রাশিদ খানের বাড়িতে প্রথম দুর্গাপুজো, জানালেন পুত্র আরমান রাশিদ খান। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ বছর মায়ের খুব ইচ্ছা, আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হবে। আমার মায়ের ইচ্ছাতেই এর আগে বাড়িতে সরস্বতীপুজো, গণেশপুজো হয়েছে। বাবা সব সময় মায়ের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে এসেছেন। এ বার আমার সেই দায়িত্বপালনের পালা। মায়ের সঙ্গে রোজ এই নিয়ে রাত জেগে আলোচনা হচ্ছে। ঠিক করেছি, আমাদের বাড়ির ভিতরে যে মাঠ আছে সেখানেই পুজো করব। এ বছর হয়তো খুব ধুমধাম করতে পারব না। ছোট করে করার ইচ্ছা। তবে ভক্তি বা নিষ্ঠার অভাব ঘটবে না।
সে ক্ষেত্রে আমাদের পুজোয় দেবীকে অন্নভোগও দেওয়া হবে। আমরা দেবী মা-কে নৈবেদ্য হিসাবে অন্ন দেব। ঠিক যে ভাবে আমাদের বাকি দেব-দেবীকে দিয়ে থাকি।
অনেকেই হয়তো বলবেন, ভিন্ধর্মের পুজোয় বাকিরা কি উপস্থিত থাকবেন? যাঁরা আমাদের পরিবারকে চেনেন তাঁরা জানেন, রাশিদ খানের বাড়ির দরজা সব সময় সকলের জন্য খোলা। বাবার আমলেও এখানে সব ধর্মের মানুষদের আনাগোনা ছিল। এখনও সেটাই বজায় আছে। অনেকে হয়তো জানেন না, আমি নিজে হনুমানজির ভক্ত। মন্দিরের পুরোহিতমশাইয়ের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে দেবতার আরাধনা করি। আসলে, আমাদের দেশে ধর্মের সঠিক পালন কেউ করেন না। অন্ধভাবে ধর্ম মেনে চলেন। আমার যেমন অনেক আদরের নাম, ঈশ্বরের তেমনি বহু নাম। যিনি যে নামে তাঁকে ডাকবেন— এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আমি অঞ্জলি দেব, ভোগ খাব। একা আমি নয়, আমাদের বাড়ির সকলেই।
তাই ছোট থেকে দুর্গাপুজো আমারও। যত দিন বাবা ছিলেন, মা আমাকে আর বাবাকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোতেন। বাবা যত দিন ছিলেন আগে ওঁদের সঙ্গে ঠাকুর দেখেছি। তার পর বন্ধুদের সঙ্গে। আড্ডা, খাওয়াদাওয়া— বাদ যেত না এ সবও। তবে সাজগোজে আমার একটু অনীহা। ভারী সাজ করে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা যায়? ঘামে পোশাক গায়ে আটকে যায়, খুব বিচ্ছিরি ব্যাপার। তাই বরাবর টি-শার্ট, জিন্স বা ট্রাউজারে অনায়াস।
এই সাজে পৌঁছে যাই ম্যাডক্স স্কোয়ারে। পুজোয় ওখানে না গেলে যে ঠাকুর ‘পাপ’ দেবে! চারটে দিন ওখানে রূপের হাট জমজমাট। কলকাতার সমস্ত সুন্দরীর যেন লাইন পড়ে যায়! আমি ওঁদের দু’চোখ ভরে দেখি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। মনের ঘরে হানা দিতে দিই না কাউকে।