অর্জুন দত্তের সাফল্য নিয়ে কী বললেন ইন্দ্রাশিস আচার্য? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
জাতীয় মঞ্চে সম্মানলাভের দৌড়ে ছিল একগুচ্ছ বাংলা ছবি— ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘পদাতিক’, ‘নীহারিকা’, ‘মুজিব’, ‘ডিপ ফ্রিজ’, ‘মাতৃপক্ষ’, ‘রক্তবীজ’, ‘প্রজাপতি’, ‘বাবলির বর্ণপরিচয়’, ‘রবীন্দ্রকাব্য রহস্য’, ‘বিজয়ার পরে’, ‘কাবলিওয়ালা’, ‘কুরবান’, ‘ফাটাফাটি’, ‘অভাগী’, ‘আমি ও মনোহর’। চূড়ান্ত পর্বে জায়গা পায় ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘নীহারিকা’, ‘ডিপ ফ্রিজ’ এবং ‘মুজিব’। ১১ সদস্যের জুরি বোর্ড এর মধ্যে সম্মানিত করেছে অর্জুন দত্তের ‘ডিপ ফ্রিজ’কে।
তার পরেই জুরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য অনীশ বসু বাংলা ছবি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, আশুতোষ গায়কোয়াড়ের পরিচালনায় জুরি সদস্যেরা বাংলা ছবি দেখতে দেখতে কার্যত হতাশ! ছবির মান দেখেও হতাশ তাঁরা। অনীশের ক্ষোভ, বেশির বাংলা ছবির বিষয় এবং শুটিং স্থলও নাকি প্রায় এক। সম্পর্কের টানাপড়েন বাংলা ছবির ‘সাধারণ বিষয়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ ছবি বৈঠকখানার চার দেওয়ালে আবদ্ধ। কেন নতুন কোনও বিষয় খুঁজে পাচ্ছেন না বাংলা ছবির পরিচালকেরা— চর্চায় উঠে এসেছে তা-ও।
পুরস্কার ঘোষণার এক রাত কাটতেই সামাজমাধ্যমে উঠেছে ঝড়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাশিস আচার্য ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। রাতারাতি তাঁদের বক্তব্য ভাইরাল। দুই পরিচালকের বক্তব্য পড়ে দ্বিধাবিভক্ত টলিউড। একদল সমর্থন জানিয়েছেন ইন্দ্রাশিসকে। আর এক দল সমালোচনা করেছেন ‘নীহারিকা’র পরিচালকের। সমালোচকেরা বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ।
তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, নবীন পরিচালক অর্জুনকে শুভেচ্ছা জানানো দূর অস্ত! কেন এত কড়া ভাষায় বিরোধিতা করছেন তিনি?
নিজের ছবি জাতীয় মঞ্চে স্বীকৃতি না পাওয়া কি ভেঙে পড়েছেন ইন্দ্রাশিস? তাই সরাসরি সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন? আনন্দবাজার ডট কম–এর কাছে সমালোচকদের অভিযোগ খণ্ডন করেছেন ইন্দ্রাশিস। বলেছেন, “আমার বক্তব্যের বিরোধিতা করে সমালোচনা করা হয়েছে, মন্তব্য বিভাগে এমন বক্তব্য আমার চোখে পড়েনি। তার পরেও কেউ যদি তা করে থাকেন তা হলে বলব, তাঁরা আমার বক্তব্য বোঝেননি। আমি অর্জুনের জাতীয় স্তরের সম্মান পাওয়ার কোনও বিরোধিতা করিনি।” পরিচালকের যুক্তি, তাঁর যাবতীয় আপত্তি বাঙালি জুরি সদস্য অনীশের বক্তব্য নিয়ে। একজন বাঙালি হয়ে কী করে তিনি বাংলা ছবিকে এ ভাবে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেললেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ইন্দ্রাশিস।
যে হেতু তাঁর ছবি ‘নীহারিকা’ চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছিল, তাই সে প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, “এই ছবিতে মামা-ভাগ্নির প্রেমের কথা বলেছি। এর আগে এই সম্পর্ক কোনও বাংলা ছবিতে দেখানো হয়নি।” ইন্দ্রাশিসের আরও দাবি, তিনি কিন্তু তাঁর ছবিকে বৈঠকখানায় আটকে রাখেননি। বরং তাঁর চরিত্ররা ঘুরে বেড়িয়েছে মনোরম পরিবেশে। যেখানে পাহাড়, টিলা, ঝর্ণা— সবই রয়েছে। পরিচালক জানিয়ে দিতে ভোলেননি, প্রথম সারির নানা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘নীহারিকা’ সম্মানিত। ছবির বিষয়ে বা শুটিং স্থলে একঘেয়েমি থাকলে নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক মঞ্চ এ ছবিকে এত বাহবা দিত না!
কিন্তু ইন্দ্রাশিস এক বারও তাঁর সমাজমাধ্যমের প্রতিক্রিয়ায় শুভেচ্ছা জানাননি অর্জুনকে! এ বিষয়ে পরিচালক বলেন, “ওই বার্তা তো অর্জুনকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য লিখিনি। জাতীয় মঞ্চে ওর নাম ঘোষিত হতেই ব্যক্তিগত ভাবে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার পোস্ট জুরি সদস্য অনীশের বক্তব্যের বিরুদ্ধে। দু’টি বিষয় এক করে দিলে কী করে হবে?” এ প্রসঙ্গে তাঁর আরও যুক্তি, বক্তব্যের শুরুতেই জানিয়েছেন, অর্জুনের সম্মানপ্রাপ্তি নিয়ে তাঁর কোনও বিরোধ নেই। তিনি ক্ষুব্ধ বাঙালি জুরিসদস্যের বক্তব্যে।
রাতারাতি বিতর্কের শিরোনামে উঠে আসা অর্জুন কী বলছেন? জানতে তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। নবীন পরিচালক বলেন, “বিতর্ক নিয়ে কোনও কথা বলব না। নির্দিষ্ট দিনে সম্মান নিতে যাব, এই পর্যন্তই। তবে ‘ডিপ ফ্রিজ’কে সম্মান জানানোর মাধ্যমে জুরি বোর্ড নবীন পরিচালকদের পরিশ্রমকেই সম্মানিত করলেন। তার জন্য আরও একবার কৃতজ্ঞ।”