অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের গল্প বললেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
একটা সময় ছিল, ম্যাটিনি হোক কিংবা ইভনিং শো— ওঁর কোনও ছবি আমি মিস্ করতাম না। সেই মানুষটির সামনে বসে থাকাই তো একটা বড় অভিজ্ঞতা!
আমি যখন ‘পিঙ্ক’ তৈরি করেছি তখন তাঁর বয়স প্রায় ৭৫ ছুঁই ছুঁই। বুঝেছি, নতুন প্রজন্মের অনেক অভিনেতাকে বলে বলে উনি গোল দিতে পারেন। পাশাপাশি, নম্রতা কাকে বলে সেটা ওঁর থেকে শেখা উচিত সকলের। এখনও একটা দিনও হয়নি আমি ওঁকে মেসেজ করেছি, অথচ তার উত্তর আসেনি। আজ জন্মদিনে ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই এত শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়ে আমার মেসেজটা হয়তো হারিয়ে যাবে ওঁর ফোনে। কিন্তু উনি যে অমিতাভ বচ্চন! রিল নয়, রিয়েলও তো উনি ‘হিরো’ই। আর নায়কেরা সবসময় ‘পারফেক্ট’ হয়। মেসেজ করার আধঘণ্টার মধ্যে টং করে ফোনে আওয়াজ। ভালবাসা পাঠিয়েছেন ‘স্যর’! এই ব্যক্তিত্বর সামনে আমরা সত্যিই নগণ্য।
আজ ওঁর জন্মদিনে সেই প্রথম দিনের কথাটা খুব মনে পড়ছে। সুজিত (সরকার) নিয়ে গিয়েছিল আমাকে এবং রিতেশ শাহকে। স্বপ্নের নায়ককে সেই প্রথম চোখের সামনে দেখা। কলকাতার ওবেরয় হোটেলে আমাদের মিটিং। ‘স্যর’ ঠিক আমার মুখোমুখি বসে। চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা চলছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে উনি কথা বলতে বলতে ‘দিওয়ার’-এর শেষ দৃশ্যের সংলাপ বলতে শুরু করলেন। গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল রীতিমতো। যে সংলাপ কত বার পর্দায় শুনেছি। আমার সামনে আমার সুপারস্টার তা আওড়াচ্ছেন, ভাবতেই পারছিলাম না! সেই দিনই তাঁর কণ্ঠে হরিবংশ রাই বচ্চনের একটি কবিতা শুনেছিলাম। ওই সংস্কৃতির ছোঁয়া পাওয়া, সেটাই বড় সাফল্য আমার কাছে।
এক দিওয়ালি পার্টিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
এক বার ওঁর বাড়িতে আমাদের নেমতন্নও করেছিলেন। মিসেস বচ্চন (জয়া বচ্চন) ছিলেন। অভিষেক-ঐশ্বর্যা ছিলেন। ওঁর মতো অতিথি আপ্যায়ন করতে আমি খুব কম মানুষকে দেখেছি। সেই রাতে তাঁর বাবার লেখা একের পর এক কবিতা পাঠ করে শুনিয়েছিলেন আমাদের। সে এক মনে রাখার মতো রাত। তার পরেও বেশ অনেক বার গিয়েছি ওঁর বাড়িতে। দীপাবলির পার্টিতে গিয়েছিলাম। প্রত্যেক অতিথির দিকে তাঁর সমান নজর। তবে, ‘স্যর’কে খুব বেশি খাওয়া-দাওয়া করতে দেখিনি কখনও। আসলে উনি কাজেই বাঁচেন। আমার চোখে উনি শুধু নায়ক নন, উনি হলেন আমার ‘সুপার হিরো’।