বড়পর্দায় কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
একমাথা সাদা চুল মুখের উপরে এসে পড়েছে। মাথা ঝাঁকিয়ে সেই চুল সরিয়ে দিচ্ছেন। ওই সাদা চুল দেখে সেই পুরুষের বয়স হিসাব করতে যাওয়া ছিল বৃথা! তিনি কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়। কখনও প্রেমিক। কখনও ডাকসাইটে খলনায়ক। শাণিত চাহনি, কেটে কেটে প্রতিটি সংলাপ উচ্চারণ— সব মিলিয়ে আলাদা আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল তাঁকে ঘিরে। বড়পর্দা, ছোটপর্দা, সঞ্চালনা— কোথায় ছিলেন না! সেই তিনিই তুমুল প্রেমে পড়েছিলেন অভিনেত্রী কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিনোদন দুনিয়ার দাবি, সেই প্রেমের আঁচে নাকি পুড়েছিল উভয়ের ভাগ্য! তাঁদের কাজ নিয়ে তখন যত না চর্চা, তার থেকেও বেশি চর্চায় তাঁদের প্রেম। এ ভাবে চলতে চলতে হঠাৎ করে কৃষ্ণকিশোর ‘উধাও’!
কোথায় গেলেন তিনি? জাম্পকাট ২০২৩-’২৪। লম্বা সময় কাটিয়ে ছোটপর্দায় দেখা যাচ্ছে অভিনেতাকে। ২০২৫-এ তিনি আবারও বড়পর্দায়। পরিচালক অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘বেলা’তে তিনি ‘আকাশবাণী অধিকর্তা’র চরিত্রে অভিনয় করছেন। তাঁকে ছবির নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে পর্দা ভাগ করতে দেখা যাবে। তাঁর মতে, “ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে ছবি। প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। আমার অভিনীত চরিত্রটিও সে রকমই।”
এত দিন কোথায় ছিলেন? আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন করেছিল অভিনেতাকে। তিনি মৃদু হেসে বলেছেন, “এখানেই ছিলাম। আসলে ছোটপর্দার কাজ অনেক সময়েই অনেকের নজরে আসে না। আমার ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে।” একটু থেমে তিনি যোগ করেছেন, ধারাবাহিক ‘ইচ্ছেপুতুল’, ‘মিঠিঝোরা’, ‘ডায়মন্ড দিদি জিন্দাবাদ’-সহ একাধিক ধারাবাহিকে তিনি পর পর অভিনয় করেছেন। ‘ডায়মন্ড দিদি জিন্দাবাদ’-এ অভিনয়ের সময়েই শিরদাঁড়ায় তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। “বাধ্য হয়ে তখন সাময়িক অভিনয় থেকে সরে দাঁড়াই”, বললেন অভিনেতা। সেই সময় তাঁর জায়গায় এসেছিলেন আর এক অভিনেতা বিপ্লব দাশগুপ্ত। যদিও তিনিও বেশি দিন ওই চরিত্রে অভিনয় করেননি। আবার ফেরেন কৃষ্ণকিশোর।
অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের ‘বেলা’ ছবিতে কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সময় গড়িয়েছে। বিনোদন দুনিয়াও অনেক বদলেছে। ধারাবাহিকের গল্পের ধারাতে ঘটেছে পালাবদল। আগের সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারলে অভিনেতা আজ আরও উঁচুতে থাকতেন? যদি কমলিকার সঙ্গে সম্পর্কে, প্রেমে না জড়াতেন! এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোনও আক্ষেপ তৈরি হয়নি তাঁর মনে?
স্বাভাবিক কণ্ঠে কৃষ্ণকিশোর জানালেন, সে সব মেনে নিয়েই নিজের মতো করে এগিয়ে চলছেন তিনি। জীবন নিয়ে কোনও আফসোস নেই তাঁর। কখনও মনে হয় না, তিনি অনেক কিছু পাননি। একটু থেমে বললেন, “যা যা করেছি আমি, সদর্প বলব না। তাতে অহঙ্কার আসে। আমার জীবন খোলা খাতা। কোনও দিন কিচ্ছু লুকোইনি। আজও এই নীতি মেনে চলার চেষ্টা করি।” তাতে হয়তো ঢেউ ওঠে। আবার সেটা থেমেও যায়। ঢেউ পাড় ভাঙে, যা দেখে বাকিরা ‘গেল গেল’ রব তোলেন হয়তো। ভিতরটা কেউ দেখতে পান না। কৃষ্ণকিশোর জানেন, তিনি ভিতরে শান্ত, সমাহিত।
তাঁর আরও দাবি, খ্যাতির চাপ সকলে নিতে পারেন না। তিনিও সেই দলে। তাই বেশি খ্যাতনামী হওয়ার চেষ্টাও করেন না। “মঞ্চে কাজ করছি। ক্যামেরার সামনে থাকার পাশাপাশি ক্যামেরার পিছনেও কাজ করছি ইদানীং। ভাল লাগছে”, বললেন কৃষ্ণকিশোর।