ফর্মুলার স্বাভাবিক মৃত্যু

অজয় দেবগণের মুখে ‘সোনার ক্যারাট আমার ক্যারেক্টারকে খারাপ করতে পারবে না’ বা বিদেশি পোশাকে ঈশা গুপ্তকে দেখে ইমরান হাসমির ‘বিদেশি বোতলে দেশি মদ’, পরিস্থিতি অনুযায়ী হাসির উপদান নিয়ে আসে।

Advertisement

অরিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:২০
Share:

ছবির একটি দৃশ্য।

বাদশাহো

Advertisement

পরিচালনা: মিলন লুথরিয়া

অভিনয়: অজয় দেবগণ, ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ, ইমরান হাসমি

Advertisement

৪.৫/১০

রসায়ন শাস্ত্রের সঙ্গে চলচ্চিত্রের এক বিস্তর ফারাক আছে। রসায়নে জিঙ্কের সঙ্গে যতবারই সালফিউরিক অ্যাসিড মেশানো হয়, ততবারই জিঙ্ক সালফেট আর হাইড্রোজেন গ্যাসের জন্ম হয়। ছবির ক্ষেত্রে এ সরলীকরণ চলবে না। ঠিকঠাক গল্প, নামী অভিনেতা, হাসির ওয়ান লাইনার থাকলেই যে ছবি দর্শকের মনে লাগবে, এমন কথা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। মিলন লুথরিয়ার ‘বাদশাহো’তে তেমন সম্ভাবনা থাকলেও ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই’ বা ‘ডার্টি পিকচার’ হল না।

‘বাদশাহো’র গল্প নন-লিনিয়ার। ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার ভারত। বাতিল হয়েছে তৎকালীন রাজা-রানির প্রিভি পার্স। আর সেই অস্থির সময়কে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে উদ্যোগী গাঁধী পরিবারের এক ছেলের চেহারার সঙ্গে অদ্ভুত মিলওয়ালা সঞ্জীব (প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়)। জোধপুরের মহারানি গীতাঞ্জলি দেবীর (ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ) পারিবারিক সম্পত্তি নিজের কোষাগারে আনতে চায় সে। মহারানিও কম যায় না। পরিকল্পনা করে বাতিল হওয়া সোনা-রুপো নিজের কব্জায় আনতে। পুরনো দেহরক্ষী ভবানীকে (অজয় দেবগণ) নিয়োগ করে সে কাজে। শুরু হয় চোর-পুলিশের খেলা। অনেক টুইস্ট পেরিয়ে সিক্যুয়েলের আশা জাগিয়ে শেষ হয় ছবি। হাঁফ ছাড়েন দর্শক।

ছবির সম্পদ বলতে সংলাপ। রজত অরোরা এ ক্ষেত্রে হতাশ করেননি। অজয় দেবগণের মুখে ‘সোনার ক্যারাট আমার ক্যারেক্টারকে খারাপ করতে পারবে না’ বা বিদেশি পোশাকে ঈশা গুপ্তকে দেখে ইমরান হাসমির ‘বিদেশি বোতলে দেশি মদ’, পরিস্থিতি অনুযায়ী হাসির উপদান নিয়ে আসে। বাকি ছবি জুড়ে অবশ্য চরিত্ররা উদ্দেশ্যহীন ভাবে শুধু ঘুরেই বেড়ায়। দশ মিনিটের মারপিটের দৃশ্যের পর আট মিনিটের আবেগ... এই ফর্মুলাতে চলতে থাকে ছবি। চলল বটে, এগোল না।

হেইস্ট বা লুঠতরাজ ঘরানার ছবি অনেক হয়েছে বলিউডে। পরিচালক সেটাকে যে এমন হাস্যকর করে তুলবেন, তা কে জানত! নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া ট্রাক ভরা সোনাদানা নিয়ে মরুভূমি পেরিয়ে আর্মি অফিসার চলেছেন দিল্লির উদ্দেশে। উন্মাদ না হলে এমন কাজ কেউ করবে কেন! চিত্রনাট্যকার অবশ্য এমন অনেক হাস্যকর উপাদান ছড়িয়ে রেখেছেন ছবি জুড়ে। যার মধ্যে অন্যতম, একটা বিশেষ রাজনৈতিক পরিবারের দিকে কাদা ছিটিয়ে কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের নিকটবর্তী হওয়ার প্রচেষ্টা।

কেন যে বোঝেন না, নিজের কিছুটা স্বার্থসিদ্ধি হলেও শিল্পের তাতে বড় ক্ষতি হয়। ‘ইন্দু সরকার’-এর পরিণতি দেখেও শিখলেন না পরিচালক! অন্যের যাত্রা মসৃণ করার জন্য শিল্পের আর কত নাক কাটা যাবে, কে জানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন