গুপ্তধনের সন্ধানে: মিলিলে মিলিতে পারে অমূল্য রতন

যে ছবির নামের গায়ে ‘গুপ্তধন’ সেঁটে বসে আছে, সেই ছবির পরতে পরতে যে রহস্য-রোমাঞ্চ ঘাপটি মেরে থাকবে সে তো জানা কথাই। ঘড়া ঘড়া গুপ্তধন কোনও এক মণিকোঠায় লুকানো থাকবে, আর তুমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে তুড়ি মারতে মারতে তার সন্ধান পেয়ে যাবে, তা তো আর হয় না বাপু! হবেই বা কেন! সে তো বরং গুপ্তধনের খিল্লি!

Advertisement

রনজিৎ দে

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ২১:২৮
Share:

ছবির একটি দৃশ্যে আবির, অর্জুন।

‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ বেরিয়ে তা শেষমেশ মিলল কি না, সে তো সিনেমা বলবে! কিন্তু, সেই ‘সন্ধান’ দেখতে গিয়ে এক জন প্রমিসিং পরিচালকের দেখা মিলছে সেটা ফলাও করে বলাই যায়। ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়-এর হাতেখড়ি ছবি। প্রথম ছবিতেই ধ্রুব কিন্তু একটা আশার আলো জ্বালিয়ে দিলেন।

Advertisement

যে ছবির নামের গায়ে ‘গুপ্তধন’ সেঁটে বসে আছে, সেই ছবির পরতে পরতে যে রহস্য-রোমাঞ্চ ঘাপটি মেরে থাকবে সে তো জানা কথাই। ঘড়া ঘড়া গুপ্তধন কোনও এক মণিকোঠায় লুকানো থাকবে, আর তুমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে তুড়ি মারতে মারতে তার সন্ধান পেয়ে যাবে, তা তো আর হয় না বাপু! হবেই বা কেন! সে তো বরং গুপ্তধনের খিল্লি!

এই ছবিতেও তা নিয়ম মেনে হয়নি। গুপ্তধনের হদিস পেতে ভরপুর গল্প ফেঁদেছে ধ্রুব। হেঁয়ালি রেখেছে। মাথা ঘামিয়ে ধাঁধাঁ বানিয়েছে। রহস্যের গন্ধ বুনেছে। সমস্ত ছবি জুড়ে ‘কী হয়, কী হয়’ একটা চোরা শিরশিরানি সেঁধিয়ে দিয়েছে। গোদা বাংলায় গুপ্তধনের সন্ধান করতে গিয়ে আর পাঁচটা ছবিতে যা যা মালমশলা লাগে, তা নিক্তি মেপে ঢেলেছেন পরিচালক। তা হলে এখন সেই অব্যর্থ প্রশ্ন এসে কড়া নাড়ে, ‘এই ছবি নতুন কী দেখাল?’

Advertisement

আর ঠিক এখানেই ধ্রুবর ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ আর পাঁচটা ‘সন্ধান’ থেকে নিজেকে আলাদা সারিতে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কী ভাবে? এখানেই এই ছবির মজা। একঘেয়ে গড়পড়তা গোয়েন্দা-নিৰ্ভর তার-জাল ছিঁড়ে ধ্রুব গুপ্তধন সন্ধানের ভার তুলে দিয়েছে আমার আপনার মতো আম আদমির হাতে। বাংলা ছবির বাজারে এ যে কত বড় রিলিফ! বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা যেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সেখানে স্বয়ং মুঘল সম্রাট সুজার গুপ্তধন সন্ধান করতে নেমেছে এক ছা-পোষা ইতিহাস অধ্যাপক! আর এ ভাবেই ধ্রুব খুলে দিয়েছেন ‘দখিন দুয়ার’। এক ঝলক টাটকা বাতাসে জুড়োলাম আমরা।

অক্সফোর্ডে ইতিহাসের অধ্যাপক সুবর্ণ সেন মানে আবির চট্টোপাধ্যায় কয়েক দিনের ছুটিতে কলকাতায় আসে। আবির মানে অর্জুন চক্রবর্তী কাকা সুবর্ণকে যদিও ‘সোনাদা’ বলেই ডাকে। এক দিন এক সান্ধ আড্ডায় বৌদির (আবিরের মা) পৈতৃক বাড়ি মণিকান্তপুরে যাওয়ার প্ল্যান হয়। উঠল বাই তো কটক যাই! মণিকান্তপুরে গিয়ে কী ভাবে ইতিহাসের অধ্যাপক ‘সোনাদা’ গোয়েন্দা হয়ে উঠল, সেটা জানতে হলে সিনেমাটা দেখুন।

আরও পড়ুন: পুরনো প্রেম থেকে কী শিখলেন ইমন?

‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ছবির একটি দৃশ্য।

এই ছবির ডায়লগে, বিন্যাসে, ধাঁধাঁর জটিলতায়, অভিনয় জুড়ে আছে বুদ্ধিমত্তার ছাপ। আরও একটা জিনিস ছবির গা জুড়ে লেপ্টে রয়েছে। তা হল, বাঙালিয়ানা। আগেই বলেছি ধ্রুব বুদ্ধিমান পরিচালক। বাংলার ইতিহাস যে আজ খাবি খাচ্ছে— কী স্থাপত্যে, কী শিল্পে, তা যে আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে সেটা খুব বুদ্ধি করে সুন্দর ভাবে গল্পের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ধ্রুব।

এই ছবির আবহের দায়িত্ব নিয়েছেন বিক্রম ঘোষ। আবহ দিয়ে সমস্ত ছবি জুড়ে ‘কী হয়, কী হয়’ ভাব এবং মেজাজ দুই-ই বজায় রেখেছেন তিনি। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ গানটির মেজাজটিকে একেবারে নতুন ভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?

পড়ে থাকল অভিনয়ের কথা। আবির,অর্জুন, ইশা, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, অরিন্দম শীল, পারমিতা সকলেই সকলের মতো করে ভাল। প্রত্যেকই এ ছবির সেনাপতি।

‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ দেখতে ভাল লাগে ঠিকই, তবে একটা খুঁতেই খুঁতখুঁত করছে মনটা! ‘সোনাদা’ ইতিহাসের অধ্যাপক হলেও গোয়েন্দাগিরিতে কোনও ছা-পোষাপনা নেই! কোনও ঠোক্কর নেই! ফেলুদা, ব্যোমকেশদের মতোই যেন বড্ড পারফেক্ট ভাড়া করা দুঁদে গোয়েন্দা! ‘সোনাদা’র গল্প দেখতে দেখতে ঋতুপর্ণর ‘শুভ মহরত’-এর কথা মনে পড়ে। উল বুনতে বুনতে রাঙাপিসি সেখানে কী ভাবে একটা খুনের কিনারা করে ফেলেছিল! তবু ‘শুভ মহরত’ নিছক একটা গোয়েন্দা গল্প হয়ে থেকে যায়নি। কিন্তু সোনাদার পারফেক্ট গোয়েন্দাগিরতে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ কেবলমাত্র একটা ভাল গোয়েন্দা ছবি হিসাবেই থেকে গেল! গোয়েন্দা-নির্ভর না হয়েও গোয়েন্দার গোয়েন্দাগিরির জালে আটকে রইল!

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন