‘আমার জীবনে আর কিছু পাওয়ার নেই’

বিতর্ক থেকে সব সময় দূরে, মা-বাবাকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতে পারেন না, জীবনে যতটুকু পেয়েছেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট। অঙ্কুশ এমনই... বিতর্ক থেকে সব সময় দূরে, মা-বাবাকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতে পারেন না, জীবনে যতটুকু পেয়েছেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট। অঙ্কুশ এমনই...

Advertisement

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:০৯
Share:

অঙ্কুশ

পুজোর ঠিক আগেই মুক্তি পাবে অঙ্কুশের নতুন ছবি। তার ডাবিং নিয়ে তিনি খুবই ব্যস্ত। এর মধ্যে ঠান্ডা লেগে শরীরটা বেশ কাহিল। তাই সকাল থেকে বাড়িতে। সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন দুপুর একটা। বাইপাস থেকে কিছুটা ভিতরে এক আধুনিক কমপ্লেক্সে অঙ্কুশের ফ্ল্যাট। দরজা খুলে অভ্যর্থনা জানালেন তাঁর বাবা। বসতে বলে ছেলেকে ঘুম থেকে ডাকার কথা বললেন অঙ্কুশের মাকে। সেই সময়টুকুর সঙ্গী হতে ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন তাঁর দিদা। বর্ধমান থেকে দিন কয়েক আগে এসেছেন। এমন সময় অঙ্কুশের মা শ্যামলীদেবী এসে বাবার কাছে জানতে চাইলেনপালং শাক রাখা হয়েছে কি না। এই সিজনে পালং শাক! আমার মুখ দেখে প্রশ্নটা বুঝতে পেরে দিদা বললেন, ‘‘নাতির জন্য বুঝলেন। ওর ডায়েটিংয়ের জন্য কত কী যে লাগে! ওর মা-ই সব করে। আমার ওখানে তো একমাস-দু’মাস অন্তরই নাতি দেখা করতে যায়। তখন আমি বলে দিই, ও সব ঢঙের খাবার কিন্তু বানিয়ে দিতে পারব না। তুমি যদি ভাত চিকেন কষা বা মাছ এ সব খাও তো ঠিক আছে। ও বলে তা-ই খাব।’’

Advertisement

দিদার সঙ্গে কথা বলতে-বলতে অঙ্কুশ এসে হাজির। চোখে তখনও আলস্য। গতকাল অনেক রাত অবধি ডাবিং চলেছে, তাই ঘুম ভাঙতে দেরি। আপনার ডায়েটিংয়ের কারণে মা তো রীতিমতো ব্যতিব্যস্ত! আড়মোড়া ভেঙে নায়ক বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ওই ডায়েট ফুডটুড থাকে। আমি করে নিতে চাইলেও, মা সেটা দেয় না।’’ অবশ্য ইন্ডাস্ট্রিতে থাকবেন, শরীর-সচেতন হবেন না, তা তো হয় না। তাই দু’ঘণ্টা অন্তর নিয়ম মেনে খাওয়া, ওয়র্কআউট। এমনকী, সেটে একটি ইনডাকশন আভেনও নিয়ে যান। সেখানে তাঁর খাবার বানিয়ে দেন সহকারী ছেলেটি। টলিউডে প্রায় বছর সাতেক ‘বয়স’ হয়ে গেল এই সুদর্শন নায়কের। পরপর মুক্তি পাচ্ছে ছবি। কিন্তু সে ভাবে মনে দাগ কাটার মতো সিনেমা কোথায়? ‘‘দেখুন, ছবির সাফল্য ভাগ্যের ব্যাপার। আমি অভিনেতা হিসেবে চেষ্টা করি যে, অ্যাট লিস্ট হল থেকে বেরিয়ে কেউ যেন না বলেন, অঙ্কুশ খারাপ অভিনয় করেছে! আর এখন তো কমার্শিয়াল কোনও ছবিই সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারছে না। এর কারণটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং অবশ্যই তার সমাধান দরকার।’’

আসলে বাংলা ছবির সমস্যাটা যে ছবি হিট বা ফ্লপ এই বিভাজনে সীমাবদ্ধ নেই, সেটা অঙ্কুশের কথা থেকে পরিষ্কার। গুণগত মানের সঙ্গে ছবির সংখ্যাটাও এ বঙ্গে খুবই গুরুত্ব রাখে। সিনেমা হলের সংখ্যা ক্রমশ যে ভাবে কমছে, তাতে যে- ক’টি টিমটিম করে জ্বলছে, তাদের বাঁচিয়ে রাখতে ছবির ফ্লো-টাও যে গুরুত্বপূর্ণ, তা উঠে এল তাঁর কথায়। সেই সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আমরা অভিনেতারা হলাম পাপেট। পরিচালকের উপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করি। ডিরেক্টর আমার কাছ থেকে কাজটা বের করে নেবেন। তাঁদের উপর আমি কোনও দিন কথা বলিনি, বলবও না।’’

Advertisement

নতুন প্রজন্মের তারকা তিনি, তাই নিজের কাজ এবং চাহিদা সম্পর্কে ফোকাসড। কিন্তু অতিরিক্ত চাহিদা বা উচ্চাশা নেই, তাই তিরিশ পার করার আগেই অবলীলায় বলেন, ‘‘অনেস্টলি বলছি আমার জীবনে আর কিছু পাওয়ার নেই।’’

মন্তব্যটা পড়ে কি আপনি বিস্মিত? বিশ্বাস করুন, আমিও!

তবে এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর যুক্তি জোরালো, ‘‘বর্ধমান থেকে যে ভাবে এসেছিলাম, তার পর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমাকে যা দিয়েছে, তাতে আমার আর কী চাওয়ার থাকতে পারে! যে ছেলেটা পুরনো একটা স্কুটারে চেপে ঘুরত, তার গ্যারেজে এখন কয়েকটা দামি গাড়ি, নিজস্ব ফ্ল্যাট। এবং আমি ব্যাক টু ব্যাক ফিল্ম করছি। ওই জীবনের পর এই লাইফস্টাইল আমার কাছে স্বপ্ন। এতে অনেকেরই মাথা ঘুরে যায়। তবে আমার সব কিছু তাড়াতাড়ি সয়ে যায়।’’

আরও পড়ুন:নাম শুনে বোঝা যায় না, হিন্দি না বাংলা ফিল্ম!

অঙ্কুশের এই মন্তব্য কারও ঔদ্ধত্য মনে হতে পারে, কারও বা আত্মবিশ্বাস। তবে তিনি নিজে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, এখনও সেই বর্ধমানের ছেলেটাই আছেন। একটু অবসর পেলেই বন্ধুদের ফোন, আড্ডা... চলতে থাকে। এখন ১৮০০ স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হলেও কলকাতায় স্ট্রাগল শুরু হয়েছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে ওয়ান বেডরুমের ফ্ল্যাট থেকে। গাড়িশালে দামি গাড়ির বাহার হলেও নির্দ্বিধায় বলেন, ‘‘এখনও আমরা পুরনো ওই জীবনে এতটাই অভ্যস্ত যে, বাবা দু’-পাঁচ টাকার জন্য দরদাম করেন। আমিও করি। শখ-আহ্লাদ পূরণ করেছি ঠিকই, তবে মেন্টালিটি এখনও ওখানেই আছে।’’

কলেজে পড়ার সময় অঙ্কুশ কলকাতায় আসেন। ফার্স্ট ইয়ারের শেষ দিকেই করে ফেলেছিলেন প্রথম ছবি ‘কেল্লা ফতে’। সেই সুযোগটুকুর জন্য ইন্ডাস্ট্রির কাছে ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ। ‘‘আমি যখন প্রথম সুযোগ পাই, তখন ইন্ডাস্ট্রিরও নতুন নায়কের প্রয়োজন ছিল। দরজায় দরজায় ঘুরতে হলেও স্প্যানটা কম ছিল,’’ মোবাইল নাড়াচাড়া করতে-করতে বললেন অঙ্কুশ।

সফল, সুদর্শন এহেন হিরোর সাক্ষাৎকার কি প্রেম বিহনে শেষ হতে পারে? হলও না। এবং তিনি এ ব্যাপারে সোজাসাপটা। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তাঁর প্রচুর প্রেম। নায়কের কথায়, সেগুলো সিরিয়াস রিলেশন ছিল না। তবে এখন আর সে স্টেজ নেই। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গভীর। ‘‘ও আমার জীবনে খুব বড় স্ট্রেংথ। বাবা-মায়ের পর যার উপর নির্ভর করতে পারি, সেটা ঐন্দ্রিলা। ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু কিছু রিলেশন এতটাই পাবলিক হয়ে গিয়েছে যে, তা রেসপেক্ট হারিয়েছে। আমি চাই না, সেটা আমাদের ক্ষেত্রে হোক। তাই আমাদের প্রেম নিয়ে আলোচনাও কম করি। ভবিষ্যতে কী হবে আমরা জানি না। কখনও যদি এ দিক-ও দিক কিছু হয়, তখন যেন সম্পর্ক রেসপেক্ট না হারায়। আসলে আমি বিতর্ক ভালবাসি না, ভীষণ নন কন্ট্রোভার্শিয়াল মানুষ।’’

সত্যিকে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কিন্তু বিতর্ক থেকে সব সময় দূরে থাকা, এটাই জেনওয়াই নায়কের দর্শন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন