Celebrity Interview

বিতর্ক এড়াতে মিমিকে কী ভাবে সামলান আবীর! দুই তারকার বন্ধুত্বের গল্প

জুটিতে আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং মিমি চক্রবর্তী। আনন্দবাজার অনলাইনকে ক্যামেরার ও পারের গল্প শোনালেন নায়ক-নায়িকা।

Advertisement

উৎসা হাজরা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৫
Share:

(বাঁ দিকে) মিমি চক্রবর্তী। আবীর চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

ঘড়ির কাঁটা তখন প্রায় রাত ৯টা ছোঁবে। তখনও তাঁরা সাক্ষাৎকার দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক। কারণ, দুই নায়ক-নায়িকার একসঙ্গে সময় পাওয়া যে বেশ কঠিন। তাই এই একটা দিন সকলের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং মিমি চক্রবর্তী। শেষ সাক্ষাৎকারে স্বাভাবিক ভাবেই একটু ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মিমির এনার্জি তখনও ভরপুর। ক্যামেরা চলবে না বলে মনে মনে একটু খুশি হলেন আবীর। নায়ক এবং নায়িকা শুরু করলেন ‘রক্তবীজ’-এর গল্প বলা।

Advertisement

প্রশ্ন: পর পর সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত?

মিমি: সব... কেমন লাগছে, কী হচ্ছে? কিন্তু এটা তো করতেই হবে আমাদের। ছবি বিক্রি করতে গেলে এ সব তো করতেই হয়।

Advertisement

আবীর: আমি যেটা শুনে শুনে ক্লান্ত, সেটা আমি আর বলতে চাই না। আপনিও প্লিজ় সেটা জিজ্ঞেস করবেন না।

প্রশ্ন: কোনটা? মিমিকে হজম করা কঠিন, ওই প্রশ্নটা?

আবীর: উফ! সত্যিই, ওই পোলাও... আমার আর ভাল লাগছে না।

মিমি: আরে, বলো না, বলেছি বেশ করেছি।

আবীর: না না, ওটা নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন হবে না এখন এখানে।

প্রশ্ন: আপনাদের এটা একসঙ্গে প্রথম ছবি তো?

আবীর: একদমই নয়, সবাই এটা ভুল করছে। আমি মিমির প্রথম ছবি থেকে একসঙ্গে কাজ করছি। ওর প্রথম ছবি ‘বাপি বাড়ি যা’-তে ছিলাম।

মিমি: আমার প্রথম সিরিয়াল ‘গানের ওপারে’র ওয়ার্কশপে এসেছিল তো আবীরদা।

আবীর: আরে আমি ওর অনেক ছবিতে কাজ করেছি। তবে এই ‘রক্তবীজ’ ছবিতে ভাল ভাবে একসঙ্গে কাজ করলাম। নন্দিতাদি (রায়) এবং শিবুকে (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) ধন্যবাদ। আগে এক বার একটা চিত্রনাট্য আমাদের দু’জনের পছন্দ হয়েছিল, কিন্তু সেই সিনেমাটাই হয়নি। আমার মনে হয় ‘রক্তবীজ’ সঠিক ছবি আমাদের জন্য।

(বাঁ দিক থেকে) মিমি চক্রবর্তী, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায় । ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এক সাক্ষাৎকারে এক বার অঙ্কুশ (হাজরা) মজা করে বলেছিলেন, মিমির মধ্যে ঠিক মেয়েসুলভ আচরণ নেই। আপনিও কি এক মত?

আবীর: এই নারীসুলভ, পুরুষসুলভ বিষয়টা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। আর আমি মিমিকে বহু বছর আগে থেকে চিনি। শুধু কাজ নয়, জীবনের অনেক মুহূর্ত একসঙ্গে ভাগ করেছি আমরা।

মিমি: আমার কাছেও বিষয়টা এমনই। মানে আবীরদা কী বলল আমায় নিয়ে, সেগুলো নিয়ে কখনও চিন্তাই করি না।

আবীর: আমরা পরিবারের মতো। মিমি যেমন, আমি ওকে তেমন ভাবেই পছন্দ করি।

মিমি: এই অনুভূতিটা সবার জন্য হয় না।

আবীর: আমাদের একটা অন্য বন্ধুত্ব আছে। একে অপরের উপদেশ নিই। চড়াই-উতরাই আছে। অনেক সময় হয়তো জানতে পারলাম মিমি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সে সময় ওকে একা ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। তখন ফোন করে বিরক্ত করি না। কিন্তু পরে ঠিক ফোন করে সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

প্রশ্ন: মিমি আপনি কি বাইক চালাতে পারেন?

মিমি: হ্যাঁ, আমি বাইক চালাতে পারি। ‘প্রলয়’-এর সময় পরমব্রতের যে বাইকটা ছিল সেটা শিখেছিলাম। তখন যে হেতু মাঠে শিখেছিলাম তাই বিশাল আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এখানে কংক্রিটে শিখতে গিয়ে বেশ কঠিন অবস্থা হয়েছিল। আর এই ছবিতে যে বাইকটা চালিয়েছি ‘বুলেট’। সেটা খুবই ভারী। যে দিন শট দিতে গিয়েছি, বাবা, দেখি এই ছাগল চলে আসছে। সে কী অবস্থা! তার পর শিবুদা দেখি গম্ভীর ভাবে বলল ,“এত স্পিডে চালালে সিনটা নেওয়া যাবে না কিন্তু।” সেই শট যে কত বার দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: অনেকে বলছেন সংযুক্তা চরিত্রটার সঙ্গে মিমির নাকি অনেক মিল রয়েছে?

আবীর: না, আমার সেটা মনে হয় না।

মিমি: যদি সবাই বলেন, আমার শরীরী ভাষার সঙ্গে মিল আছে, হ্যাঁ, হয়তো কিছুটা মিল পাওয়া যাবে। তবে এক জন এসপির যেমন শরীরী ভাষা হওয়া উচিত, এই চরিত্রে ঠিক তেমনটাই আছে।

প্রশ্ন: কিছুটা মিল আছে বলে কি এই চরিত্রে অভিনয় করা সহজ হল?

আবীর: আমি মনে হয় বুঝতে পারছি, আপনি কী বলতে চাইছেন। আচরণগত মিলের কথা বলছেন।

‘রক্তবীজ’ ছবিতে আবীর চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

মিমি: হ্যাঁ, পুরো মিমি তো হতে পারবে না চরিত্রটা। তবে কিছুটা সহজ হয় কাজ করা।

প্রশ্ন: আবীর আপনার কি মনে হয় সংযুক্তা চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য মিমিই সঠিক?

আবীর: মিমি সেরা। শি ইজ দ্য বেস্ট।

মিমি: (এক গাল হেসে )ধন্যবাদ।

প্রশ্ন: সামনে বসে আছে বলে বলছেন না তো?

আবীর: না না। আমাদের সম্পর্কটা মোটেই তেমন নয় যে, সামনে আছে বলে ভাল বলতেই হবে।

মিমি: আমিও বিশ্বাস করি, আমি সেরা এই চরিত্রের জন্য।

প্রশ্ন: এতগুলো ছবি মুক্তি পাচ্ছে, কোনটা দেখতে যাবেন?

মিমি: না, এই উত্তর আমরা দেব না। কেন সবাই এই তুলনা করছে!

আবীর: আরে বাবা, দেখুন, বাকি ছবিতে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা সবাই আমাদেরই বন্ধুবান্ধব। আমরা তো চাই সব ছবি সবাই দেখুক। অবশ্যই চাইব আমাদের সিনেমা ‘রক্তবীজ’ বেশি দর্শক দেখুক।

মিমি: দেখুন এই তুলনা করে, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে কোনও লাভ নেই। আমাদের সব ছবিই চলা দরকার। না হলে আমরা খাব কী?

প্রশ্ন: যে হেতু দু’জনেই পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, আলাদা করে কি কোনও ডায়েট মেনে চলতে হয়েছিল?

মিমি: আমি মনে করি, খাওয়া, ঘুমের মতে ফিটনেসও সমান জরুরি।

আবীর: আমরা দু’জনেই ফিট থাকতে ভালবাসি। ওয়ার্কআউট করতে আমি এবং মিমি দু’জনেই ভালবাসি। জোর করে কেউ চাপিয়ে দেয় না বিষয়টা। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকে। এই ভাল লাগাটাই আমাদের দু’জনকে সাহায্য করেছে এই চরিত্রে অভিনয় করতে।

প্রশ্ন: আপনাদের ফাইটমাস্টার নাকি দারুণ খুশি?

মিমি: খুশি তো হতেই হবে। কারণ আমরা সেরা। (হাসির ফোয়ারা)

প্রশ্ন: আপনি সত্যিই নিজেকে সেরা মনে করেন?

মিমি: আরে, আমি যদি এটা বিশ্বাস না করি, তা হলে সাধারণ মানুষ আমায় কেন সেরা মনে করবে!

প্রশ্ন: বলিউডে নায়কদের বডি ডাবল প্রয়োজন হয়, অ্যাকশন দৃশ্যে আপনাদের সেটা প্রয়োজনই হয়নি নাকি?

মিমি: বলিউড ইজ়…

আবীর: এই তুই চুপ করবি?

মিমি: না, আমাকে বলতে...

আবীর: না মিমি, আমায় বলতে দে।

‘রক্তবীজ’ ছবির একটি দৃশ্যে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনি কি মিমিকে এ ভাবেই সামলান?

আবীর: হ্যাঁ, বড়দের তো কাজ এটাই। যাই হোক দেখুন, সারা পৃথিবী জুড়ে অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য ফাইটমাস্টার থাকে, স্টান্টম্যান থাকে। যাঁরা স্টান্টের কাজ করেন তাঁরা কখনও প্রশংসিত হন কী? কারণ তাঁদের তো সে ভাবে দেখাই যায় না, বোঝাও যায় না। তাঁদের খাটনিটা কৃতিত্ব পান অন্যরা। সেটা আমরা চাই না। আর এখানে যা দৃশ্য ছিল সেখানে আমাদের মনে হয়েছিল এগুলো নিজেরাই করতে পারব।

মিমি: আবীরদা বলতে দিচ্ছে না। দেখুন অনেকেই ভেবে নেয়, বলিউড মানেই সেরা। আঞ্চলিক মানে ততটা উন্নত নয়। কিন্তু সেই ভাবনা তো ঠিক নয়। তাই আমার সব সময় মনে হয় নিজেকে চ্যালেঞ্জ করি। সব কাজ নিজে করি।

আবীর: এখানে যে পরিকাঠামোয় কুশলীরা কাজ করেন, সেটা বাইরের কেউ ভাবতেই পারেন না।

প্রশ্ন: কিন্তু সেই তো ‘জওয়ান’, ‘পুষ্পা’ নিয়ে বেশি হইচই, খারাপ লাগে?

আবীর: যার যেটা পছন্দ, সে সেটা দেখবে। ‘পুষ্পা’ আমারও ভাল লেগেছিল।

প্রশ্ন: মিমি, আপনি তো হিন্দি ছবিও করলেন?

মিমি: হিন্দি ছবি তো বিলাসিতা। দিনে দুটো থেকে তিনটে দৃশ্যের শুট হয়। খুবই আরামে কাজ হয়।

আবীর: না না, এতটা আরামে আমি কাজ করিনি। কারণ তখন করোনা পরিস্থিতি ছিল।

প্রশ্ন: ট্রেলার দেখে তো মনে হল, ছবিতে রাজ্য বনাম কেন্দ্রের টক্কর আছে!

মিমি: ঠিক তেমনটা নয়। যে হেতু কেন্দ্র থেকে এক জন এসেছে মনে হচ্ছে, আমার জায়গায় এল কেন, সেই একটা টক্কর। আমার লোকজন দিল্লি থেকে আসা অফিসারকে স্যালুট করছে, তাই একটু তো রাগ হবেই। বস্‌ তো আমি।

আবীর: না, এখানে দু’জনের লক্ষ্য এক। এখানকার মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। বিশেষ করে যে চরিত্রে ভিক্টরদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) অভিনয় করছেন তাকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্য আমাদের দু’জনেরই। শান্তিপূর্ণ ভাবে যেন পুজোটা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেকের নিজস্ব একটা ইগো, লড়াই তো আছেই।

প্রশ্ন: অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি মিমি আপনি এক জন রাজনীতিকও। আপনার তো রাজ্য বনাম কেন্দ্রের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে...।

মিমি: (ইঙ্গিতপূর্ণ হাসিতে) আপনারা বলুন, আমি আর কী বলব। এটা নিয়ে আর কোনও কথা বলতে চাই না।

প্রশ্ন: এত যে কম কাজ করছেন আপনি, মনে হয় না দর্শক অভিনেত্রী মিমিকে ভুলে যাবে?

মিমি: আপনাদের কী এটাই মনে হয়, আমায় ভুলে যাবে সবাই?

আবীর: নাইস, নাইস, দারুণ উত্তর।

মিমি: এটা আমার খুব ভেবেচিন্তে নেওয়া সিদ্ধান্ত। আমি সব ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করে ফেলেছি। আগে মনে হত কারও জন্য কিচ্ছু ছাড়ব না। ঘুম হচ্ছে না, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি। চোখে জল দিয়ে আবার কাজ শুরু করে দিয়েছি। তখন মনে হত সব কিছু আমার। একটা সময় তো ছোটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আগে যা ছবি মুক্তি পেত সব হিট হত। কোনও ফ্লপ ছিল না। সেখান থেকে এখনও বড় তারকাদেরও ছবি চলছে না। গান দেখছেন না দর্শক। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কম কাজ করব। এমন কাজ করব যেখানে অভিনেত্রী হিসাবে আমায় ব্যবহার করা হবে, ফুলদানির মতো সাজিয়ে রাখা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন