নুসরত জাহানের সই জাল করেছিলেন রাজর্ষি দে? ছবি: ফেসবুক।
টানা ছ’মাস ধরে আইনি টানাপড়েন। পুজোর আগে স্বস্তিতে পরিচালক রাজর্ষি দে। মার্চ মাসে প্রযোজক অরিন্দম ঘোষ এবং অভিনেতা-প্রযোজক প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা এবং নুসরত জাহানের সই জালের অভিযোগ এনেছিলেন। সোমবার আনন্দবাজার ডট কম-কে পরিচালক জানিয়েছেন, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালত তাঁকে সসম্মানে মামলা থেকে রেহাই দিয়েছে।
এ বার প্রচ্ছন্ন অনুযোগ পরিচালকের কণ্ঠে, “শুরু থেকে বলে এসেছি, আমি আর্থিক প্রতারণায় জড়িত নই। নুসরত কেন, কারও সই নকল করিনি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বাস করেনি।” আরও জানিয়েছেন, সেই সময় এ রকমও রটেছিল, তিনি নাকি বাংলা বিনোদন দুনিয়ার বহু খ্যাতনামীর প্রাপ্য টাকা দেননি। রাজর্ষি বলেছেন, “কারও কোনও কথার প্রতিবাদ সে দিন করিনি। আইনের উপরে ভরসা রেখেছিলাম। আমার হয়ে জি বাংলা মামলা দায়ের করেছিল। আইনের চোখে প্রমাণিত, আমি নির্দোষ। এই দিনটির অপেক্ষাতেই ছিলাম।”
কী বলছেন অভিযোগকারী দুই প্রযোজক অরিন্দম এবং প্রিয়াঙ্কা? জানতে, যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল অভিনেত্রী-প্রযোজকের সঙ্গে। তাঁর ফোন বন্ধ।
ছ’মাস আগে কেন প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল রাজর্ষির বিরুদ্ধে?
সেই সময় ছবির দশ দিনের শুটিং হয়ে গিয়েছিল। চার দিনের কাজ বাকি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌথভাবে ৮০ লক্ষ টাকার আর্থিক তছরুপের অভিযোগ আনেন ছবির দুই প্রযোজক। তাঁদের দাবি, নিজেকে বাঁচাতে পরিচালক নায়িকার সই-ও জাল করেছেন। আনন্দবাজার ডট কম-কে সেই সময় প্রযোজক অরিন্দম এবং প্রিয়াঙ্কা বলেছিলেন, “রাজর্ষিদা আমাদের জ়ি বাংলা এবং জ়ি টিভির সঙ্গে ছবি নিয়ে তাঁর চুক্তিপত্র দেখান। সেই চুক্তি অনুযায়ী, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ রাজর্ষিদার মোট ছ’টি ছবি কিনবেন। সেই ছ’টি ছবির অন্যতম একটি ‘ও মন ভ্রমণ’। এই ছবির মোট বাজেট ১ কোটি ৮৫ লক্ষ। ছবিমুক্তির পর ব্যবসা দেখে খরচের ৮৫ শতাংশ অর্থ জ়ি আমাদের ফেরত দেবে। খুব ভাল ব্যবসা করলে পুরো অর্থই ফেরত পাব আমরা।”
প্রিয়াঙ্কা-অরিন্দম এর পরে অর্থলগ্নিতে রাজি হয়ে যান। তাঁরা প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা নগদ দেন, বাকিটা চেকে দিতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, পরিচালক নাকি পুরো টাকা একবারে পেতে চেয়েছিলেন। প্রযোজকেরা তাতে রাজি না হয়ে ভাগে ভাগে টাকা দিতে থাকেন। এ দিকে, পরিচালকও নাকি কিছু দিন অন্তর টাকার জন্য তাড়া দিতে শুরু করেন।
এ ভাবে মোট ৮০ লক্ষ টাকা খরচের পর প্রযোজকদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পরিচালকের কাছে খরচের হিসাব জানতে চান। কিন্তু রাজর্ষি তা জানাতে রাজি হননি! শুরু হয় প্রযোজক-পরিচালক কাজিয়া।
এ প্রসঙ্গেও সোমবার নিজের বক্তব্য জানান রাজর্ষি। তাঁর কথায়, “কখনও অস্বীকার করিনি, প্রযোজকদের থেকে ৮০ লক্ষ টাকা নিয়েছি। সেই টাকা ছবি তৈরির খাতেই খরচ হয়েছে। এ বার প্রযোজকদের কাছে আর টাকা না-ও থাকতে পারে। কিংবা তাঁরা আর টাকা না-ও দিতে চাইতে পারেন। সেটা অন্য বিষয়। এ ভাবে পরিচালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারেন কি?” পরিচালক জানিয়েছেন, গত ছ’মাস ধরে তদন্ত করেছে পুলিশ। তার পরেও সই জালের এই অভিযোগের কোনও হদিশ করতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, জ়ি বাংলা চ্যানেলের লেটারহেডে যে নথি দেখিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেটিও ভুয়ো। সেটা প্রমাণ করতেই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ পরিচালকের হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। যে ছবিকে কেন্দ্র করে এত দড়ি টানাটানি তার ভবিষ্যৎ কী? রাজর্ষির কথায়, “ছবি শেষ করব। প্রযোজকদের ৮০ লক্ষ টাকাও শোধ করব। তবে ওঁরা আর এই ছবির কেউ নন। এটা ঠিক, সমস্ত অভিনেতা তাঁদের পাওনা অর্থ পাননি। কারণ, ছবির শুটিং-ও এখনও বাকি।”
পরিচালকের আশ্বাস, তিনি কোনও দিন কারও অর্থ নয়ছয় করেননি। আগামী দিনেও প্রতারণা করবেন না।