প্রয়াত অভিনেতা মুকুল দেবকে নিয়ে পরিচালক রাজা চন্দ। ছবি: সংগৃহীত।
আমার সঙ্গে মুকুল দেবের প্রথম কাজ ‘রংবাজ’। ওই ছবিতে এক দিনের জন্য মুকুলের দাদা রাহুল দেব অভিনয় করেছিলেন। পরে পোশাক নিয়ে সমস্যা হওয়ায় রাহুলই জানান, আমি যেন ওঁর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। চরিত্রের নাম ‘লাকি ভাই’। আমার সঙ্গে মুকুলের প্রথম সাক্ষাৎ সে দিন রামোজি রাও স্টুডিয়োয়। দেবের ছোটবেলা করেছিল শিশুশিল্পী আর্য। তাকে ক্যামেরাবন্দি করছি। দৃশ্যে আর্যের মা-বাবা— দু’জনেই মারা গিয়েছেন। ও চিৎকার করে কাঁদছে। সেই সময়টা দেখছি আমার ক্যামেরার ফ্রেমে কেউ একজন ঢুকে পড়েছেন! আমি চিৎকার করে ‘কে’ বলতে গিয়েছি, চোখ তুলে দেখি অপূর্ব সুন্দর এক পুরুষ এসে দাঁড়িয়েছেন। পনিটেল বাঁধা। চাবুকের মতো শরীর। ওই প্রথম আমি আর মুকুল। ক্যামেরাই আমাদের প্রথম আলাপের সাক্ষী।
দাদার জায়গায় মুকুল অভিনয় করবেন। পরের দিন থেকে শুটিং শুরু। তাই আগের দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আমি ওঁকে ‘মুকুলজি’ বলতাম। প্রথম দিন এসেই আর্যকে খুব পছন্দ হয়েছিল ওঁর। বলেছিলেন, ‘বেশ তো বাচ্চাটি! খুব ভাল অভিনয় করছে।’ মুকুলও খুব ভাল অভিনেতা ছিলেন। একটাই সমস্যা, বাংলা বলা। এখন মনে পড়ছে, মুকুল লিখে নিত ইংরেজিতে। সেটা পড়ে নিখুঁত ভাবে বলার চেষ্টা করত। সে সমস্ত খুঁত ঢেকে দিত তাঁর অভিনয়। কমার্শিয়াল ছবিতে ওঁর অভিনয় দেখার মতো ছিল।
‘রংবাজ’-এর পর মুকুলের সঙ্গে আরও দুটো ছবিতে কাজ করি। ‘বচ্চন’, ‘সুলতান: দ্য স্যাভিয়র’। তত দিনে ওঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। মুকুল একবার কথায় কথায় জানিয়েছিল, ও একমাত্র ওর দাদা রাহুলকে ভীষণ ভয় পায়। এর বাইরে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমরা কখনও কথা বলিনি। আমার অভ্যাসও নেই। এই মুকুলের সঙ্গেই আমার সামান্য মনোমালিন্য ব্যাঙ্ককে শুটিং করতে গিয়ে। তখন আমরা অনেকটা সময় ধরে কাজ করতাম। কোনও ছবি তৈরি হত ৫০ দিনে। কোনও ছবি তৈরি হতে হতে ৬৫ দিনও লেগে যেত। এক টানা কাজ করতে করতে অনেক সময়েই কাজ নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হত। সে রকমই হয়েছিল। ওখানে হেলিপ্যাডের উপরে শুটিং করছি। কাজ শেষের জন্য তাড়াহুড়ো করছি। তখন সামান্য উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। শেষে কাজ করতে করতে সে সব মিটেও গিয়েছিল।
যেহেতু দুই ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি তাই অনেকে জানতে চান, দুই ভাইয়ের মধ্যে কি অনেক ফারাক?
আমার অভিজ্ঞতা বলে, মুকুল ভীষণ মিষ্টি। ও যেমন খুব ভাল পার্শ্বঅভিনেতা, তেমনই দরকারে ওঁকে নায়কের চরিত্রেও খুবই ভাল মানাত। যদিও মুকুল চরিত্রাভিনেতা হয়েই বেশি কাজ করেছেন। রাহুল সম্পূর্ণ বিপরীত। উনি যেন খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্যই জন্মেছেন। ভীষণ রাগী, ভীষণ ক্রুর! চেহারাতেই সেটা ফুটে বেরোয়। মাত্র ৫৪-য় ফুরিয়ে গেলেন মুকুল। খুব ভাল অভিনেতাকে হারিয়ে ফেললাম আমরা। এখন বাংলা ছবি তথাকথিত কমার্শিয়াল ঘরানায় আর তৈরি হয় না। হলে মুকুল দেবকে আরও ছবিতে দেখা যেত হয়তো।