প্রিয় জিন্দেগি, নোট ভোগাল প্রথম দিনেই

ঠিক ১৭ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটা বক্তৃতায় বদলে গিয়েছে ভারতবাসীর ‘জিন্দেগি’। শাহরুখ খান টুইটটা করেছিলেন পরের দিন— ‘দূরদর্শী। প্রচণ্ড স্মার্ট। এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। ইতিবাচক বদল আসবে ভারতের অর্থনীতিতে। গ্রেট মুভ @নরেন্দ্রমোদী!’

Advertisement

ইন্দ্রনীল রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৯
Share:

ঠিক ১৭ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটা বক্তৃতায় বদলে গিয়েছে ভারতবাসীর ‘জিন্দেগি’। শাহরুখ খান টুইটটা করেছিলেন পরের দিন— ‘দূরদর্শী। প্রচণ্ড স্মার্ট। এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। ইতিবাচক বদল আসবে ভারতের অর্থনীতিতে। গ্রেট মুভ @নরেন্দ্রমোদী!’

Advertisement

শুক্রবার তাঁর ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র আত্মপ্রকাশের দিনে অনেকেই তুলছিলেন সেই টুইটটার কথা। শাহরুখ কি ওই পুরনো টুইটটা আবার নেড়েচেড়ে দেখছেন— এই হল প্রশ্ন।

কারণ, ছবি রিলিজের প্রথম দিনে বলিউডের বক্স অফিস বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন, সারা দেশে এ দিন প্রত্যাশার চেয়ে অন্তত কুড়ি

Advertisement

শতাংশ কম ব্যবসা করেছে আলিয়া-শাহরুখের ছবি।

এবং যার জন্য কিছুটা হলেও আঙুল উঠছে পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের দিকেই! শাহরুখ যাকে বলেছিলেন, ‘গ্রেট মুভ’। কেউ কেউ রসিকতা করে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’-এর প্রথম দৃশ্যের সেই বিখ্যাত সংলাপও টেনে আনছেন। যেখানে নায়ক ‘অরিন্দম’ উত্তমকুমারকে তাঁর সেক্রেটারি বলছেন, ‘‘মাসের শেষ ভায়া, লোকের ট্যাঁকে পয়সা নেই!’’

বাস্তব হল— পয়সা নেই ঠিকই। কিন্তু কারণটা মাসের শেষ বলে নয়। এবং মাস পয়লাতেও যে পয়সা থাকবে, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ কোমল নাহাতা শুক্রবার বিকেলে মুম্বই থেকে বলছিলেন, ‘‘তিন সপ্তাহ হয়ে গেলেও, নোট বাতিলের জের এখনও চলছে। সেটার জন্যই তো প্রথম দিন অন্তত ২০ শতাংশ কম বক্স অফিস কালেকশন হল ডিয়ার জিন্দেগির।’’ একই বক্তব্য ডিস্ট্রিবিউটর রাজেশ থাডানির। বললেন, “আমার হিসেব মতো, প্রথম দিনে ৮ থেকে ১০ কোটি কামানোর কথা ছবিটার। যেটা একদমই খারাপ নয়। ডিমনিটাইজেশন না হলে এটাই ১৪-১৬ কোটিতে পৌঁছত।”

আর পাঁচটা ছবির মতো ট্রেলার বেরোয়নি এ ছবির। তার বদলে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে গোটা তিন-চার ‘টিজার’। শাহরুখ-আলিয়ার সাইকেল চালিয়ে যাওয়া, সমুদ্রের সঙ্গে কবাডি খেলা, সুখ-দুঃখ-প্রেম নিয়ে আলিয়াকে দেওয়া শাহরুখের পেপটক— এমনই কিছু খণ্ড দৃশ্য। সেই ‘টুকরো’ দেখে কেউ কেউ বলেছিলেন, এটা আর পাঁচটা ‘শাহরুখ খান মুভি’র মতো নয়। সে জন্যই শাহরুখের অন্য সমস্ত ছবি যেখানে পাঁচ কি ছ’হাজার হল-এ মুক্তি পায়, সেখানে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৮০০ হল-এ। যে রাজ্যের তাঁর ছবির রেকর্ড সব সময়েই ভাল, হালে যে রাজ্যের তিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর— সেই পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৫৩টা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। এর মধ্যে ৪০টা মাল্টিপ্লেক্স এবং ১৩টা সিঙ্গল স্ক্রিন।

এখান থেকেই শুরু বলিউডে নতুন বিভাজন। এক দিকে কোমল বা রাজেশরা বলছেন, ছবির আয় কমেছে নোটের আকাল বলেই। অন্য শিবির বলছে, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ বড় বাজেটের মশলা ছবি নয় বলেই অনেক কম স্ক্রিনে রিলিজ করেছে। তাই প্রথম দিনের আয়ও কম।

যেমন ওম মুভিজের দেবাশিস দে। পশ্চিমবঙ্গে ছবিটা রিলিজ করাচ্ছেন তাঁরাই। দেবাশিস বলছেন, ‘‘আমাদের প্রথম দিন থেকেই বলা হয়েছিল, ছবিটা প্রধানত মাল্টিপ্লেক্সের দর্শকদের জন্য। সেই জন্যই লিমিটেড রিলিজ করালাম। এটার সঙ্গে নোট বাতিলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আমোদ মেহরা মনে করছেন, ছবিটির রিপোর্ট সেই রকম ভাল নয় বলেই দর্শক আসেনি প্রথম দিন। আমোদের কথায়, ‘‘ডিমনিটাইজেশনের পর তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। লোকের কাছে ধীরে ধীরে টাকা আসছে। নোট কাণ্ডের জন্য ‘রক অন ২’ চলেনি, মানতে পারি। ‘ফোর্স ২’-র বেলাতেও মানা যায়। কিন্তু ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ প্রথম দিন লোকে কম দেখতে এসেছে, কারণ ছবিটা সে রকম চাঞ্চল্য তৈরি করতে পারেনি।’’

কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র ওপেনিং অবশ্য ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, নোটের প্রভাব তেমন ভাবে পড়েনি এখানে। ‘‘প্রথম দিন ৪০-৪৫ শতাংশ গড়পড়তা দর্শক-হাজিরা কিন্তু খারাপ নয়। মানুষ জানত শাহরুখ খান গোটা ছবি জুড়ে নেই। তবু শুক্রবার ছুটির দিন না হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা এসেছেন। রিপোর্ট ভাল হলে উইকএন্ডে ভাল চলবে বলেই আমার ধারণা,’’ বলছিলেন কলকাতায় অন্যতম বড় মাল্টিপ্লেক্স-চেনের কর্তা পঙ্কজ লাডিয়া।

চর্চার অন্য একটা দিক আবার খুলে দিচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতার নবীনা সিনেমার মালিক নবীন চৌখানি। বলছেন, ‘‘আমার হল-এ ছবিটা প্রথম দিন ভাল ব্যবসা করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ কালেকশন হয়েছে অনলাইন বিক্রি থেকে। টিকিটঘর থেকে বিক্রি প্রায় হয়নি বললেই চলে।’’

অতএব ঘুরেফিরে সেই পুরনো প্রশ্ন। নগদ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে সমস্যা হতে পারে ভেবেই কি শাহরুখের অন্য ছবির মতো প্রচুর সংখ্যক সিঙ্গল স্ক্রিনে রিলিজ করা হল না ‘ডিয়ার জিন্দেগি’? সে জন্যই কি প্রাধান্য দেওয়া হল, প্রিমিয়াম এবং নন-প্রিমিয়াম মাল্টিপ্লেক্সকে? এক প্রযোজক বলছিলেন, ‘‘অবশ্যই তা-ই। ছোট জায়গায় আজও লোকে টাকা দিয়েই টিকিট কাটে। মোবাইল অ্যাপ চলে না। নির্মাতারা এটা বুঝতে পেরেছিলেন। নোট কাণ্ড ক্ষতি করছে বলিউডের। কিন্তু যে হেতু বিষয়টার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে, তাই সবাই মুখ বুজে মেনে নিচ্ছে।’’

আর এক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আমূল মোহন অবশ্য মনে করছেন, আশার আলো আছে। তা আসছে এক-পা দু’পা করে। বললেন, ‘‘রক অন-২’ ধুয়ে গিয়েছিল। একটু হলেও ‘ফোর্স-২’ চলল। এর পর ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ প্রথম দিন আমাদের আশা দেখিয়েছে। মনে হচ্ছে, সবচেয়ে খারাপ সময়টা কেটে গিয়েছে।’’ যদিও কলকাতার এক প্রযোজকের এখনও আশঙ্কা, ‘‘পয়লা ডিসেম্বরের মাইনে পড়ার পর এটিএম আর ব্যাঙ্কের কী অবস্থা হবে কেউ জানে না। সেখানে দোসরা ডিসেম্বর মানুষ সিনেমা কতটা দেখবে, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।’’ তারিখটা গুরুত্বপূর্ণ বইকী। ওই দিনই বেরোনোর কথা ‘কহানি-২’ আর বাংলা ছবি ‘বেঁচে থাকার গান’-এর।

‘আনন্দ’ রাজেশ খন্নার গানটাই যেন এখন থিম মিউজিক— ‘জিন্দেগি ক্যায়সি ইয়ে পহেলি হায়/ কভি তো হাসায়ে, কভি ইয়ে রুলায়ে!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন