পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া
‘‘নববর্ষে কলকাতায় আসা মানে দুর্গা পুজোয় আসা।’’ স্পষ্ট বাংলায় উত্তর দিলেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। বচ্ছরকার দিন, তাই বাঙালি দর্শক যা শুনতে চাইবেন, তা-ই শোনাবেন তিনি।
মাস পয়লার কলকাতা। তাঁর বাঁশির মেঠো সুর ভেসে বেড়াবে শহুরে হাওয়ায়।
নাটক নয়, সিনেমা বা বইয়ের উৎসবও নয়। সম্পূর্ণ এক অন্য ভূমিকায় আসছেন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বললেন, ‘‘এক কালে উত্তর কলকাতায় বনেদি বাড়ির শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠান ছিল প্রবাদের মতো। ইচ্ছে ছিল, শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেই সময়কেই ফিরিয়ে আনার।’’ ঘটনা হল, এক কালে শোভাবাজার রাজবাড়ি, কাশিমবাজার রাজবাড়ি, মার্বেল প্যালেসের সাজানো জলসা ভরে যেত রাগ-রাগিণীতে। ব্রাত্যর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ‘প্রত্যয়’ গোষ্ঠীর রাজু সেন শর্মা আয়োজন করেছেন ‘দমদম ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’। কলকাতার উত্তরে শাস্ত্রীয় সংগীতের এত বড় অনুষ্ঠান আগে হয়নি বলে দাবি করছেন ব্রাত্য বসু। ১৫-১৬ এপ্রিল দমদমের রবীন্দ্রভবনে এই অনুষ্ঠানে থাকবেন কলকাতার নানা গুণী ব্যক্তিত্ব। দু’দিন ব্যাপী এই সংগীত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন বেগম পরভীন সুলতানা, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া।
ব্রাত্য বসু
বেশ কিছু দিন পর কলকাতা সফর। সেই নিয়ে ফোনেই বেশ উত্তেজিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। ‘‘পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় শো করে দেখেছি, বাঙালিদের এমনকী নতুন প্রজন্মেরও রাগ সংগীত নিয়ে প্রবল উৎসাহ। ৭০ থেকে ৮০ হাজার লোক সুর শুনতে আসে। কিন্তু কেউই ফিল্মের গানের সুর শোনাতে বলে না। খুব বেশি হলে ‘বালিকা বধূ’।’’ কলকাতার অনুষ্ঠান নিয়েও তিনি খুবই উৎসাহী। আজও বিশ্বাস করেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করার জন্য সংগীত খুব জরুরি একটা জায়গা। কলকাতা বললেই তাঁর মনে পরে রাহুল দেব বর্মণের কথা। ‘বালিকা বধূ’-র ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’ গানের প্রিলিউডে বাঁশির ধুনটা তো তিনিই বাজিয়েছিলেন। ‘‘ওই ট্যালেন্ট আর ফিরবে না,’’ আফসোস তাঁর গলায়। ফিল্ম মিউজিক বলে আজকে রেডিয়ো থেকে টেলিভিশনে যা বাজে, সেগুলো তাঁর গান বলে মনে হয় না। লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোরকুমারই তাঁর কাছে সিনেমার গানের শেষ কথা। অবশ্য কীর্তন, ভাটিয়ালির মেঠো সুরের মাদকতাও যে মানুষকে এখনও আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত পণ্ডিতজি।