‘ছবির ভালর জন্য শত্রুর কাছেও যেতে রাজি’

তিনি এ রকমই। জেদি। লেক গার্ডেন্সে নতুন ফ্ল্যাটে আড্ডার সময় উঠে এল তাঁর শেষ দু’টি ছবি নিয়ে আলোচনা, আগামী ছবি ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গতিনি এ রকমই। জেদি। লেক গার্ডেন্সে নতুন ফ্ল্যাটে আড্ডার সময় উঠে এল তাঁর শেষ দু’টি ছবি নিয়ে আলোচনা, আগামী ছবি ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ

Advertisement

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

সৃজিত

প্র: ‘এক যে ছিল রাজা’র কাজ তো জোরকদমে চলছে। উত্তমকুমারের ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ও আপনার ছবি, দুটোই ভাওয়াল সন্ন্যাসী নিয়ে!

Advertisement

উ: দুটো ছবি সম্পূর্ণ আলাদা। আমার ছবি ভাওয়াল সন্ন্যাসী কোর্ট কেস নিয়ে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আ প্রিন্সলি ইমপস্টার...’ বইটাই আমার ছবির প্রেরণা। কেসটার নানা দ্বন্দ্ব, তখন দেশের অবস্থা অন্য হলে মামলার রায়ে কী প্রভাব পড়ত... সেটাই দেখাতে চেষ্টা করেছি। জাতীয়তাবাদের বড় জায়গা ছিল ওই কেসে। তা ছাড়া ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণের সময়টাও আমাকে উদ্ধুদ্ধ করে।

প্র: বক্স অফিসের কথা মাথায় রাখলে যিশু সেনগুপ্ত কি এই ছবিতে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য?

Advertisement

উ: আমার কোনও ছবিই বিরাট বাজেটের নয়। গর্ব করে বলতে পারি, সব খরচের পরও আমার ছবি প্রোডিউসারের ঘরে প্রফিট তুলে দেয়। যিশু ভাল চরিত্রের জন্য প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। ওর মুখে অনেক রকম পরীক্ষা করা যায়। যিশুর বয়সটাও অ্যাডভান্টেজ। কারণ কমবয়সিকে বেশি বয়সি দেখানোটা সুবিধের। আর এখন তো কনটেন্ট ইজ দ্য কিং। তাই পরিচালকদের অবস্থান এখন অনেক জোরালো। ইট’স আ শিবপ্রসাদ মুখার্জী ফিল্ম অর আ কৌশিক গাঙ্গুলি অর সৃজিত মুখার্জী ফিল্ম, সেটা ম্যাটার করে। কোন অভিনেতা আছে, সেটা নয়।

প্র: স্ক্রিপ্টই যেখানে রাজা, সেখানে আপনার ‘ইয়েতি অভিযান’ ও ‘জুলফিকার’-এর চিত্রনাট্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উ: এই ছবি দুটোর কোনওটার গল্প আমার নয়। একটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের, অন্যটা উইলিয়াম শেকসপিয়ারের। গল্পের অনুপুঙ্খ ডিটেল মেনে ছবি করেছি। তাই আমার মনে হয় ক্রিটিসিজমটা গল্প নিয়ে করা উচিত, আমাকে নিয়ে নয়। আমার গল্প হলে ডিবেট বা ডিফেন্ড করতে পারতাম। এ ক্ষেত্রে ভুল নামে মামলা করা হয়েছে।

প্র: তার মানে ছবির গলদের জন্য সৃজিত দায়ী নন?

উ: গল্পের জন্য নয়, চিত্রনাট্যের জন্য ডেফিনিটলি আমি দায়ী। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করার সাহস ছিল আপনাদের, পাহাড়ে গম্বুজটা এল কী ভাবে? সেটা না করে পরিচালককে আক্রমণ করা হচ্ছে কেন?

প্র: কিন্তু ওই ঠান্ডায় কাকাবাবুর মাথায় টুপি না পরানোর সিদ্ধান্ত তো পরিচালকেরই।

উ: কাকাবাবুকে ‘মিশর রহস্য’ থেকেই লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্র হিসেবে দেখাতে চেয়েছি। সেখানে টুপি কেন, গায়ের সোয়েটারও বাকিদের চেয়ে পাতলা দিয়েছি। কারণ ওঁর শীত কম লাগে। এই প্রশ্নগুলো বিদেশি কোনও অতিমানবীয় চরিত্র নিয়ে ওঠে না। যাঁরা বলছেন ‘ইয়েতি...’ খারাপ, তাঁদের বাচ্চারা কিন্তু ছবিটা দেখে অভিভূত। আবার ইংরেজিতে পণ্ডিত অনেকেই আমাকে বলেছে, জুলফিকার বেস্ট অ্যাডাপটেশন অব শেকসপিয়ার ইন বাংলা। ছবি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবই। কনস্ট্রাকটিভ সমালোচনা করলে আলোচনা করব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে ব্লক করে দেব।

প্র: প্রশংসার আড়ালে কেউ আপনার খামতিটা ঢেকে দিতে চায়, এমন মেকি মানুষের মুখোমুখি হয়েছেন কখনও?

উ: দেখুন, প্রশংসা বা নিন্দা কোনওটাই সিরিয়াসলি নিই না। কার প্রশংসা কতটা মেকি, সেটা জানি। কেউ এখন কেন এই টুইট করছে আর ছ’মাস পর কেন অন্য টুইট করবে, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয় না।

প্র: আপনাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন আপনি কতটা নাছোড়বান্দা! তার সেরা উদাহরণ কী?

উ: ডেফিনিটলি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ‘রাজকাহিনি’। আমি বলেছিলাম, চরিত্রটা আমি যে ভাবে দেখেছি, ওকে সে ভাবে করতে হবে। ওকে অভিনয়, ডিসিপ্লিন, হোমওয়র্ক করা নিয়ে বহু কথা শুনিয়েছি। ঋতু আমার কথায় কেঁদে ফেলেছে। তার পরও খেয়াল রেখেছি, আমি যা চাইছি, সেটা যেন হয়। হাল ছাড়ার আগে অবধি ততটাই চেষ্টা করতে হবে, যাতে পরে আক্ষেপ না হয়।

প্র: জয়া আহসানের জন্য নাকি আপনি ঢাকাতেও গিয়েছিলেন?

উ: (হেসে) এটা শুনলে জয়া খুব হাসবে। আমার এত সময় নেই। তা হলে সাত বছরে তেরোটা ছবি করা সম্ভব হতো না। জয়া ব্রিলিয়ান্ট শিল্পী, মানুষও। এটা যদি কারও জন্য করা যায়, সেটা জয়া। ‘রাজকাহিনি’র আগে আমি বাংলাদেশে গিয়েছি, ওর সাহায্য নিয়েছি। চরিত্রের ভাষা রিসার্চের জন্যই আমার প্রথম ঢাকা যাওয়া। প্রচুর খাওয়া, ঘোরা... মধুর স্মৃতি।

প্র: আর প্রেম? আপনার পরবর্তী ছবিতেও তো জয়া আছেন।

উ: তার সঙ্গে আমার প্রেমের খুব একটা সম্পর্ক নেই। যেমন অঞ্জন দত্তের সঙ্গে আমার বহু বার ঝগড়া হয়েছে। এমন চরিত্র যদি আসে, যেটা অঞ্জনদা ছাড়া কেউ করতে পারবে না, আমি অঞ্জনদা’র কাছেই যাব। ছবির ভালর জন্য চরম শত্রুর কাছেও যাব। জয়া আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ। তথাকথিত প্রেম ভালবাসার মতো শব্দ দিয়ে এই সম্পর্কটাকে ধরা মুশকিল।

প্র: ঋতাভরীর সঙ্গে সম্পর্ক?

উ: মাত্র ছ’মাস তার আয়ু। আমরা দু’জনেই বিচক্ষণ। বুঝেছিলাম, একে অপরের সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমাদের প্রায়োরিটি, ভ্যালু আলাদা, সেটা প্রথমে বোঝা যায়নি।

প্র: এত বড় ফ্ল্যাটে একা থাকেন। টায়ার্ড লাগে না?

উ: আমরা সবাই একা। কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে, কখনও ভিড়ের মধ্যে।

প্র: সেটল করবেন না?

উ: না, আনসেটল করতে ইচ্ছে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন