জয়া। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ
প্র: কামব্যাক করার জন্য বাংলা ছবি কেন বাছলেন?
উ: ঠিক কামব্যাক নয় এটা। দক্ষিণে তো ছবি করছিলামই। অনেক আগে বাংলাতেও চার-পাঁচটা ছবি করেছি। তবে এটা ঠিক, রাজনীতির কারণে অনেক দিন হিন্দি সিনেমা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। লোকসভার চাপটা তো কম ছিল না। তখন অনেক ছবিই হাতছাড়া করেছি। তবে বাঙালিদের প্রতি আমার টান একটা আছেই।
প্র: ‘আত্মজা’র চিত্রনাট্য কেন ভাল লাগল?
উ: ইদানীং মানুষের জীবন খুব দৌড়-নির্ভর হয়ে গিয়েছে। চাকুরিরত বাবা-মায়েদের সঙ্গে সন্তানের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ‘আত্মজা’ এই সময়ে সুন্দর ফিট করে যায়। এখানে আমি মায়ের চরিত্র করছি। ছবিতে সে এক জন ডিভা। কিন্তু সেলেব্রিটি হোক বা বিজ়নেস অন্তেপ্রেনর— এক জন মা কিন্তু মা-ই। বাচ্চাকে কাছে পাওয়ার জন্য যে অনেক কিছু করতে পারে। মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করাটা আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল।
প্র: এটা কি মাতৃত্ব নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে?
উ: সে রকম না ব্যাপারটা। সুচিত্রা সেনের ‘আঁধি’ আমার বড় প্রিয় ছবি। একটা দৃশ্যে সুচিত্রার স্বামী ওঁকে ছেড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে স্বামীকে এক বার দেখার জন্য সুচিত্রার যে ব্যাকুলতা, সেটা অসম্ভব বিশ্বাসযোগ্য ছিল। আমি তখন বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, কোন উপলব্ধি থেকে সুচিত্রা ওই জিনিস পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। আমিও সে ভাবেই আবেগটাকে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি।
প্র: সত্যজিৎ রায় এক বার বলেছিলেন, পর্দায় ওঁর দেখা সেরা সুন্দরী আপনি...
উ: (হাসি) আমার এক বার সুযোগ হয়েছিল ওঁর সঙ্গে দেখা করার। দিল্লির আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে সবে শুরু করেছি। পরে আরও এক বার কথা বলার সুযোগ হয়, তখন খুব সম্ভবত একটা ছবিতে আমাকে নেওয়ার কথা ভাবছিলেনও উনি। তার পর তো অসুস্থ হয়ে পড়লেন, ওই প্রজেক্টটা হলও না।
প্র: এখন আপনার রাজনৈতিক কেরিয়ার কতটা সক্রিয়?
উ: রিটায়ার করিনি এখনও। এনটিআরের (এন টি রামা রাও) একটা ফোনে আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম। ছোটবেলা থেকে ওঁর ছবি দেখে বড় হয়েছি। হঠাৎ করে ওঁর হিরোইন হলাম, আর আমার রাজনীতিতে আসাটাও হঠাৎ করেই হল। কিন্তু এনটিআরের তখন আমাকে দরকার ছিল। অনেকে বারণও করেছিলেন। তার পর সত্যিই মুম্বইয়ে প্রযোজকদের মনে হল যে, আমি এখন থেকে বোধহয় রাজনীতিটাই করব... রাজনীতি আমাকে অনেকটা বদলেও দিয়েছিল। তার আগে আমার ঘরোয়া, শান্ত মেয়ের ইমেজ ছিল। রাজনীতিতে আসার পর লোকে আত্মবিশ্বাসী জয়া প্রদাকে দেখতে পেল।
প্র: এই বদলটা কী রকম?
উ: এখন অনেক রকম পরিস্থিতির সঙ্গে একাই মোকাবিলা করতে পারি। সমাজবাদী পার্টির কাছ থেকে ভয়ানক অপমান সহ্য করেছি একটা সময়ে। মুলায়ম সিংহ যাদব আর অখিলেশ যাদবের বিরোধের সময়ে অত কিছু না বুঝে মুলায়ম সিংহকে সাপোর্ট করেছিলাম। তাতে অখিলেশ আমাকে পার্টি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এখন আমি যে কোনও দলে যোগ দিতে পারি। কিন্তু আজম খানের মতো মানুষ যেখানে আছে, সেই গুন্ডা পার্টিতে আমি নেই।
প্র: আগে নাকি খুব মেজাজি ছিলেন?
উ: অনেকেই বলতেন। কিন্তু আমি মেজাজি নই। আই ওয়াজ় শাই। সেই কারণেই লোকে ভুল বুঝত মনে হয়।
প্র: শ্রীদেবীর সঙ্গে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েও কম চর্চা নেই...
উ: ওগুলো চর্চাই, বুঝলেন তো! আমাদের মধ্যে নাকি ভয়ানক রাইভ্যালরি ছিল। কিন্তু কেউ কখনও দেখেছে, আমরা ঝগ়়ড়া করছি বা চুলোচুলি করছি (হাসি)? একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ছিল। দু’জন সুন্দরী অভিনেত্রী, যাঁরা দু’জনেই অসম্ভব ভাল ডান্সার— তাঁদের মধ্যে তো হেলদি কম্পিটিশন থাকতেই পারে! আমার খারাপ লাগে, শ্রীদেবী বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেল। মেয়ের ডেবিউ দেখে যেতে পারল না।
প্র: একটা সময়ে আপনার বিয়ে নিয়েও কম চাপানউতোর হয়নি...
উ: ঠিকই। কিন্তু কী জানেন তো, এক জন কেরিয়ারিস্ট মহিলার ডিভোর্স হলে সেগুলো নিয়ে মুখরোচক গল্প বানাতে লোকে ভালবাসে। একটা সময় ছিল, যখন ওই হেডলাইনগুলো দেখে কান্না পেত। এখন সয়ে গিয়েছে।