কুন্দন শাহ।
ছবিটা বাজারে চলেনি তেমন। কিন্তু বক্স অফিসের কামাল ছাড়াও যে কালেদিনে ‘কাল্ট’ হয়ে ওঠা যায়, তার অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে সে।
‘জানে ভি দো ইয়ারোঁ’। ১৯৮৩ সালের ছবি, যত দিন গিয়েছে তত উজ্জ্বল হয়েছে। সেই ঔজ্জ্বল্যের রেশটুকু নিয়েই চলে গেলেন কুন্দন শাহ। মুম্বইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৯ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি।
মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি-র ‘ব্লো আপ’ থেকে অনুপ্রাণিত ‘জানে ভি’-ই কুন্দনের প্রথম ছবি। নাসিরুদ্দিন-ওম পুরী ছাড়া রবি বাসওয়ানি, সতীশ শাহ, পঙ্কজ কপূর, নীনা গুপ্ত— প্রথাগত তারকার কুন্দন বদলে ভরসা রেখেছিলেন এঁদের উপরেই। সুধীর মিশ্র আর বিধুবিনোদ চোপড়া, পরবর্তীতে কালে দু’জনেই নামী পরিচালক। ওঁরাই ‘জানে ভি’-তে সহকারী পরিচালক এবং প্রযোজনা নিয়ন্ত্রক। ছবির প্রধান চরিত্রের নামও সুধীর মিশ্র আর বিনোদ চোপড়া!
কুন্দনের আর এক পরিচালক-বন্ধু সৈয়দ মির্জা। যাঁর সঙ্গে একত্রে একটা প্রোডাকশন হাউস খুলেছিলেন কুন্দন। সেখান থেকেই আটের দশকে জাতীয় টেলিভিশনে ‘ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি’, ‘ওয়াগলে কি দুনিয়া’ বা ‘নুক্কড়’-এর মতো সাড়া জাগানো ধারাবাহিক তৈরি হল। ‘জানে ভি’-র তীব্র শ্লেষ থেকে কুন্দন তখন সরে এসেছেন মানবিক কমেডিতে। নয়ের দশকে শাহরুখ খানকে নিয়ে ‘কভি হাঁ কভি না’-র মতো জনপ্রিয় ছবিও সেই গোত্রেরই।
তবে এর পর থেকেই ছন্দ হারানো শুরু। ‘কেয়া কহেনা’ (২০০০) ভাল চললেও চেনা কুন্দনকে পাওয়া যায়নি। ‘হম তো মহব্বত করেগা’ বা ‘দিল হ্যায় তুমহারা’— কোনও দাগই কাটতে পারেনি। কুন্দনের ঘনিষ্ঠরা বলেন, প্রথম ছবিতেই আসলে কুন্দন যে উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন পরবর্তীতে সেটা ছাপিয়ে যাওয়া তাঁর নিজের পক্ষেই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ‘দ্রৌপদী তেরে অকেলি কি নহী হ্যায়, হম সব শেয়ারহোল্ডার হ্যায়’— এমন সব দৃশ্য আর সংলাপ বারবার হয় না!
ইদানীং অবশ্য কুন্দন বলতেন, আজকের দিন হলে হয়তো মহভারত নিয়ে এমন রসিকতা করাই যেত না! জানে ভি-র জাতীয় পুরস্কারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এফটিআইআই আন্দোলনের সমর্থনে। আজ তিনি প্রয়াত হওয়ার পরে অবশ্য রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী থেকে গোটা ইন্ডাস্ট্রিই শোক জানিয়েছেন। শাহরুখ খান টুইটে লিখেছেন, ‘কুন্দন যেখানেই যাবেন হাসাবেন সকলকে! শুধু আজ থেকে পৃথিবী একটু কম হাসবে!’