ছেলে বিখ্যাত পরিচালক, বলিউডের নামী এই ফাইটমাস্টারের ভুলেই নাকি প্রাণ হারান এক অভিনেতা

‘গোলমাল’, ‘সিঙ্ঘম’, ‘সিম্বা’... অ্যাকশন সিনেমা মানেই রোহিত শেট্টি। আর রোহিত শেট্টি মানেই ভরপুর ফাইট সিকোয়েন্স আর মারকাটারি স্টান্ট সিন। অ্যাকশনের প্রতি রোহিতের এই অসম্ভব প্রেম কিন্তু এক দিনে আসেনি। অ্যাকশন তাঁর রক্তে। ফাইট সিকোয়েন্স তাঁর মজ্জায়। রোহিতের বাবা এমবি শেট্টি ছিলেন বলিউডের বিখ্যাত স্টান্টম্যান। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এমবি কোনওমতে নিজের নাম সই করতে পারতেন শুধু।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ১৪:০১
Share:
০১ ১৮

‘গোলমাল’, ‘সিঙ্ঘম’, ‘সিম্বা’... অ্যাকশন সিনেমা মানেই রোহিত শেট্টি। আর রোহিত শেট্টি মানেই ভরপুর ফাইট সিকোয়েন্স আর মারকাটারি স্টান্ট সিন। অ্যাকশনের প্রতি রোহিতের এই অসম্ভব প্রেম কিন্তু এক দিনে আসেনি। অ্যাকশন তাঁর রক্তে। ফাইট সিকোয়েন্স তাঁর মজ্জায়। রোহিতের বাবা এমবি শেট্টি ছিলেন বলিউডের বিখ্যাত স্টান্টম্যান। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এমবি কোনওমতে নিজের নাম সই করতে পারতেন শুধু।

০২ ১৮

ছেলেমেয়েদের রেজাল্টে ‘লাল দাগ’ যে আসলে ‘ফেল’ তা-ও বুঝতেন না তিনি। একসময় রেস্তরাঁয় বাসন মেজে পেট চালানো এমবি কী করে জায়গা করে নিলেন বলিউডে, আবার কী করেই এক সামান্য ভুলে বলিউড তাঁকে পথে বসিয়ে দিয়েছিল এক মুহূর্তে, সেই ইতিহাসই দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

Advertisement
০৩ ১৮

১৯৩১ সালে মেঙ্গালুরুতে জন্ম এমবি-র। তাঁর পুরো নাম মুদ্দু বাবু শেট্টি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি একেবারেই আগ্রহ ছিল না এমবি’র। এ দিকে ঘরেও পয়সা বাড়ন্ত। চিন্তিত বাবা-মা বাধ্য হয়েই তাঁকে পাঠিয়ে দেন মুম্বইয়ে। উদ্দেশ্য একটাই, ছেলেকে মানুষ করতে হবে। তাঁর বয়স তখন মাত্র নয় বছর।

০৪ ১৮

বাবা-মা ভেবেছিলেন মুম্বই শহরের অলিগলিতে ধাক্কা খেতে খেতে ছেলের যেই পেটে টান পড়বে, আপসেই খাবারের খোঁজে কাজ খুঁজতে শুরু করবে সে। হলও তাই। মুম্বইয়ের কটন গ্রিন অঞ্চলে টাটার এক ক্যান্টিনে কাজ পান এমবি। কাজ বলতে বাসন মাজা এবং খাবার এগিয়ে দেওয়া। পরিবর্তে সামান্য কিছু টাকা আর দু’বেলা খাবার।

০৫ ১৮

ছোট্ট এমবি তাতেই খুশি ছিলেন। আর কিছু না হোক, দু’বেলা খাবার তো মিলছে। এ দিকে দিন যত এগোতে থাকে তাঁর দৈহিক চেহারার পরিবর্তন হতে থাকে। নরম তুলতুলে এমবি হয়ে উঠতে থাকেন বলিষ্ঠ, পেশীবহুল যুবক। চওড়া ছাতি,  প্রশস্থ কাঁধ... এমবি খানিক শখেই ভর্তি হন বক্সিং ক্লাসে। আর সেখানেই তিনি নজরে পড়েন বিখ্যাত জিমন্যাস্ট কেএন মন্ডনের।

০৬ ১৮

মন্ডন ঠিক করেন, এই ছেলেটিকে নিজের কাছে রেখে প্রশিক্ষণ দেবেন। শুরু হয় এমবি’র বক্সিং কোচিং। বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও ক্রমশ অংশ নিতে থাকেন তিনি। যেখানে যেতেন সেখান থেকেই আনতেন পুরস্কার। যদিও এই সময়তেও ক্যান্টিনের কাজটা কিন্তু তিনি ছাড়েননি। প্রতি মাসে হাতে পেতেন ৭৫ টাকা।

০৭ ১৮

ও দিকে বক্সিংয়েও এমবি’র খ্যাতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছিল। ঠিক এমন সময়েই তাঁর এক বক্সিং ম্যাচ দেখতে আসেন পরিচালক ভগবান দাদা। তাঁর খেলা দেখে ভগবান দাদা এতটাই সন্তুষ্ট হন যে পরের দিনই তাঁর স্টুডিয়োতে একটি ছোট ফাইট সিকোয়েন্স করতে ডাকেন এমবিকে। ওই একটি সিনের জন্য এমবি পেয়েছিলেন দুশো টাকা।

০৮ ১৮

যে এমবি সারা মাস এক নাগাড়ে পরিশ্রম করে মাত্র ৭৫টাকা আয় করতেন, ক’ঘণ্টার ওই সিনে তার দ্বিগুণেরও বেশি টাকা আয় করে এমবি ঠিক করে নেন, এ বার থেকে তাঁর লক্ষ্য বলিউড। কিন্তু শুধু বক্সিং দিয়েই তো আর বলিউডে কাজ পাওয়া যায় না, তাই স্টান্ট ডিরেক্টর আজিমভাইয়ের কাছে এমবি শিখতে শুরু করেন ঘোড়ায় চড়া। মার্শাল আর্টেও প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি।

০৯ ১৮

পঞ্চাশের দশকে প্রদীপ কুমার, প্রেমনাথের মতো হিরোদের বডি ডাবলের কাজ শুরু করতেন তিনি। এমবি’র ভাগ্য খোলে ১৯৫৭ সালে ছবি ‘মুনিমজি’-র হাত ধরে। অভিনেতা প্রাণ এমবি’র কাজ দেখে পরিচালক সুবোধ মুখোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেন বলি ডাবল নয় এমবিকে ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ দেওয়া হোক।

১০ ১৮

বাস্তবেও তাই হয়। চোখের সামনে সাফল্যের দরজা খুলে যায় এমবি’র সামনে। শুধু কি ফাইট ডিরেক্টর? এম বি আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেতা হিসেবেও। কখনও ভিলেনের ডান হাত, আবার কখনও বা নিজেই ভিলেন... এমবি’র তখন তুঙ্গে বৃহস্পতি। পর্দায় তাঁকে দেখে ভয় পেত ছোটরা, তাঁর পরিচালিত স্টান্ট সিন চাক্ষুষ করে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত যুবারা।

১১ ১৮

ঠিক এই সময়েই তাঁর কাছে বিশ্বজিৎ এবং মালা সিন্‌হা অভিনীত ‘নাইট ইন লন্ডন’ ছবিতে অভিনয় করার অফার আসে। শর্ত একটাই। ন্যাড়া হতে হবে তাঁকে। আবার ওই সময়েই শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ ছবিতেও অভিনয় করছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে আবার লুক অন্য। দুই ছবিতে দুই লুকের চক্করে কী করবেন বুঝতে না পেরে ন্যাড়াই হয়ে যান তিনি। আশ্চর্য ভাবে দুই ছবিতেই তাঁর এই লুক মানিয়ে যায়।

১২ ১৮

‘নাইট ইন লন্ডন’ হিট হয়নি। তবে ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ চুড়ান্ত হিট হয়। পরিচিতি পায় তাঁর চরিত্রও। ইন্ডাস্ট্রির কাছে তাঁর নতুন নাম হয় ‘গাঞ্জা শেট্টি’। হিন্দিতে গাঞ্জা মানে ন্যাড়া। আর ইমেজ ধরে রাখার জন্য বেশ কয়েক বছর আর চুলই গজাতে দেননি এমবি। একটা সময় এমনও গিয়েছে, তিন শিফটে কাজ করেছেন এমবি। অভিনেতাদের প্রায়শই বলতেন, তোমাদের তো বয়স হবে, গ্ল্যামার চলে যাবে, ইন্ডাস্ট্রিও তোমাদের ভুলে যাবে। আর আমি আজ থেকে ৩৫ বছর বাদেও তোমাদের ছেলেদের ফাইট সিন কম্পোজ করে যাব।

১৩ ১৮

‘দিওয়ার’, ‘ত্রিশুল’, ‘আরাধনা’, ‘সীতা অউর গীতা’... একের পর এক হিট ছবিতে ফাইট ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। সব যখন ভাল চলছিল, ঠিক এই সময়েই এমবি’র জীবনে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর ঘটনা।

১৪ ১৮

সাল ১৯৮০। পরিচালক ব্রিজ পরিচালনা করছে ‘বম্বে ৪০৫ মাইলস’। রয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। ফাইট মাস্টার এমডি। একটা দৃশ্যে পেট্রল বোমা ফাটাছে, দেখানো হচ্ছিল। সব ঠিক ছিল, হঠাৎই নির্ধারিত সময়ের আগে বেকায়দায় ফেটে যায় বোমাটি। শত্রুঘ্ন-র বডি ডাবল করছিলেন মনসুর নামে এক জুনিয়র আর্টিস্ট। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

১৫ ১৮

গোটা ঘটনা রাতারাতি নাড়িয়ে দেয় এমবি’কে। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তাঁর টাইমিংয়ের ভুলেই প্রাণ হারিয়েছে ছেলেটি। ক্রমাগত নিজেকে দোষ দিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন, ঘটনার দিন নাকি নেশাগ্রস্ত ছিলেন এমবি।

১৬ ১৮

ওই ঘটনার পর থেকেই অবসাদে, কষ্টে, গ্লানিতে ডুবে যেতে থাকেন তিনি। শুরু করেন অস্বাভাবিক মদ্যপান। ক্রমে কাজ কমে আসতে থাকে তাঁর। একসময় বিশাল বিশাল বলিউড পার্টি থ্রো করা এমবি কার্যত পথে বসে যান। ক্রমশ ফুরিয়ে যেতে থাকে তাঁর কেরিয়ার।

১৭ ১৮

এমবি বিয়ে করেছিলেন দু’বার। তাঁর প্রথম স্ত্রী বিনোদিনী শেট্টি এক জন কত্থক নৃত্যশিল্পী। আর দ্বিতীয় স্ত্রী রত্না বলিউডের এক জন জুনিয়র আর্টিস্ট। এমবি’র খারাপ সময়ে বিনোদিনী এগিয়ে এসে তাঁর হাত ধরেন। নাচ শিখিয়ে খরচ চালাতে থাকেন সংসারের। তাঁর প্রথম পক্ষে চার সন্তান রয়েছে, আর দ্বিতীয় পক্ষে একটি। পরিচালক রোহিত শেট্টি তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান।

১৮ ১৮

১৯৮২ সালে মারা যান এমবি। তাঁর শেষযাত্রায় পরিচালক ব্রিজ ছাড়া আর কেউ আসেননি। পড়াশোনা জানতেন না বলে বড় বড় পার্টি দিয়ে স্টারদের টেক্কা দিতে চাইতেন এমবি, সে কথা নিজেও বলেছেন বহু বার। নিজেকে নিয়ে বেশ গর্ব ছিল তাঁর। অথচ তাঁর শেষযাত্রায় সঙ্গী হলেন না কেউ-ই। প্রায় একাই পৃথিবীকে, বলিউডকে নিঃশব্দে বিদায় জানালেন ‘গাঞ্জা শেট্টি, দ্য ফাইটমাস্টার’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement