শপিংয়ে চোখ আটকায় স্রেফ স্ট্রাইপের দিকে?শার্ট হোক বা স্কার্ট, শাড়ি হোক বা প্যান্ট, ব্লাউজ হোক বা টপ, কুর্তি কিংবা স্কার্ফ— আপনার স্ট্রাইপ চাই-ই চাই? ওয়ার্ড্রোবে ঠাসা শুধু সরু, মোটা, লম্বা, চওড়া, সাদা-কালো-লাল-নীল নানা রকমের স্ট্রাইপই? আর একসঙ্গে শপিংয়ে গেলেই বন্ধুরা আওয়াজ দেয় ক্রমাগত?
জাস্ট ইগনোর, স্ট্রাইপ যদি হয় আপনার টাইপ, সেটাই থাকুক সগৌরবে। কারণ, দুনিয়া জোড়া ফ্যাশন ট্রেন্ডও এখন সেটাই। যে পোশাকই পরুন, বা যে অ্যাকসেসরিই সঙ্গে থাক, তাতে খানিক স্ট্রাইপ মানেই আপনি এক্কেবারে হালফিলের ফ্যাশনিস্তা।
বেশ করেছি, স্ট্রাইপ পরেছি
পঁচিশের তনয়াকে আজকাল বন্ধুরা নাম দিয়েছে কয়েদি। জেব্রাও বলে কেউ কেউ। কারণ নানা রঙের ভার্টিকাল স্ট্রাইপের শার্ট, স্কার্ট আর ট্রাউজার্স ছাড়া তাকে নাকি আর দেখাই যায় না আজকাল। হইচই হুল্লোড়ের ক্যাজুয়ালস কিংবা পার্টির হালফ্যাশনের ড্রেস, সবেতেই স্ট্রাইপ এবং স্ট্রাইপ-ই। তনয়ার অবশ্য থোড়াই কেয়ার— ‘‘কে কী বলছে পাত্তা দেবই বা কেন? আমার স্ট্রাইপ ভাল লাগে, স্মার্টও দেখায়। আমি আর অন্য কিছু পরবই না, ব্যস!’’
ইস্ট অর ওয়েস্ট, স্ট্রাইপ ইজ দ্য বেস্ট
বছর তেত্রিশের রাইয়ের চাই হরাইজন্টাল স্ট্রাইপ। সে এদেশি হোক বা বিদেশি। শার্ট-টপ-স্কার্টে তো বটেই এথনিক সাজের কুর্তি কিংবা জ্যাকেটেও চাই ঠিক ওই রকমই স্ট্রাইপ। ‘‘হরাইজনটাল স্ট্রাইপে ভাল দেখায় আমায়। তাই যে কোনও কিছুতেই পরে ফেলি। তবে হ্যাঁ, স্ট্রাইপের রংটা কিন্তু নীল হওয়া চাই,’’ বলছেন তিনি।
স্ট্রাইপ-টিজ এবং...
বাঙালি কন্যের শাড়ি ছাড়া কবেই বা চলেছে? তা তাতেই বা স্ট্রাইপ পিছিয়ে থাকবে কেন?
সাতাশের অমৃতা কিংবা আটত্রিশের শর্মি। ব্যস্ত কপোর্রেট-যাপনে একটু ছুতো পেলেই শাড়িতে মোহময়ী। সে গ্লোবাল ফ্যাশনে বানভাসি হয়েই হোক বা বিশুদ্ধ আকর্ষণে, দুই কন্যের শাড়ি-কাহিনিতেই ঢুকে পড়েছে স্ট্রাইপ। ব্লাউজের পরতে পরতে, কখনও বা শাড়ির আনাচেকানাচে— ইশারাই তো কাফি! ব্যস, একের পর এক মাথা ঘুরে যায় অফিস কিউবিকলে কিংবা পার্টির মেহফিলে।
‘‘বা রে, গ্লোবাল ফ্যাশনে না হয় এখন স্ট্রাইপের রমরমা, বাঙালির ডুরে শাড়ি তো তো সেই কবেকার! আমরা বাঙালিরা আসলে ফ্যাশন ট্রেন্ডের থেকে ঢের ঢের এগিয়ে’’ সোজা বলে দেন পঁয়ত্রিশের রোশনি।
মিশন স্ট্রাইপ-এন্ড
স্ট্রাইপ মানেই বোরিং ফর্মাল অফিস-পোশাক, সে ভাবনা তো কবেই ঝেড়ে ফেলা গিয়েছে। তাই পশ্চিমি সাজেই হোক বা খাঁটি দেশি পোশাকে, মনের সুখে পরেই ফেলুন স্ট্রাইপ। শুধু খেয়াল রাখুন, ঠিকমতো মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ যেন হয়।
ডিজাইনার অভিষেক দত্ত যেমন বলছেন, ‘‘চওড়া সলিড কালারের সঙ্গে অন্য রঙা স্ট্রাইপে কালার ব্লকিং কিংবা ফ্লোরাল বা গ্রাফিক প্রিন্টের সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করা যায় যে কোনও পোশাকেই। হরাইজনটাল স্ট্রাইপের অফশোল্ডার একটা টপ পরলেন, সঙ্গে সলিড কালারের একটা স্কার্ট, কিংবা ফ্লোরাল প্রিন্টের সালোয়ার-দোপাট্টার সঙ্গে একটা স্ট্রাইপড কুর্তা, বেশ দেখাবে। ফ্লোরাল বা গ্রাফিক প্রিন্টের শাড়ির কুঁচি বা আঁচলে স্ট্রাইপ কিংবা শাড়ির সঙ্গে হরাইজনটাল স্ট্রাইপের ব্লাউজও কিন্তু দিব্যি চলছে এখন। পোশাকে স্ট্রাইপ না চাইলে ব্যাগ, জুতো, দুল, বালা, হেয়ারব্যান্ড যে কোনও কিছুতেই স্ট্রাইপ থাকতে পারে।’’
আর ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরার কথায়, ‘‘স্ট্রাইপ ব্যাপারটা তো বরাবরই ফ্যাশনে ছিল। সব যুগেই। তবে চওড়া থেকে সরু বা সরু থেকে চওড়া আনইভেন স্ট্রাইপের ম্যাক্সি ড্রেস এখন ইন থিং। স্ট্রাইপড লেগিংসের সঙ্গে একটু লুজ ফিটের টপ, নীচের অংশে স্ট্রাইপওয়ালা পালাজো, হরাইজন্টাল স্ট্রাইপের শর্ট স্কার্ট, হাফ প্যান্ট, সামার ড্রেস, যা খুশি পরতে পারেন। স্ট্রাইপের শাড়িও দিব্যি ভাল দেখায়। প্যাস্টেল, নিয়ন, ডার্ক শেডে মাল্টি কার্লাড স্ট্রাইপস, টাই অ্যান্ড ডাই বা এমব্রয়ডারি করা স্ট্রাইপ, সবগুলোই এখন ফ্যাশনে হিট।’’
তবে হ্যাঁ, স্ট্রাইপ পরছেন ভাল কথা। নিজের ফিগারটাও যেন মাথায় থাকে। ডিজাইনাররা বলছেন, হরাইজন্টাল চওড়া স্ট্রাইপে একটু মোটা দেখাবে রোগাদের। যদিও খুব রোগাদের বেশি চওড়া স্ট্রাইপ না পরাই ভাল। আর মোটাদের একটু রোগা দেখাবে ভার্টিকাল সরু স্ট্রাইপে। সে রকমই একটু লম্বাটে দেখাতে বেছে নিতে হবে ভার্টিকাল স্ট্রাইপের স্কার্ট বা ট্রাউজার্স।
এটুকু মাথায় রাখলেই, ব্যস! তাতেই কেল্লাফতে।
আর তার পর?
যদি আমাকে জেব্রা বলো, আমি বলব, বেশ করেছো!