মিউজ়িক এখন বড়লোকের খেলা, অকপট শান

দেশব্যাপী কনসার্টের ফাঁকে কলকাতায় আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি শানদেশব্যাপী কনসার্টের ফাঁকে কলকাতায় আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি শান

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০০:১৬
Share:

প্র: আকৃতি কক্করের সঙ্গে আপনার পুজোর গানের সিডি ‘হয়তো প্রেম’ এই প্রজন্মের কাছে আদৌ পৌঁছবে?

Advertisement

উ: ফ্রি সার্ভিসে এখন আমরা এতটাই অভ্যস্ত যে, টাকা দিয়ে ডাউনলোড বা স্ট্রিমিং কোনওটাই কেউ করি না। এমপি ফোর শুনে শুনে আমাদের কানও তৈরি। তবে আমার মতে, কোনও জিনিসের উপর দাম ধার্য করলেই তার আসল গুণগ্রাহীদের বোঝা যায়। আমার কনসার্টে টিকিট না লাগলে ৪০ হাজার লোক আসবে। কিন্তু টিকিট ধার্য হলেই সেই ভিড়টা নেমে দাঁড়াবে মাত্র তিন-চার হাজারে। তবে ওই তিন-চার হাজারই আমার প্রকৃত শ্রোতা। এই সিডিও তাঁদের জন্য, যাঁরা সিডিটাকে হাতে ছুঁয়ে দেখতে চান। গান শোনেন, শুধু দেখেন না।

প্র: আপনি ইউটিউব চ্যানেলেও তো নতুন গানের ভিডিয়ো আপলোড করেন…

Advertisement

উ: ওটাই একমাত্র অপশন এখন। টিকে থাকো, নয়তো গেমের বাইরে! আমার ভিডিয়োয় যত সংখ্যক লাইক আর ভিউজ় আসে, তাতে আমি খুশি। কিন্তু অন্যদের তুলনায় হয়তো নিতান্ত কম সেটা। আবার শুনি, পেড ভিউজ়ও হয়। আসলে মিউজ়িক এখন বড়লোকের খেলা, গল্ফের মতো। নিজেই গান বানাও, ভিডিয়ো তৈরি করে আপলোড করো। আবার ভিউজ়ও কিনতে হবে! তবে আমি গল্ফার নই, আমি গায়ক (হাসি)।

প্র: মুম্বই প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিটাকে কি পঞ্জাবি র‌্যাপ গায়করা হাইজ্যাক করে নিয়েছেন?

উ: হাইজ্যাক বলব না। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির কোনও শিরদাঁড়া নেই। যখন যে ট্রেন্ড চলে আর কী! আমরা যখন শুরু করলাম, তখন হিংলিশ গানের ট্রেন্ড এল। আগের কম্পোজ়ার- সিঙ্গাররা চলে গেলেন। আমরা যারা ইউবার কুল, তারা রয়ে গেলাম (হাসি)। যাঁরা ভার্সেটাইল হতে পেরেছেন, একটু বেশি সময় টিকেছিলেন। আমিও ইন্ডিয়ান, কনটেম্পোরারি সবই গেয়েছি। তবে উঁচু গলায় চিৎকার করতে পারলাম না, তাই আর সুফিতে যাওয়া হল না। তার পর থেকেই প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে লাগল।

প্র: ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন নিয়ে মিউজ়িক কম্পোজ়ারদের সঙ্গে আলোচনা করেন?

উ: আসলে যতক্ষণ প্লেয়ার হওয়ার সুযোগ থাকে, কেউ কমেন্টেটর হতে চায় না। তাই বদল যেমনই আসুক, সকলে সেই ধারাতেই চলছেন। আমিও এক-আধ বার আতিফ (আসলাম) আর অরিজিতের (সিংহ) স্টাইলে গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি।

প্র: আপনার নিজস্ব স্টাইল আছে। ওঁদের মতো গাইবেন কেন?

উ: আমার স্টাইলটা এখন কেউ শুনছে না। আমি যখন আমার স্টাইলে গাইতাম, তখন ভাঙা গলায় বা চেরা গলায় গাইলেও লোকে সেটা শুনত। কিন্তু এখন যে টোনালিটি চলছে, তাতে আমার স্টাইল এলিয়েন শোনাবে। তাই গেমে থাকতে হলে একেবারে নেশাখোরের মতো গলা করে গাইতে হবে। যে রিয়্যালিটি শো জাজ করছি, তাতেও সকলে ওই টোনালিটিতেই গাইছে। (‘চন্না মেরেয়া’র কিছু অংশ গেয়ে শোনালেন) এই প্রজন্মের সকলের মনে হয় এটা খুব ইনটেন্স, খুব ব্যথা আছে গলার মধ্যে। এই ইমোশন পজ়িটিভ নয়। হ্যাপি সংকেও এমন ভাবে ইন্টারনালাইজ় করা হচ্ছে, মনে হচ্ছে কোথাও ব্যথা রয়েছে (তাঁর গাওয়া ‘চার কদম’ও অরিজিতের মতো করে গাইলেন)।

প্র: অরিজিৎ তো ও ভাবেই গান করেন...

উ: না, ওটা আতিফের স্টাইল। অরিজিতের নয়। অরিজিৎ যেটা করেছে, সেটা শুধু এক জন জিনিয়াস করতে পারে। ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গায়ক। কিন্তু ও নিজের শেখাটাকে সরিয়ে রেখে আতিফ হয়ে গিয়েছে। যখন আতিফ গাইতে শুরু করল, ইন্ডাস্ট্রি ওর গায়কি নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বসিত ছিল না। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আতিফের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। বেপরোয়া প্রেম, কোথায় গলা কাঁপছে, কোথায় এক্সপ্রেশনটা বোঝা যাচ্ছে না… অরিজিৎ নিশ্চয়ই আতিফকে ভাল করে স্টাডি করেছে। হ্যাটস অফ টু হিম!

প্র: এখনকার বাংলা গান শোনেন?

উ: একেবারে নয়। সময় কই? বাড়িতে স্টুডিয়ো আছে। সেখানে কর্পোরেট, এনজিওর জন্য মিউজ়িক তৈরি করছি। জিঙ্গলস করছি।

প্র: ছেলেরাও তো মিউজ়িকে খুব আগ্রহী...

উ: বড় জন ষোলো, ছোট জন তেরো। আমি সব সময়ে ওদের বলি মিউজ়িককে প্যাশন হিসেবে দেখতে। বড় জন পিয়ানো শেখে, প্রোগ্রামিং করে। ছোট জন ক্লাসিক্যাল শিখছে, গিটারও শেখে। ইন্টারন্যাশনাল মিউজ়িকে এখন বেশি গালিগালাজ। ছেলেকে বলি, এত গালি কেন শুনছ? ও বলে, গালি ছাড়া গান এখন হচ্ছে না। আমি লজ্জা পাই। ও পায় না।

প্র: আপনার সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি কী?

উ: আমার স্ত্রী রাধিকা। আমি যেখানেই যাই, জমে যাই। ও সেটা বোঝে, কিন্তু অ্যাপ্রিশিয়েট করে তা বলব না (হাসি)। আমরা মানুষ হিসেবে খুব আলাদা। তবে এনার্জি ম্যাচ করে।

প্র: আপনার সমসাময়িক দুই শিল্পী টুইটারে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাই কি আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এত সাবধানী?

উ: আমার মনে হয় না, সব বিষয়ে আমার মতামত সকলকে জানতে হবে। আমি নিজেকে অত সিরিয়াসলি নিই না।

প্র: রাজনীতিতে আসবেন?

উ: ভীষণ ইচ্ছে ছিল রাজনীতিতে আসার। মনে হতো, আমি এত ভাল একটা জীবন পেয়েছি। দেশের-দশের জন্যও কিছু করা উচিত। কিন্তু পরে বুঝেছি, আমি একেবারে অনভিজ্ঞ আর বোকা ছিলাম।

প্র: আপনার বন্ধু (বাবুল সুপ্রিয়) তো আছেন এই পেশায়…

উ: বন্ধু ভাল কাজ করছে। ওকে কাছ থেকে দেখেই তো আমার ভুলটা আরও ভাঙল (জোরে হাসি)। তবে আমি মানি, এক বার রাজনীতিতে এলে একশো শতাংশ দিতে হবে। আমি রাজনীতিতে নামছি না। বিগ বসের বাড়িতেও কোনও দিন যাব না (হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন