এই সব ছবিই সংরক্ষণের চিন্তা।
কোনও দিন ‘চাওয়া পাওয়া’ তো কোনও দিন ‘নীল আকাশের নীচে’। কোনও দিন ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ তো কোনও দিন ‘উত্তরফাল্গুনী’।
ফেসবুক পেজে চলছে প্রচার। শিরোনাম, ১০০টি বাংলা ছবি যা বাঁচানো দরকার। ‘১০০ বেঙ্গলি ফিল্মস দ্যাট মাস্ট বি সেভড’। শুধু অনলাইন আহ্বান নয়, এ আসলে বাংলা ছবির সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রস্তুতি। মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র সংরক্ষণবিদ শিবেন্দ্র সিংহ দুঙ্গারপুর তার হোতা।
নভেম্বর মাসে কলকাতায় চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কর্মশালার সঙ্গেই শুরু হতে চলেছে সেলুলয়েডে ১০০টি বাংলা ছবির পুনরুজ্জীবনের কাজ। শিবেন্দ্র তার জন্য এখন নিয়মিত কলকাতায় আসা-যাওয়া করছেন, প্রযোজক ও স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কথা চলছে রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সঙ্গেও। শিবেন্দ্রর বক্তব্য, ওই কর্মশালায় যোগ দিচ্ছে রাজ্য চলচ্চিত্র আর্কাইভ। ছবিগুলো সংরক্ষণের কাজ যাতে এখানেই করা যায়, সে দিকে লক্ষ্য রেখে এগোনো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ১০০টি ছবির সংরক্ষণ প্রকল্পেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা নিয়ে ইতিবাচক কথা হয়েছে বলে শিবেন্দ্রর দাবি।
কোন ১০০টি ছবি সংরক্ষণের জন্য বাছা হবে? শিবেন্দ্র এবং তাঁর সংস্থা ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন একটা তালিকা তৈরি করছে, সেটাই তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এ বার এর মধ্যে কোন কোন ছবি সেলুলয়েডে পাওয়া যাবে, কোনগুলোর স্বত্বাধিকারীদের কাছ থেকে অনুমতি মিলবে, সেটা ক্রমে পরিষ্কার হবে। আপাতত ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নিয়ে চূড়ান্ত কথা হয়েছে। অন্য কয়েকটি ছবি নিয়ে ছায়াবাণী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চলছে। শিবেন্দ্র আশা করছেন, নভেম্বরের আগেই প্রাথমিক ১০টি ছবির তালিকা প্রকাশ করা যাবে।
আরও পড়ুন: পার্নো এ বার সাংবাদিক, সৌজন্যে ‘চুপকথা’
পুণের জাতীয় আর্কাইভের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে শিবেন্দ্র অসরকারি উদ্যোগে সেলুলয়েড ছবি সংরক্ষণের কাজ করছেন। মার্টিন স্করসেসে-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে উদয়শঙ্করের ‘কল্পনা’র রেস্টোরেশন করেছেন তাঁরা। স্করসেসের সংস্থা ইতিমধ্যে অপু ত্রয়ী-সহ সত্যজিৎ রায়ের বেশ কিছু ছবি সংরক্ষণের কাজ করেছে। ১০০টি বাংলা ছবি বাঁচানোর ভাবনাও শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগেই। অধুনা প্রয়াত ফিল্ম সংরক্ষণবিদ পি কে নায়ার এবং পরিচালক শ্যাম বেনেগাল শিবেন্দ্রর সঙ্গে মিলে প্রাথমিক একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন। বছর চারেক আগে শিবেন্দ্র সেই স্বপ্নের কথা ঘোষণা করেন কলকাতায়। তার পরে তালিকায় অনেক যোগবিয়োগ হয়েছে। ইতিমধ্যে শিল্পী সংসদের সভাপতি হিসেবে শিবেন্দ্রর সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সংসদের হাতে থাকা উত্তমকুমার অভিনীত ছবি তো বটেই, তার বাইরেও সামগ্রিক ভাবেই বাংলা ছবির পুনর্জীবন দেওয়ার কাজে পাশে থাকতে চান তিনি। ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘কত ছবি তো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের বাঁচানোর জন্য এমন কাজ সব সময় স্বাগত।’’