Federation VS Directos Conflict Updates

ফেডারেশন-পরিচালকদের মামলা খারিজ! রাজনৈতিক চাপে দায় এড়াল সরকার, তোপ দাগলেন বিচারপতি

বুধবার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে হাই কোর্ট, এমনই আশা ছিল মামলাকারী পরিচালকদের। কেন সেই আশা নিভে গেল?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:০১
Share:

কেন মামলা খারিজ হল? ফাইল চিত্র।

পুজোর আগে একরাশ হতাশা। ভেস্তে গেল ফেডারেশন বনাম ১৩ জন পরিচালকের মামলা। যে সমাধানসূত্র খুঁজতে বছরের শুরুতে রাজ্যের হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিচালকেরা, তার সুরাহা হল না। খবর, বুধবার তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে এই মামলা খারিজ করে দেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। বিচারপতির ক্ষোভ, রাজনৈতিক চাপে পড়ে দায়িত্ব এড়িয়ে গেল রাজ্য সরকার! সমস্ত বিভাগের একজন করে সদস্যও যদি না থাকেন, তা হলে সেটা কিসের কমিটি? তাঁর মতে, এই মামলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া বৃথা।

Advertisement

সোমবার মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরনো কিছু মামলা ফের আদালতে ওঠায় ফেডারেশন-পরিচালকদের মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়। ওই দিন প্রযোজক রানা সরকার একই বিষয়ে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেন। প্রযোজকের আইনজীবী আর্য ভট্টাচার্য আনন্দবাজার ডট কম-কে সে দিন জানিয়েছিলেন, নিজের বক্তব্য জানাতেই এই মামলা তাঁর। খবর, বুধবার শুরু থেকেই পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। মামলাকারী পরিচালক ও প্রযোজক রানা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমস্ত পক্ষের আইনজীবী। বিচারপতি এবং তাঁদের কথোপকথনে উঠে আসে, মীমাংসার সূত্র খুঁজতে যে নতুন কমিটি গঠনের কথা হয়েছিল সেখানে বাদী এবং বিবাদী, দু’পক্ষই ২০ জন করে সদস্যের নাম দিয়েছেন! তাঁরা হয় অভিনেতা নয়তো পরিচালক। প্রযোজক-টেকনিশিয়ান-সহ ছবির সঙ্গে যুক্ত বাকি বিভাগের কোনও প্রতিনিধিই নেই!

এই পদক্ষেপ মানতে নারাজ বিচারপতি অমৃতা সিংহ। তাঁর যুক্তি, একটি কমিটিতে সমস্ত বিভাগের প্রতিনিধি থাকা বাঞ্ছনীয়। তা না হলে সেটি কিসের কমিটি? এই প্রসঙ্গে তিনি রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে সরকারি পক্ষের আইনজীবীকেও ডাকেন। সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সচিব শান্তনু বসু কমিটি গঠন করে দিলেও সেই কমিটির সদস্যদের কথা যে সকলে শুনবেন তার কী প্রমাণ আছে? ফেডারেশন-পরিচালকদের বিবাদ মেটানোর দায়িত্ব তো রাজ্য সরকারের নয়!

Advertisement

সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গিয়েছে, বিরক্তি প্রকাশ করে এর পরেই মামলা খারিজ করে দেন বিচারপতি। জানান, কেউ সকলের স্বার্থ দেখছে না। সকলের মঙ্গল চাইছে না। কেবল ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে, যা একেবারেই কাম্য নয়। পরিচালকেরা চাইলে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে পারেন।

যে সমস্ত পরিচালক এত দিন বিচারের আশায় বুক বেঁধেছিলেন, এ বার তাঁরা কী করবেন? অভিযোগ, ফেডারেশনের বিরুদ্ধাচারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের কাজ। এ বার কি তাঁদের উপরে চাপ আরও বাড়বে? এই প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল মামলাকারী পরিচালকদের সঙ্গে। তাঁদের কেউই ফোনে সাড়া দেননি।

ফেডারেশন-পরিচালক বিরোধ দীর্ঘ দিনের। গত বছর পুজোর সময় তা নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। ২০২৪-এর শেষে তাতে সাময়িক ছেদ পড়লেও কাজিয়া যে মেটেনি তা বোঝা গেল চলতি বছরের শুরুতেই। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়-সহ একাধিক পরিচালক কাজ হারাতে থাকেন। সেই সময় পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য প্রথম একা ফেডারেশনের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ফেডারেশনের ‘একুশে আইন’-এর চাপে কাজ করতে পারছেন না তাঁরা। এর পর বিদুলাকে সমর্থন করে এগিয়ে আসেন ১৩ জন পরিচালক। এই দলে সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ খ্যাতনামী পরিচালকেরা ছিলেন।

যত বার আদালতে মামলা উঠেছে তত বার বিচারপতির সহানুভূতি এবং সমর্থন পেয়েছেন মামলাকারী পরিচালকেরা। হাই কোর্টের বিচারপতি একাধিক বার ফেডারেশন সভাপতির উদ্দেশে বার্তা পাঠিয়েছেন, পরিচালকদের স্বাধীনতায় যেন হস্তক্ষেপ না করে সংগঠন। ফলে, মামলাকারী পরিচালকদের আশা ছিল, তাঁরা হয়তো সুবিচার পাবেন। বুধবারের রায় সেই আশায় জল ঢেলেছে। এ বার তাঁরা কোন পথে হাঁটবেন, তা নির্ভর করছে সময়ের উপরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement