ছোটপর্দার নতুন নায়ক সোহম বসু রায়চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক।
সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত। নিমন্ত্রিত অতিথিরা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। মায়ের হাত ধরে হন্তদন্ত হয়ে এক শিশু ঢুকল নিমন্ত্রণবাড়িতে। হাতে উপহার। কোনও রকমে নাকেমুখে গুঁজেই বাড়ির পথে সে।
সোহম বসু রায়চৌধুরী। যাঁরা ছোটপর্দার নিয়মিত দর্শক, তাঁরা সোহমকে চেনেন শিশুশিল্পী হিসাবে। দিতিপ্রিয়া রায়ের সঙ্গে ‘রাখি বন্ধন’ কিংবা ‘অপরাজিত’ ধারাবাহিকে ভাই-বোনের অভিনয় দর্শকপ্রশংসিত। মাঝে লম্বা বিরতি কাটিয়ে সোহম ফের ছোটপর্দায়। এ বার তিনি আকাশ আট চ্যানেলের ধারাবাহিক ‘খনার কাহিনি’-এ। নায়িকা ‘খনা’র বিপরীতে ‘মিহির’ হয়ে।
‘খনার কাহিনি’ ধারাবাহিকে ‘খনা’ ইশিকা রাউতের সঙ্গে ‘মিহির’ সোহম বসু রায়চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমানকে দেখতে দেখতেই সোহম ফিরে গিয়েছেন অতীতে। বলেছেন, “পর্দায় আমরা যা দেখাই বা দেখি, সবটাই কিন্তু বাস্তব থেকে নেওয়া। ছোট থেকে টানা অভিনয়ের কারণে সেই বাস্তবের সঙ্গে আমার দূরত্ব বাড়ছিল। আমায় জোর করে অভিনয় করতে হচ্ছিল।” যেমন? “যেমন, আমার বন্ধুরা যখন স্কুল থেকে ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে মায়ের কোলে, বা বন্ধুর সঙ্গে খেলছে, বন্ধুর জন্মদিনে হইহই করছে— আমি স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করছি! সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। মায়ের হাত ধরে ছুটতে ছুটতে নিমন্ত্রণবাড়িতে গিয়েই আবার ফিরে আসা। কারণ, পরের দিন স্কুল, শুটিং দুটোই আছে। এটা জীবন হতে পারে না।” লম্বা বিরতি তাঁকে ‘জীবন’ ফিরিয়ে দিয়েছে।
ছোটবেলা থেকে অভিনয় কি তা হলে শৈশব কেড়েছে সোহমের? প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম।
অস্বীকার করেননি অভিনেতা। সোহম বলেছেন, “একটু হলেও তো হয়েছে। কিন্তু কিছু পেতে গেলে তো কিছু ছাড়তেই হয়!” তাঁর মনে পড়েছে, শুটিং তাঁকে ‘ছোটা ভীম’ চিনতে দেয়নি! বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকতেন! এখন অনুভব করতে পারেন, সেই সময় চাপা কষ্ট হত তাঁর। শিশু সোহম সেটাও বুঝতে পারেননি তখন! অথচ, বিরতি নেওয়ার পর চার দিনের মাথায় দম আটকে এসেছে। “শুধু স্কুল আর বাড়ি নিয়ে কী করে সময় কাটাব? মাকে বলেছি, এখনই আমার জন্য কাজ খোঁজো। প্রচুর ডাকও এসেছিল। পরে নিজেই নিজেকে শক্ত করে ফিরিয়ে দিয়েছি।” নিজেকে ব্যস্ত রাখতে তাঁর ছোটবেলার শখ সঙ্গীতকে আঁকড়ে ধরেছেন। গিটার, কি-বোর্ড বাজাতে শিখেছেন। প্রোডাকশনের কাজ-সহ গান তৈরির খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে।
শিশুশিল্পী থেকে নায়ক— এই যাত্রা সোহম কতটা উপভোগ করছেন? লম্বা বিরতির প্রকৃত কারণ, জীবনে ফেরা?
সোহমের কথায়, “বড় হয়ে নতুন রূপে আবার সকলের সামনে। নতুন পরিচয় আমার। ভাল লাগছে। বড় চ্যালেঞ্জও। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শব্দবন্ধ বুঝেই ব্যবহার করলাম। কারণ, মাঝে লম্বা বিরতি। নায়ক হয়ে প্রত্যাবর্তন, ফের ক্যামেরার মুখোমুখি— একটু তো চাপের। তার উপরে ঐতিহাসিক চরিত্র। যাঁকে সে রকম ভাবে জানার সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে ভালই চ্যালেঞ্জ।” বলতে বলতে হেসে ফেলেছেন।
সোহম সাংবাদিকতায় স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, “প্রথম কারণ পড়াশোনা। দ্বিতীয় কারণ, নিজেকে ভাঙতে।” একটা সময় টানা অভিনয় করছিলেন তিনি। সোহম তখন শিশুশিল্পী। নাগাড়ে অভিনয় করতে করতে, দর্শকের প্রত্যাশার চাপ সামলাতে সামলাতে তাঁর মনে হয়েছিল, যে ভাবে অভিনয় করা উচিত সেটা তিনি করতে পারছিলেন না। “প্রত্যেক ধারাবাহিকে একই অভিনয় করছি! কোনও নতুনত্ব আনতে পারছি না। নিজেই একটা সময়ে একঘেয়েমিতে ভুগতে শুরু করি। ঠিক করি, আপাতত অভিনয় থেকে বিরতি নেব।”
২০১৯-এ ‘কলের বৌ’ ধারাবাহিকে শেষ কাজ। ২০২৫-এ যখন সোহম ফিরেছেন, তখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে ছোটপর্দার দুনিয়া।
কী কী বদল দেখলেন? “অনস্ক্রিন বদলেছে। অফস্ক্রিন বদলেছে। কাজের ধারা, অভিনয়ের ধারা বদলে গিয়েছে। যে রকম ভেবেছিলাম সে রকম হয়নি। তার থেকে বেশি কিছু জিনিসের মুখোমুখি হয়েছি। আগের তুলনায় এখন নিজেকে বেশ অভিজ্ঞ মনে হয়!” নিজেও বদলেছেন, উপলব্ধি করতে পারছেন সেটা। এই অভিজ্ঞতাই সোহমকে ‘মিহির’ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকে ঐতিহাসিক চরিত্র হয়ে উঠতে ভরসা জুগিয়েছে। দিনের শেষে সোহম তৃপ্ত। এখন একটাই লক্ষ্য, আগের মতো দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠা।