দেঁতো হাসির পার্টি আমার পোষায় না

ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েন, মেনস্ট্রিম থেকে সরে যাওয়া, কেরিয়ার... জীবনের নানা আঙ্গিক নিয়ে অকপট রাহুল ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েন, মেনস্ট্রিম থেকে সরে যাওয়া, কেরিয়ার... জীবনের নানা আঙ্গিক নিয়ে অকপট রাহুল

Advertisement

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share:

রাহুল। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

টালিগঞ্জের এনটিওয়ান স্টুডিয়োর ‘স্বপ্নউড়ান’-এর ফ্লোরেই দিনের অনেকটা সময় কাটে ধারাবাহিকের লিড অ্যাক্টর রাহুলের। সাক্ষাৎকারের কথা বলায় তাই স্টুডিয়োতে আসার কথাই বললেন। তখন শ্যুটিংয়ের মাঝে ব্রেক চলছে। টি-শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার পরে, চায়ের পেয়ালা হাতে রিল্যাক্সড মুডে কথা শুরু করলেন রাহুল। ডেলিসোপ মানেই তো প্রবল ব্যস্ততা। ‘‘হ্যাঁ, তা আর বলতে! এখন তো তিন তরফের চাপ, ইন্টারনেটটাও ভীষণভাবে উঠে আসছে। আমি তিন ধরনের কাজই করতে চাই। আর ব্যস্ততা উপভোগ করছি।’’ ইদানীং ডেলিসোপে নিয়মিত হলেও ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর মতো ব্লকবাস্টার দিয়ে তাঁর কেরিয়ার শুরুর কথা কে না জানেন! কিন্তু বহু দিনই রাহুলকে সে ভাবে বাণিজ্যিক ছবিতে পাওয়া যায় না। এর উত্তরটা রাহুলের কাছে খুব পরিষ্কার। ‘‘আমি খুব বেশি ছবির অফার পাইনি। শুধু কয়েকটা ছবি করে দারিদ্র নিয়ে বেঁচে থাকার মানে নেই। তার চেয়ে ভাল ভাবে থাকার জন্য সব রকম মিডিয়ামে অনেস্ট্রি দিেয় কাজটা করে যাব। আর মেনস্ট্রিম থেকে সরে আসাটা আমার চয়েস। ছোট থেকে থিয়েটার করে বড় হয়েছি। কমার্শিয়াল ছবির হিরো হিসেবে আমি নিজেকে কনভিন্স করতে পারতাম না, তা হলে দর্শক কী ভাবে করবেন? আমি রাস্তায় নাচতে গিয়ে লজ্জিত বোধ করলে তা স্ক্রিনে বোঝা যাবে, যেটা আমার পক্ষে ঠিক নয়।’’

Advertisement

মেনস্ট্রিম থেকে সরে আসার যুক্তিটা তো বোঝা গেল। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও সত্যি, বাণিজ্যিক ছবি বিরাট সংখ্যক দর্শকের কাছে অভিনেতাকে পৌঁছে দেয়। এর ব্যাখ্যায় বললেন, ‘‘এখন মেনস্ট্রিমের সংজ্ঞাই বদলে যাচ্ছে। সৃজিতদা (মুখোপাধ্যায়), শিবুদা (মুখোপাধ্যায়) কৌশিকদাই (গঙ্গোপাধ্যায়) এখন মেনস্ট্রিম। ‘বস টু’ বা ‘চ্যাম্প’ ভাল ব্যবসা করেছে। কিন্তু তার বাইরে হিট ছবি কোথায়? সে দিক থেকে দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়া বলুন, ব্যবসায়িক লাভ বলুন, সেটা কিন্তু আরবান ফিল্মগুলোই করছে।’’

রাহুলের কথা থেকে মনে হচ্ছিল মনের গভীরে কোথাও চোরা ক্ষোভ রয়ে গিয়েছে। অনুমান সঠিক কি না, জানতে চাওয়ায় সহনশীল গলায় বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি সময় এখনও পেরিয়ে যায়নি। ক্ষোভ পুষে রাখাটা কাজের কথা নয়। যে ধরনের কাজ করতে চাই, সেটা যদি কম পেয়ে থাকি, তার পিছনে আমার দায়ও আছে। কিন্তু আমি এ রকমই। দোষ-ত্রুটি নিয়েই আমাকে গ্রহণ করতে হবে। ক্ষোভ আলটিমেটলি সব তেতো করে দেয়। নিজেকে এমন ভাবে গড়ে নিয়েছি যে, জীবনটাকে খুব পজিটিভলি দেখি।’’ সেই পজিটিভিটির ফাঁকেও উঁকি দিয়ে যায় ‘দোষত্রুটির’ ব্যাপারটা। স্পষ্টবক্তা রাহুল নিজেই তা খোলসা করলেন। ‘‘পিআর করি না। পার্টিতে যাই না। মাঝেমধ্যে ফোন তুলি না। তবু অনেক ভালবাসা পেয়েছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:ফেলুদা-র চরিত্রে অভিনয় করতে চাই

হ্যাঁ, এটা ঠিক, টালিগঞ্জের পার্টিতে রাহুলকে প্রায় দেখাই যায় না। তার মানে এ সব থেকে দূরে থাকেন তা নয়। রাহুলের কাছে পার্টি মানে ‘‘যিশুদার (সেনগুপ্ত) বাড়িতে গিয়ে বেডরুমে ঢুকে যাব। আমি, যিশুদা, ইন্দ্রাশিস, নীলাঞ্জনাদি সবাই মিলে আড্ডা হবে... দেঁতো হাসির পার্টি আমার পোষায় না।’’ স্কুলবেলার বন্ধুদের সঙ্গে এখনও তাঁর যোগাযোগ আগের মতো। হুটহাট বেরিয়ে পড়া, খাওয়াদাওয়া, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রাত জেগে আড্ডা, মশকরা... বদলায়নি কিছুই। ‘‘ওরা পাত্তা দেয় না, আমি কে! দিনের শেষে বন্ধুরা আমাকে একটা গালি দিয়েই ডাকবে।’’ পুরনো বন্ধু। বিজয়গড়ের ফ্ল্যাটে থাকা... সেলেব স্টেটাস ফাটল ধরায়নি তাঁর শিকড়ে। সম্প্রতি টালিগঞ্জে এক কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট কিনেছেন, কারণ বাতের জন্য মায়ের তিনতলায় উঠতে কষ্ট হয়...

কথার ফাঁকেই মেকআপ আর্টিস্ট চলে এলেন। খানিকক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে শ্যুটিং। সেটের বাইরে তো একটা জীবন আছে আপনার। কী করেন তখন? ‘‘সহজ অনেকটা সময় নিয়ে নেয়। আর আছে বই, সিনেমা... সহজকে নিয়ে ডিজনি ওয়র্ল্ডে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। আমি আর প্রিয়ঙ্কা মিলে প্ল্যান করেছি। তবে আগে ও ব্যাপারটা কত বড়, সেটা বুঝুক।’’ সহজকে বাংলা শেখানোর ভারও এখন তার বাবার উপর। বর্ণপরিচয় দিয়ে শুরু হয়েছে সেই পাঠ। ‘‘মুশকিল হচ্ছে, কিছুক্ষণ পরই তিনি হয় কার্টুন, নয় অন্য কোনও খেলায় চলে যান।’’

রাহুলের সঙ্গে আড্ডায় প্রিয়ঙ্কার প্রসঙ্গ আসবে না, তা হয় না। এলও। তবে সেখানে নেই তিক্ততা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাহুল এখন অনেক পরিণত, জীবনের নানা ফেজকে সমান দক্ষতায় সামলাতে পারেন। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের প্রায় বছরখানেক হল। যদি পিছন ফিরে দেখেন পুরনো সময়টা, নিজের কতটা দায় আছে বলে মনে হয়? খানিকক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন, ‘‘বিষয়টাকে ও ভাবে কোনও দিন দেখিনি। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সহজের সুন্দর শৈশব। এবং সেটা আমরা একসঙ্গে থাকলে হচ্ছিল না। সহজ আমাদের ঝগড়ায় এফেক্টেড হত। কিন্তু দেখলাম, আমরা পরস্পরের জন্য কেয়ার করি। তা হলে আমরা বন্ধু হতে পারি না কেন? আমি প্রিয়ঙ্কার জন্য খুব খুশি। নিজের ফ্ল্যাটের ইএমআই দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু একা সামলাচ্ছে। আমরা আজীবন বন্ধু থাকব।’’ রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কার বিচ্ছেদ-পরবর্তী বন্ধুত্ব এবং হালফিল মুম্বইয়ের ডিভোর্সি সেলেব দম্পতিদের দেখে মনে হয়, ডিভোর্সের সংজ্ঞা বোধ হয় বদলাচ্ছে... ‘‘তার কারণ হল বন্ধুত্ব। বিয়ের আগে আমরা তো বন্ধুই ছিলাম। মেগাতে ভাইবোনের চরিত্রে অভিনয় করতাম। প্রেম তার অনেক পরে। বিবাহিত জীবনটাও কাটিয়েছি সে ভাবে। একদিন সকালে উঠে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বারাণসী যাব বলে। খুব অদ্ভুত ছিলাম আমরা। সে রকমই থাকতে চাই।’’ স্ম়ৃতিমেদুরতা কি ছুঁয়ে গেল তাঁর স্বর?

কেরিয়ার, সম্পর্কের টানাপড়েন, সহজ, এ সবের মাঝে রাহুলের পরিচালনার শখ কি বেঁচে আছে? ‘‘বহাল তবিয়তে আছে। এখনও স্ক্রিপ্টের উপর কাজ করছি,’’ বললেন রাহুল। ইতিমধ্যে ডাক এল পরবর্তী শটের জন্য। উঠতে হবে তাঁকে। আড্ডায় ইতি টেনে ফেরার পথ ধরলাম যখন, বাইরে তখন সন্ধে নেমেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন