সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়
তিনি দিল্লির বাঙালি। ওখানকার স্কুল, কলেজে পড়াশোনা। তার পর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা। মামার বাড়ি কলকাতার গোলপার্কে। বছরে দু’-এক বার এই শহরে আসেন। তবে বেশি সময়ের জন্য থাকেননি কলকাতায়। বাংলা থেকে দূরে থেকেও ভাষা ভোলেননি অভিনেত্রী সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়। প্রতিবেদকের নাম যখন অবাঙালি পিআর অন্য ভাবে উচ্চারণ করছিলেন, ঠিক করে দিলেন তিনি। মুম্বইয়ে কাজ করছেন প্রায় ৩৫ বছর। বাংলায় সে ভাবে কাজ করলেন না! ‘‘বাংলা থেকে ডাক পাইনি। মুম্বইয়ে টেলিভিশন, থিয়েটার, ছবির কাজ সব কিছু নিয়ে পাগল পাগল অবস্থা। তবে ‘মহাশয়’ নামে একটি বাংলা ছবি করেছিলাম। যেখানে মুনমুনদি (সেন) লিড আর আমি সেকেন্ড লিড। সঙ্গে তাপস পাল। একটু বোল্ড অক্ষরে লিখবেন, আমি বাংলায় কাজ করতে চাই,’’ অভিনেত্রীর একান্ত অনুরোধ।
নতুন ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণা চলি লন্ডন’-এ তিনি বুয়াজির চরিত্রে। মা-মরা কৃষ্ণা ও তার পরিবারকে ভালবাসা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন গুলকান্দ বুয়া। ‘‘পানের মধ্যে যেমন গুলকান্দ থাকে, ততটাই মিষ্টি চরিত্রটা। সে যতটা ঠিক, ততটাই বেঠিক। যতটা মজার, ততটাই গম্ভীর,’’ বলছিলেন সুস্মিতা। মানুষটা নিজেও খুব মজার। মেরিল স্ট্রিপের বড় ভক্ত। বলছিলেন, ‘‘আমি ‘আউট অব আফ্রিকা’র সংলাপ ঠিক মেরিলের মতো করেই বন্ধুকে শোনাই।’’
হালফিল হিন্দি ছবিতে তাঁকে কমেডি চরিত্রে বেশি দেখা গিয়েছে। তবে সুস্মিতা বললেন, ‘‘আমার নেগেটিভ ইমেজটা কিন্তু খুব বলিষ্ঠ। ‘কিং আঙ্কল’ ছবিতে ‘শান্তি’র চরিত্রটা রীতিমতো ছোটদের মনে ভয় ধরিয়েছিল। আমার প্রথম ধারাবাহিক ‘তারা’য় চরিত্রটা নেগেটিভ ছিল। তখন আমি প্রেগনেন্ট। একটা দৃশ্যে ছোট বাচ্চাকে উপরের দিকে ছুড়তে হবে। কিছুতেই সেটা করতে পাচ্ছিলাম না। পরিচালক জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী হয়েছে। শটটা দেওয়ার পরে মন খুলে কেঁদেছিলাম,’’ নস্ট্যালজিয়া তাঁর কণ্ঠে।
ছবির চিত্রনাট্য বাছার জন্য সুস্মিতার প্রথম শর্ত চরিত্রটার ওজন। তবে নিজেই বললেন, ‘‘টাকার জন্য অনেক বাজে বাজে কাজ করেছি। মুম্বইয়ে এত খরচ! তবে মনের মতো কাজও আছে অনেক।’’ খারাপ কাজের নাম বলবেন? ‘‘না, বাবা। ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হবে তো,’’ স্বভাবোচিত অট্টহাসি তাঁর।
সুস্মিতার মনের খোরাক থিয়েটার। ‘‘একটা আশি মিনিটের নাটক লিখেছি, ‘নারীবাঈ’। যেখানে ২৩টি চরিত্রে অভিনয় করছি। নিউ ইয়র্কে পারফর্ম করেছি। খুব ইচ্ছে, কলকাতায় দেখানোর,’’ বললেন অভিনেত্রী। আগামী মাসেই মুক্তি পাবে তাঁর উপন্যাস, ‘মি অ্যান্ড জুহি বেবি’, মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে গল্প।
স্বামী রাজা বুন্দেলখন্ডের সঙ্গে মিলে গত তিন বছর ধরে খাজুরাহোয় একটি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছেন সুস্মিতা। দুই ছেলেই পড়াশোনায় উজ্জ্বল। অভিনেত্রী বললেন, ‘‘আমি কিন্তু কখনও বসে থাকিনি। টাকার চিন্তা যে একেবারে নেই, সেটা নয়। নব্বইয়ের দশকের শেষে টেলিভিশনের জন্য অনেক ভাল কনটেন্ট প্রোডিউস করেছে আমার কোম্পানি। তবে এখন প্রযোজনার কথা ভাবা যেন হার্ট অ্যাটাকের শামিল,’’ স্মিত হাসি তাঁর কণ্ঠে।