Goutam Ghose

Rabi Ghosh: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সমান অভিনয় প্রতিভা ছিল রবি ঘোষের, মৃত্যুদিনে লিখলেন গৌতম ঘোষ

‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে অভিনয়ের কথা বলতেই রবিদা বলেছিলেন, ‘গৌতম দর্শক হাসবে, কেউ কি আমার অভিনয় দেখবে?

Advertisement

গৌতম ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৪৩
Share:

রবি ঘোষের ২৫তম প্রয়াণবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে লিখলেন গৌতম ঘোষ

২০২২-এর ৪ ফেব্রুয়ারি, রবি ঘোষের মৃত্যুর ২৫ বছর। এক জন অভিনেতা ২৫ বছর ধরে ‘নেই’। বাংলা বিনোদন দুনিয়া কতটা অভাব অনুভব করছে? কতটাই বা মনে করছে তাঁকে?

Advertisement

আমি কিন্তু প্রতি পদে অভাব অনুভব করি। যখনই নতুন ছবি বানাই, মনে পড়ে রবিদার কথা। আফশোসও হয়, যদি থাকতেন! অমুক চরিত্রটি ওঁকে দিতে পারতাম। আমার তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘অন্তর্জলি যাত্রা’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পতঙ্গ’। খুব কাছ থেকে মানুষটিকে দেখেছি। অভিনেতা রবি ঘোষকেও। মানুষ হিসেবে অনবদ্য ছিলেন। শিক্ষায়, বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, সহানুভূতিশীলতায়, মননে সমৃদ্ধ এক পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। যে দিন মেজাজে থাকতেন রসিকতায় মাততেন।মনখারাপও হত। পর্দায় তিনি কৌতুকাভিনেতা তার মানেই তো সারা ক্ষণ হাসতেন এমন নয়। সব বিষয়েই অদ্ভুত সামঞ্জস্য ধরে রাখতে জানতেন।

এ বার প্রশ্ন, কেন আজও ওঁর অভাব বোধ করি? আসলে, আমার পরপর দুটো ছবিতে এক দম অন্য ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রবিদা। ‘অন্তর্জলি যাত্রা’য় ‘জ্যোতিষী’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’তে ‘আমিনুদ্দিন’। প্রথম ছবিটির পরেই দ্বিতীয় ছবির জন্য ভাবি ওঁকে। রবিদাকে বলতেই অল্প খেদ মেশানো জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘দর্শক তো আমায় দেখেই হাসবে গৌতম। এই চরিত্রে কেউ কি আমার অভিনয় দেখবে?’’ আমিও আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, ‘‘প্রথমে হয়তো হাসবে। কারণ, আপনি অসংখ্য কৌতুকাভিনয় উপহার দিয়েছেন। পরে দর্শকেরাই আগ্রহ নিয়ে নতুন রবি ঘোষকে দেখবে।’’ সেটাই হয়েছিল, ‘আমিনুদ্দিন’ হয়ে পর্দায় আসতেই দর্শক হাসতে শুরু করেছিল। রবিদা অভিনয় দিয়ে তাদের থামিয়ে দিয়েছিলেন। আমার হিন্দি ছবি ‘পতঙ্গ’-এও ছোট চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন।

Advertisement

উৎপল দত্তকে নিয়ে আমি একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলাম। তখন মিনার্ভা থিয়েটার বন্ধ ছিল। খোলার পরেই উৎপলদা বলেছিলেন, পুরনো সেট নিয়ে কিছু নাটক নতুন করে তৈরি করা হবে। অনুরোধ জানিয়েছিলেন সেগুলো ক্যামেরাবন্দি করার। উৎপলদার অনুরোধে আমরা ‘অঙ্গার’ নাটকটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম। সেই নাটকে রবিদার বিখ্যাত চরিত্র ‘সনাতন’। একটি দৃশ্যে দীর্ঘ সংলাপ ছিল তাঁর মুখে। রবিদা এক বার বইয়ে চোখ বুলিয়েই নিখুঁত শট দিলেন! আমরা হতভম্ব। কী করে এত বড় সংলাপ হুবহু মুখস্থ করলেন এত কম সময়ে? রবিদা অকপট, ‘‘কত রজনী অভিনয় করেছি। ওই নাটক, ওই চরিত্র আমার ভিতরে গাঁথা হয়ে গিয়েছে। ওকে ভুলি কী করে?’’ তা হলে রবিদা স্বাভাবিক অভিনেতা না পরিচালকের পছন্দ হতে ভালবাসতেন? অনেকেই জানেন না, অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ত হলেও রবিদা মন থেকে চাইতেন, পরিচালকেরা তাঁকে নির্দেশ দিন। ওঁকে পথ দেখান। চরিত্র বুঝিয়ে দিন। তাই ভাল পরিচালক পেলেই তাঁর কাছে দাদা নিবেদিতপ্রাণ। কত বার বলেছেন, বেশির ভাগ ছবিতে জোর করে কাতুকুতু দিয়ে হাসাতে হয়েছে। কিন্তু পরিচালক ধরিয়ে দিলে কৌতুকাভিনয়ও মানের পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়।

আরও একটি কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সমান অভিনয় প্রতিভা ছিল রবি ঘোষের। কী পর্দায়, কী মঞ্চে। ওঁরা একে অপরের সমতুল্য। এ কথা আরও একটি প্রশ্নের জন্ম দেবে। তা হলে কি বাংলা বিনোদন দুনিয়া সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছে অভিনেতার? আমার মতে, কোনও কিছুর মূল্যায়ন হয় না কোনও কালে। এটা আমার ধারণা। কারওর কাছে হয়তো হয়, কারওর কাছে হয়তো নয়। তবে সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টি নিজের জায়গায় ঠিক থেকে যায়। এ কথা রবি ঘোষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই অনেকের মতোই সুযোগ পেলে তপন সিংহের ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি। ছবিটি হিন্দিতেও তৈরি হয়েছে ‘বাবুর্চি’ নাম দিয়ে। রবিদা ওই ছবিতে অনবদ্য।

এখানেই স্রষ্টা তপন সিংহ সার্থক। সার্থক তাঁর সৃষ্টি ‘ধনঞ্জয়’ রবি ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন