টিভির পর্দায় বাজিগর মেয়েরাই

বড় পর্দায় যেমনটা হয়, পুরুষ চরিত্ররা ছোট পর্দায় সে ভাবে দাপিয়ে বেড়াতে পারছে কি? কী বলছে ইন্ডাস্ট্রি? বড় পর্দায় যেমনটা হয়, পুরুষ চরিত্ররা ছোট পর্দায় সে ভাবে দাপিয়ে বেড়াতে পারছে কি? কী বলছে ইন্ডাস্ট্রি?

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

ভজগোবিন্দ

মেয়েদেরই রাজত্ব

Advertisement

বাংলা সিরিয়ালে মৌরী, বাহা, পাখি, বকুল, জয়ীদের নাম দর্শকের মুখে মুখে ফেরে। অনেক সময়ে দেখা যায়, ধারাবাহিকের নামের জায়গায় দর্শক নায়িকার নামেই শো’কে চিনছেন। বছর কয়েক আগে ‘ইষ্টিকুটুম’কে যেমন বাহা-সিরিয়াল বলা হতো, ক’দিন আগে ‘কুসুমদোলা’কেও লোকে চিনত ইমনের সিরিয়াল বলে! কিন্তু বাংলা ধারাবাহিকে এই যে জনপ্রিয়তা মেয়ে চরিত্ররা পায়, ছেলেদের ভাগ্যে কি তার সিকি ভাগও জোটে? তবে ছেলেদের কেন্দ্রে রেখে ধারাবাহিক যে বিরল, তা নয়। চলতি সময়ে ‘ভজগোবিন্দ’ বা ‘হৃদয়হরণ বি এ পাশ’-ই হাতের কাছে উদাহরণ। কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক থেকে দুটো ধারাবাহিকই ‘ফাগুন বউ’ কিংবা ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’র চেয়ে যোজন দূরে।

বাংলা সিনেমায় ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে বরাবরের মতোই পুরুষ চরিত্ররা দাপিয়ে বেড়ায়। কমার্শিয়াল বাংলা ছবিতে মেয়েরা পার্শ্বচরিত্রই। বাণিজ্যিক দিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও দেখা গিয়েছে, পুরুষকেন্দ্রিক ছবির সাফল্য বেশি। হালে অবশ্য ‘ক্রিসক্রস’-এর মতো ছবিও বাংলায় তৈরি হচ্ছে, যেখানে মেয়েরাই মূল। কিন্তু বাংলা ধারাবাহিক একটা অন্য চিত্রই দেখাচ্ছে, যেখানে মহিলাকেন্দ্রিক শোয়েরই জয়জয়কার।

Advertisement

ছেলেরা পিছিয়ে কেন?

এক বছর আগে ‘ছদ্মবেশী’ বলে একটি ধারাবাহিকে অভিনেতা রাজা গোস্বামীকে ডাব্‌ল রোলে নিয়ে একটি ধারাবাহিক তৈরি হয়। চ্যানেলের উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েদের মূল চরিত্রে রেখে যে ক’টা শো তখন চলছিল, তারা ভাবনার দিক থেকে একটা ছকে বাঁধা হয়ে যাচ্ছে বলে ছেলেদের কেন্দ্রে এনে একেঘেয়েমি ভাঙা। কিন্তু বেশি দিন চলেনি সেই শো। তার পরেই ‘জামাইরাজা’ আসে ছোট পর্দায়। কিন্তু কোনও দিনই তেমন টিআরপি টানতে পারেনি। মাঝে গল্পের ট্র্যাক বদল করেও যে খুব সুবিধে করা গিয়েছিল, তা নয়। শেষও হয়ে যায় ধারাবাহিকটি। এখন শোনা যাচ্ছে, ‘ভজগোবিন্দ’ও শেষের পথে। এর মধ্যে ‘টেক্কা রাজা বাদশা’ অবশ্য নতুন উদাহরণ। কিন্তু সেই শো-ও তেমন ভাল টিআরপি দেয় না।

জয়ী

অথচ ইন্টারেস্টিং বিষয়টা হল, মেয়েদের মূল চরিত্র করে যে শোগুলো আনা হয়, সেখানে পুরুষ চরিত্রদের ভূমিকা নেহাত কম নয়। ‘ফাগুন বউ’-এ ঐন্দ্রিলা সেনের চরিত্র অর্থাৎ মহুল যতটা জনপ্রিয়, তার তুলনায় বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের রোদ্দুরও কিছু কম নয়। কিংবা ‘প্রতিদান’-এ সন্দীপ্তা সেনের করা চরিত্রটির সঙ্গে শেখ রিজ়ওয়ান রব্বানির চরিত্রও সমান গুরুত্ব পায়। সে ক্ষেত্রে সমস্যাটা ঠিক কোথায়? দর্শকই কি তা হলে সিরিয়ালে মেয়েদের মূল চরিত্রে দেখতে চান? এবং পুরুষ চরিত্রদের লিড হিসেবে বাতিল করে দেন? উত্তর দিলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, ‘‘ধারাবাহিকগুলোর দর্শক কিন্তু মেয়েরাই। সাধারণ ভাবে ছেলেরা যে খুব বেশি এই সব ধারাবাহিক দেখে, তা নয়। ফিমেল প্রোটাগনিস্টদের সঙ্গে রিলেট করতে পারে মেয়েরাই। নিজেদের কোথাও খুঁজে পায় তারা।’’

রিলেট করেন মেয়েরাই

অনেকটা একই কথা বললেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘অন্দরমহল-এ আমার করা চরিত্র পরমেশ্বরীর মধ্যে অনেক মেয়ে নিজেদের দেখতে পেয়েছিলেন। অনেকে আমাকে পার্সোনালি বলেওছেন সেই কথা। আসলে নিজেদের আইডেন্টিটি পর্দায় দেখতে পেলে, রিলেট করার বিষয়টা আপনা থেকেই ঘটে যায়।’’ এই প্রসঙ্গেই লীনা বলছিলেন, ‘‘সমাজে মেয়েদের উপরে যে নানা রকম নিপীড়ন চলে, সেটা তো অস্বীকার করা যায় না। বাস্তবে হয়তো অনেক মেয়েই সেগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন না। কিন্তু পছন্দের সিরিয়ালে সেই একই পরিস্থিতিতে অন্য একটি মেয়ে কী ভাবে লড়ে যাচ্ছে, সেটা দেখলে তাঁরা মনোবল পান।’’ অভিনেতা রিজ়ওয়ানও বললেন সে কথা, ‘‘মেয়েদের হিরোইজ়ম ছোট পর্দার দর্শককে খুব আকর্ষণ করে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, সে রকম দুর্দান্ত পুরুষ চরিত্র লেখা হচ্ছে কি? তবে ধারাবাহিকের কনটেন্ট যদি অন্য রকম হয়, তখন কিন্তু চরিত্রের গ্রহণযোগ্যতা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বাড়ে।’’ তবে ধারাবাহিক যেহেতু বিষয়-নির্ভর, তাই তার চরিত্রদের গ্রহণযোগ্যতাও কিন্তু আপেক্ষিক। যেমন ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এর বিষয়টাই এমন যে, দর্শক টেলিভিশনের সামনে আটকে থাকবেনই। এবং ভক্তিমূলক সিরিয়ালের গ্রহণযোগ্যতায় খুব একটা হেরফের হয় না। কনীনিকাও বললেন সে কথা, ‘‘আসলে ডেলি ড্রামাগুলোয় যে কূটকচালি চলে, সেখানে দর্শকের নিজেকে খুঁজে পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু নেতাজি কিংবা সিরাজউদ্দৌলার মতো ইতিহাস-নির্ভর শো যদি আসে, সেটা হয়তো একটা নতুন ট্রেন্ড তৈরি করে দেবে। কারণ সেখানে পুরুষ চরিত্ররা ঐতিহাসিক ভাবে আইকনিক।’’ সুতরাং নারী চরিত্র বনাম পুরুষ চরিত্রের এই মন্থনে যদি ভাল কনটেন্ট আর ততোধিক ভাল চরিত্র উঠে আসে, তা হলেই যে সার্বিক মঙ্গল সে কথা বোধহয় মেনে নেবেন সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন