ব্যতিক্রমী ভাবনায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
সময়টা সত্তরের দশক। সন্তু মুখোপাধ্যায় তখন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার চর্চিত নাম। তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’ কিংবা তপন সিংহের ‘রাজা’ বা ‘হারমোনিয়াম’। অভিনয়জীবনের শুরু থেকেই জনপ্রিয় তিনি। অথচ, সে সময়েও মুখোপাধ্যায় পরিবার ‘স্টারডম’-এ ভেসে যায়নি।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতে, তাঁর আমলেও সেই ছবি বদলায়নি।
বাবার বলে যাওয়া কথা, “স্টুডিয়োটাই আমার অফিস”— মানেন তিনিও। তাই বোন অজপা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিব্যি রিকশায় চড়ে এ দিক-সে দিক যেতে পারেন। কদাচিৎ ‘লোকে চিনে ফেলবে’— এই ভাবনা যদি মাথায় ভরও করে, স্বস্তিকার হুঁশ ফেরে বোনের কথায়। সপাট বলেন, “কেন রে? তুই কে রে? কেউ চিনবে না। চল তো, বেশি বাড়াবাড়ি করিস না! খুব বড় হিরোইন হয়ে গিয়েছিস যেন!”
দিন দুই আগে বোনের সঙ্গে ফের রিকশায় চড়েছিলেন তিনি। রিকশাচালক যথারীতি চিনে ফেলেছিলেন তাঁকে। নানা রকম গল্প করতে করতে পথ পেরিয়েছেন তাঁরা। তখনই স্বস্তিকার মনে পড়েছে অতীতের কথা, যা তিনি ভাগ করে নিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে।
সন্তু মুখোপাধ্যায় যেমন জনপ্রিয়তাকে আমল দিতেন না, তাঁর স্ত্রী গোপা মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন একই রকম। সাধারণ গৃহবধূর মতোই যাপিত জীবন তাঁর। ‘তারকা’ তকমা বা খ্যাতনামী নামক ‘ব্যাগেজ’ বহন না করার পাঠ তখন থেকেই নিয়েছিলেন স্বস্তিকা। তাই তিনি আর তাঁর বোন টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করলেও আলাদা করে ‘ডানা’ গজায়নি, মত অভিনেত্রীর। ইদানীং স্বস্তিকার যেমন মনে হয়, “রিল বানানোর এই দশ সেকেন্ডের দুনিয়ায় সবাই ফেমাস। মরলে ক’জন মনে রাখবে, ভাল কাজ কী রেখে যেতে পারব, অবলা বাচ্চাগুলোর জন্য কী করে যেতে পারলাম— তাতেই হয়তো বিচার হবে।”
তাই করোনা অতিমারির আগে হোক বা পরে, সুযোগ পেলে স্বস্তিকা এখনও রিকশা চড়েন। “সাধারণ জীবনযাপনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার”, এই ভাবনা থেকেই। এ ভাবেই বুঝি করোনাকালের আগের আর পরের সময়ের মধ্যে সেতুবন্ধ ঘটানোর চেষ্টা। সেই সময় যেমন তাঁকে চিনতে পেরে রিকশাচালক গল্প জুড়তেন, “ও দিদি, তুমি বই করো না? তোমার এটা দেখেছি, সেটা দেখেছি… না না, পয়সা লাগবে না, ইত্যাদি!”
তখন কেউ চিনতে পারলে অনেক কথা বলতেন। যেমন, কোন সিনেমা কেমন লাগল, তাঁদের বাড়ির লোকেদের কোন ছবি ভাল লেগেছে। দেশের গ্রামের রিকশা হলে কোন বই (ছবি) এসেছে, এই নিয়ে গল্পে মাততেন। রুপোলি পর্দার নক্ষত্রেরা যেন অধরা মাধুরী। আর এখন? পরিচিতি আকাশছোঁয়া। কিন্তু ওই ‘সেলফি’ তোলা ছাড়া আর কোনও কথা নেই। উপলব্ধি স্বস্তিকার। “সব নক্ষত্রই এখন হাতের মুঠোয়, ফোনের স্ক্রিনে বন্দি।”
অভিনেত্রীর বোনের যদিও এ ব্যাপারে কোনও ভ্রুক্ষেপই থাকত না, নির্বিকার ভাবে রাস্তা দেখতেন। আজও তা-ই!
কেবল ছোট্ট একটি পরিবর্তন। অজপা এ বার আর রিকশায় ওঠার সময় মুখের উপর বলে বসেননি, “তোকে কে চিনবে!” কেবল দিদির মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে বলেছেন, “উবর নিবি নাকি?’’ ‘‘তোকে কেউ চিনবে না দিদি— এটা আর বলল না, এই অনেক ভাগ্যি!”