপ চা ছাড়া কিচ্ছু খায়নি!

Advertisement

আরও পড়ুন: সপরিবার দার্জিলিংয়ে অভিমন্যু-মানালি, ডেস্টিনেশন হানিমুন?

মেয়ের বিয়ে দেবেন নচিকেতা। নচিকেতা এর আগে বহু জনের বিবাহ দিয়েছেন বৈদিক মতে। গৌরব-দেবলীনারও বিয়ে হবে সেই মতেই। ফলে, বিয়ের লগ্ন অনেক তাড়াতাড়ি। সাড়ে চারটের মধ্যেই এসে গিয়েছে গৌরব। তাঁকে বরণ করেছি দেবী জগদ্ধাত্রীর আশীর্বাদী লাল শাড়ি পরে। যদিও আমি খুব একটা লাল ঘেঁষা শাড়ি পরি না। কিন্তু সবাই অনুরোধ করলেন, শুভকাজে মায়ের আশীর্বাদী শাড়িই পরা উচিত। তাই ওই শাড়ি পরে বরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার পর বদলে নিয়েছি।

(বাঁ দিকে) মেহেন্দির পর দেবলীনা। (ডান দিকে) বিয়ের দিন বাবা-মার সঙ্গে একান্তে —সংগৃহীত চিত্র।

বৈদিক মতে বিয়ে মানেই কন্যা সম্প্রদান নেই। মনে পড়ছে, যখনই একটু বড় হয়েছে দেবলীনা তখন থেকেই ওর বায়না, আমার বিয়ে দেবে। কিন্তু কন্যা সম্প্রদান করবে না। পরে ও রবীন্দ্রভারতী থেকে সোশিয়োলজি আর নাচে এমএ করেছে। কলাবতী দেবীর ছাত্রী। কলাবতী দেবী মণিপুরের অধিবাসী। যে রাজ্য এখনও মাতৃতান্ত্রিক। তিনিই ছাত্রীদের বুঝিয়েছেন, কন্যা কখনও দানসামগ্রী হতে পারে না। দেবলীনার সেই আবদার মেনে নিয়েছি আমরাও।

রীতি-রেওয়াজ মেনে মালাবদল, সাত পাক ঘোরা, শুভদৃষ্টি, সিঁদুর দান— সবটাই করাবেন নচিকেতা। আমরা এ পারের। তাই আজ রাতেই সিঁদুরদান পর্ব মিটে যাবে। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান জোড় পরেই করবেন মেয়ের বাবা, দেবাশিস কুমার। আমাকেও উপস্থিত থাকতে হবে হয়তো। নচিকেতার নিয়ম মেনে।

আরও পড়ুন: বড় পর্দায় আসছেন ‘অচেনা উত্তম’, প্রদীপ কুমারের চরিত্রে বলিউড তারকা

অতিমারি না হলে আজ আমাদের বাড়িতে তিলধারণের জায়গা থাকত না। করোনার জন্য সবই ভীষণ ছোট আকারে। তবু যে ক’জন আসবেন তাঁদের আজকের দিনে শুধু মুখে কী করে ফেরাই? তাই সবার জন্য একদম বাঙালি মেনুর আয়োজন করেছি। ভজহরি মান্না থেকে আসছে লুচি, ছোলার ডাল, লম্বা করে কাটা ফালি বেগুনভাজা, চিংড়ির কাটলেট, রাইস, দইপোনা, পাঁঠার মাংস, পাটিসাপটা, পয়োধি, সন্দেশ।

দেবাশিস লুচি দিয়ে লম্বা বেগুনভাজা খেতে ভীষণ ভালবাসেন। আমার মেয়ের ফেভারিট পাঁঠার মাংস। জামাই পছন্দ করে মাছ। ফ্রাই কিছু হলে বেশি খুশি। তাই চিংড়ির কাটলেট। এ ভাবেই সবার পছন্দের কথা মাথায় রেখে মেনু সাজানোর চেষ্টা করেছি।

মা তো, এত সবের মধ্যেও তাই ঘুরেফিরে একটাই প্রার্থনা, মেয়ে-জামাই সুখে থাক। ভাল থাক। আপনারাও মন খুলে আশীর্বাদ করুন ওদের। ওরা শান্তিতে থাকবে সবার আশীর্বাদ পেলে।

(দেবযানী কুমার অভিনেত্রী দেবলীনা কুমারের মা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন