বাগুইআটির মেয়ে অর্পিতা মণ্ডল। ছোটবেলা থেকেই যা করবেন মনে করেন, তা করেই ছাড়েন। ক্লাস ওয়ানে সল্টলেকের বিডি স্কুলে ভর্তি হন। আর ঠিক করেন যে, টুয়েলভ পর্যন্ত সেই স্কুলেই পড়বেন। এমনই জেদ যে, মাধ্যমিকের পর অন্য কোনও স্কুলের ফর্মও তোলেননি। বিডিতে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলেন। পরে অবশ্য সে ইচ্ছে পূরণও হয়। তার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন।
স্কুলজীবন থেকে নাচ-গানের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল তাঁর। অর্পিতা জানালেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমি ভরতনাট্যম, ক্লাসিক্যাল ও ওয়েস্টার্ন নাচ শিখেছি। মাধ্যমিকের সময় শুধু বন্ধ ছিল নাচ। গানও গাইতাম স্কুলের অনুষ্ঠানে। নাচ-গান করতে করতেই শিল্পের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতাম। তখন থেকেই ভিতরে ভিতরে ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। যখন ক্লাস টুয়েলভে পড়ি, তখন আমার এক দিদির বন্ধু মারফত সুযোগটা পাই।
‘কিরণমালা’য় একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও সাঁইবাবার বোন লক্ষ্মীর চরিত্রে অভিনয় করার সময়েই তিনি নজরে পড়েন এবং ‘জগজ্জননী মা সারদা’ ধারাবাহিকে সারদাদেবীর চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পান। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাঁকে ছাড়তে হয়েছে অনেক কিছু। অর্পিতা বললেন, ‘‘প্রায় আড়াই বছর ধরে ভুরু প্লাক করিনি, চুলের স্টাইলও বদলাতে পারিনি। আমার সবচেয়ে দুর্বলতা ছিল নখ বাড়ানো। ক্লাস এইট থেকেই আমার সুন্দর, লম্বা নখ। আর আমি বিভিন্ন রঙের নেলপলিশ লাগাতে খুব ভালবাসতাম। এক একটা নখে এক এক রঙের। কিন্তু গত চার বছর ধরে নেলপলিশ তো বাদই দিলাম, নখও কেটে ছোট রাখতে হচ্ছে।’’
এই চরিত্রের জন্য যেমন অনেক কিছু বাদ পড়েছে তাঁর জীবন থেকে, তেমন পেয়েছেনও অনেক কিছু। দুটো অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন অর্পিতা, ‘‘এক বার আট মাসের এক গর্ভবতী মহিলা আমার কাছে এসে আমার হাতটা নিয়ে তার পেটে ধরে বললেন, ‘মা, বলো আমার সন্তান ভাল থাকবে। ছেলে হোক বা মেয়ে, তোমার দেওয়া নাম রাখব। তুমি দুটো নাম বলে দাও।’ আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। নাম রাখা তো সম্ভব হয়নি, কিন্তু তাঁকে সাহস জুগিয়েছিলাম। আর এক বার শিলিগুড়িতে এক মহিলা এসেছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। তখন আমি ‘মা সারদা’র কস্টিউম ছেড়ে জিন্স পরে নিয়েছি। কিন্তু তবুও তিনি আমায় দেখে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘পোশাক বদলালেই কি মায়ের মন পাল্টে যায়?’ আজও কথাগুলো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়।’’
মা সারদার চরিত্রে এত সফল হয়েও মাটির কাছাকাছিই থাকতে চান অর্পিতা। এখনও স্কুলের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাদের ট্রিট দেওয়ার জন্য তিনি নিজে প্রস্তুত। বন্ধুরাই এখনও দেখা করার সময় পায়নি, অর্পিতা জানালেন অবলীলায়।