নচিকেতা চক্রবর্তী
প্র: এক সময় বলেছিলেন প্লেব্যাক করবেন না। এখন হাতে চোদ্দোটা ছবির কাজ। নচিকেতা চক্রবর্তী সমঝোতা করছেন?
উ: ‘এক পুরনো মসজিদে’ হিট করার পর ছবির গানের অফার আসতে থাকে। ‘পোস্ত’-তেও গাইলাম। সমঝোতার কী আছে? আমার জন্য আলাদা করে লোকে গান তৈরি করছে। আমার মনের মতো কাজ হলে কেন করব না? রেশমি মিত্রর ‘বারান্দা’, সুরজিৎ-এর ‘কমরেড’ এ ছাড়া ‘ক্যালকাটা পেজ থ্রি’,‘পাড়া টু পাড়া’...আর কত বলব!
প্র: কোনওটাই কিন্তু বড় ব্যানারের ছবি নয়…
উ: ছবির গান দিয়ে কবেই বা নচিকেতা চক্রবর্তী গায়ক হয়েছে। আজও অনুষ্ঠানে লোকে আমার নতুন গান শুনতে চায়। গান যে ব্যানারেরই হোক ইউটিউবেই তো যাবে। গান ভাল হলে লেগে যাবে। তবে নতুন ছেলেমেয়েদের প্ল্যাটফর্ম চাই, রাস্তা ঠিক পাওয়া যাবে।
প্র: রাস্তা কি ছবির গান?
উ: একেবারেই নয়। ছবিতে ফরমায়েশি গান লিখতে হয়। ‘এমন কিছু অনুভুতি যাদের গতিপ্রকৃতি, না—ফেসবুকে শেয়ার করা যায় না। মন কেবলই খোঁজে মন, সোশ্যাল মিডিয়া সর্বক্ষণ, না, পারে না হতে মনের আয়না।’ যখনই শো করি এই গান গাইতে হয়। কিন্তু গান রিলিজ করতে পারছি না। পয়সা কে দেবে?
প্র: আপনার ‘বেঁচে থাকার মানে’ নতুন অ্যালবাম আসছে তো!
উ: জুলফিকারের লেখা সুর দিয়ে গাইছি। আশা অডিও থেকে বেরোবে। অন্য রকম কাজও করছি।
প্র: কী রকম?
উ: ‘ছ মাসের মেগা’ বলে ধারাবাহিকে অভিনয় করছি। আকাশ আটের প্রথম এপিসোডের টাইটেল ট্র্যাকও আমার গাওয়া। ভিতর থেকে মনে হল, করলাম। এখন সব সময় যে গান গাইতেই হবে তা নয়। আগে ভাবতাম গান গাইলে বিশাল কিছু হবে। ধুর! লোকে গান শুনে চলে যায়। কিছু হয় না! সব কিছুতে দাগ রেখে যেতে হবে? দুঃখ হয়।
আরও পড়ুন: মিশকার নতুন প্রেম
প্র: দুঃখ হলে কি গজল গান?
উ: গজল দুঃখবিলাসের গান। তবে জানেন, মঞ্চে কেউ এই গান শুনতে চান না। দর্শকের কাছে নচিকেতা মানেই আগুনের গান। কেউ প্রেমের গানও গাইতে বলেন না! আসলে মানুষের দুঃখবোধটাই চলে গেছে। কেবল আফসোস, বাড়িটা আরও বড় হতে পারত। গাড়িটা ছোট। মানুষ প্রচুর জানে, কিন্তু শিক্ষা নেই কোনও। এটাই অবশ্য ভোগবাদী দুনিয়ার পরিণতি।
প্র: ভাবুক হয়ে যাচ্ছেন তো!
উ: গল্প লিখছি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল। এখনও পর্যন্ত এগারোটা গল্প আছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বাঙালি এই ধরনের গল্প আগে পড়েনি। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে কোনও নারী চরিত্র নেই। গল্প মানেই প্রেম আর সম্পর্কের কচকচানি নয়। ছোট গল্প। কারণ লোকে বাংলা কম পড়ে। বাঙালি সংস্কৃতি আজ বিপর্যস্ত! আমাদের তো রবীন্দ্রনাথকেও বাঁচানো দরকার!
প্র: মানে?
উ: প্রযুক্তি দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে সাজাতে হবে। নয়তো নতুন প্রজন্ম হানি সিংহ শুনবে,রবীন্দ্রসংগীত নয়।
প্র: সমীক্ষায় বলা হয়, আজও রবীন্দ্রনাথের গান শোনার দর্শক পূর্ব ভারতে বেশি!
উ: সে তো আগের প্রজন্মের নস্ট্যালজিয়া। মানে কেউ দেখেছেন ছোটবেলায় মাকে গাইতে। মা চলে যাওয়ার পর আজ তিনি ওই গানের মধ্যে মাকে পান। তাই শোনেন। কিন্তু দশ বছর বাদে? আরে গানটাকে সমকালীন করতে হবে।
প্র: রবীন্দ্রসংগীত সমকালীন নয়!
উ: আজকে লোকে এই কথাটা বললে মারবে যে, ভাবগত ভাবে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক, কিন্তু ভাষাগত ভাবে নন। রবীন্দ্রনাথের পরে ভাষা কিন্তু বদলে গেছে। আমার আ্যালবাম শুনবেন ‘দৃষ্টিকোণ’। প্রেজেন্টেশন বদলাতে হবে।
প্র: মানে নচিকেতার মতো লিখতে হবে ‘নাকি একলা চলতে হয়’…
উ: আরে আমি রবীন্দ্রনাথকে কোট করেছি। অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল অ্যালবামটা। অসম্মান তো করছি না কোথাও। তবে আধুনিক বাংলা গানের অবস্থাও খারাপ। ভাল গান লেখার, গাওয়ার লোক আছে। কিন্তু কাকে কোথায় শোনাবে? প্ল্যাটফর্ম নেই তো! ছোট ব্যবসায়ীরা আস্তে আস্তে মরে যাবে।
প্র: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সেখানে কী ভূমিকা?
উ: চেষ্টা করছে, পারবে না। পৃথিবীতে এখন একটাই শক্তি। সে যা বলবে, তাই হবে। ভারতবর্ষ গ্রিস হয়ে যাবে। দেউলিয়া হয়ে যাবে।
প্র: আর নচিকেতা? সংস্কৃতি মন্ত্রী তো হলেন না…
উ: ওটাও খাঁচা। আমি আটকে থাকতে চাই না।
প্র: কিন্তু অনেক মহিলাকে আটকে রাখেন।
উ: এ আবার কী! আমার বান্ধবী আছে। যাদের সঙ্গে সম্পর্ক হয়, থেকেও যায়। এই বয়সে নতুন কিছু হয় না। আমার বান্ধবীরা জানে আমি ডিনামাইট, টিয়াপাখি নই।
প্র: ভারতবর্ষ গ্রিস হলে নচিকেতা কী করবেন?
উ: ৪০০০০ মানুষ নিয়ে ‘আগুন পাখি’ তৈরি হচ্ছে। পাশে থাকব সকলে। রাষ্ট্র কিছু দেবে না। আমরা শুধু কর দিয়ে যাব।