‘আমি কোনও লবিতে নেই’

তবু তাঁর কাজ থামেনি। আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়তবু তাঁর কাজ থামেনি। আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

জয়জিৎ

হাতভর্তি আংটি, দু’কানে রিং, মুখে চাপ দাড়ি। পরদার খলনায়ক ইমেজই কি রিয়্যাল লাইফ জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই লুকের অনুপ্রেরণা? প্রশ্নটা শুনেই একগাল হাসি, ‘‘সব সময় কি এক লুক ভাল লাগে? অলংকার আমি পছন্দ করি। ছেলের নামে হাতে ট্যাটুও করেছি। বাবা বলেছিলেন, কানে দুল, লম্বা চুল আর কোটের ঝুল বড় হলেই ত্যাজ্যপুত্র করবেন। আপাতত তাই একটাতেই আটকে।’’ লুক যেমনই হোক, জয়জিতের কাজ কিন্তু থামেনি। প্রায় দু’দশক ধরে তিনি কাজ করছেন টেলিভিশনে। আর তাই গর্ব করে বলতে পারেন, ‘‘আমাদের প্রজন্মের শিল্পীদের তো মানুষ নামেই চেনেন। এখনকার প্রজন্মের ক্ষেত্রে সেটা খাটে না।’’

Advertisement

পরদায় জয়জিতের প্রথম মুখ দেখানো ১৯৯৪ সালে, নীতীশ মুখোপাধ্যায়ের ধারাবাহিক ‘হে মহাজীবন’-এ। ২০০১ থেকে পাকাপাকি ভাবে সিরিয়ালের জগতে। বাবা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ। বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন কাজের প্রতি ডেডিকেশন। এক দিনে আট শিফ্‌টেও কাজ করেছেন। কাজ শিখেছেন কিংবদন্তি পরিচালক যিশু দাশগুপ্ত, রাজা দাশগুপ্ত, মিলন রায়চৌধুরী, অনিন্দ্য সরকারের কাছে। ধারাবাহিকে প্রধান চরিত্র পাওয়ার পুরো কৃতিত্ব দেন অভিনেতা কুশল চক্রবর্তীকে। জয়জিতের মতে, টিভির স্টার কিন্তু স্ক্রিপ্ট আর গল্প। তাঁর কথায়, ‘‘ধারাবাহিকের কাজ টিমওয়র্ক। সকলের ভাল কাজের জন্যই টিআরপি বাড়ে।’’

ইদানীং জয়জিৎকে নেগেটিভ চরিত্রেই বেশি দেখা যায়। সেই প্রসঙ্গে অভিনেতা বললেন, ‘‘অনেক বছর আগে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘স্বামী’ গল্পে নেগেটিভ চরিত্র করেছিলাম। একই সঙ্গে ‘তিথির অতিথি’-র লিড, ‘সোনার হরিণ’-এ ভিলেন, আবার ‘লাবণ্যের সংসার’-এ কমেডি করেছি। ‘রাজপথ’ বলে একটি ধারাবাহিকে সাইকোপ্যাথের চরিত্রও করেছি।’’

Advertisement

জয়জিৎ কিন্তু আদ্যন্ত ফ্যামিলি ম্যান। ঘরের দেওয়ালে লার্জ ফ্রেমে বাঁধানো স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে তাঁর ছবি সেই গল্প বলে। স্ত্রী শ্রেয়া তখন যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজের ছাত্রী। ‘ক্যাম্পাস’ নামে একটি অনুষ্ঠানের জন্য সেখানে যান জয়জিৎ। ‘‘সব ছেলেমেয়েই আমাকে ঘিরে ছিল। কিন্তু দেখলাম, একটি সুন্দরী মেয়ে আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। এক অভিনেত্রী বন্ধুর সূত্রেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ হল। দেখতে দেখতে দাম্পত্যের তেরো বছর পার। লং লাস্টিং হবে মনে হচ্ছে,’’ স্বভাবোচিত সরসতা তাঁর গলায়।

স্বামী হিসেবে তিনি একশোয় আশি হলে বাবা হিসেবে কিন্তু একশোয় দুশো। জয়জিৎ-পুত্র যশোজিৎ ক্যালকাটা বয়েজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। টানা তিন বার ‘দাদাগিরি’ চ্যাম্পিয়ন। ছেলেই জয়জিতের মুভি-পার্টনার। তা সে সুপারহিরো মুভি ‘থর’ হোক বা ‘করিব করিব সিঙ্গল’। এ ছাড়াও আছে বাবা-ছেলের প্লে-স্টেশনের গেম। ‘‘প্রথম থ্রি ডি ছবি দেখেছিলাম ‘ছোটা চেতন’। ছেলে বলে, আমি তো সেভেন ডি, ইলেভন ডি দেখেছি। তুমি কি জানো ইলেভেন ডি কী?’’ হাসতে হাসতে বললেন জয়জিৎ।

জয়জিতের মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বন্ধু নেই, তবে শত্রু অনেক। কখনও তাঁর মনে হয়, জীবন জটিল হয়ে যাচ্ছে... তবে ‘বিগ বস’-এর অভিজ্ঞতা তাঁর ধৈর্য বাড়িয়েছে। সর্বোপরি তিনি আর ‘বিবাদী’ নন। জয়জিতের কথায়, ‘‘আমি কোনও লবিতে নেই। এক লবির পরিচালক আমার সঙ্গে কথা বলেও অন্য একজনকে সেই চরিত্রে নিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, মেগার জন্য আমি ডেট দিতে পারব না। তবে আদতে সেটা কারণ নয়।’’

এত বছর কাজ করেও অভিনয়ের জন্য তিনি কখনও পুরস্কার পাননি। তবে মানুষ তাঁকে ‘ভাল অভিনেতা’ হিসেবে মনে রাখুক, এটুকুই ইচ্ছে ‘টেলিভিশনের সন্তান’ জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন