‘গুলজার সাব রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কাজ করলেন, সেখানে আমি গাইলাম। শ্রেয়া গাইল...এ যে কী পাওয়া!’
‘কান্না চেপে রাখা মরশুমে
বৃষ্টি দেয় শুধু আসকারা
এখানে ভালবাসা শীতঘুম
দু’চোখে পরে আছে মাসকারা...’
বৃষ্টিভেজা মেঘ কুয়াশায় তিনি গাইছেন ‘কুয়াশা’র গান।
না, কোনও শানদার মেহফিল নয়। মন খুলে রাজা চৌধুরীর সুরে আর রাজীব চক্রবর্তীর কথায় শান বেসিক গানের সিঙ্গলস্-এ নিজেকে উজাড় করে দিলেন।
কিন্তু কেন বেসিক গানের সিঙ্গলস্?
‘‘বিট আর দ্রুত ছন্দের যুগে আমার মনে হয় মানুষ মেলোডি খুঁজছে। আমি সেই জায়গাটা থেকে ‘কুয়াশা’গানটা রেকর্ড করলাম,’’ ফ্লোরিডা থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন শান।
পাঁচ বছর বয়সে নার্সারি রাইম রেকর্ড করা থেকে আজকের গানের জগতের দুনিয়া...ইন্ডাস্ট্রির কথা উঠতেই সোজা বললেন, ‘‘এক সময়ে প্রচুর প্লে ব্যাক করেছি। এখন নিজের গান, নতুন ভাবনা নিয়ে, শো নিয়ে আছি।এমন গান গাইতে চাই যেটা শুনে অন্তত মানুষের মনে হবে না, এই গানটাও এক ধরনের আগের গানের মতোই। আজকাল তো একটা গানের সঙ্গে আর একটা গান আলাদা করা যায় না!’’
আশা অডিয়ো থেকে প্রকাশিত ‘কুয়াশা’গানটা শুনে অনেকেই বলছেন যেন পুরনো মেলোডিতে চলে যাওয়া যায়...
প্রশ্নটা আটকে বললেন শান, ‘‘এটাই এখন মুশকিল! মানুষ অন্যরকম কিছু মেলোডি শুনলেই বলছে নস্ট্যালজিক! পঞ্চমদা বা সলিলদার মতো...‘কুয়াশা’কিন্তু তেমন নয়। ‘কুয়াশা’পুরোপুরি আজকের গান।’’
আরও পড়ুন, যারা খুনের হুমকি দেয় তারা কেউ লেখা পড়ে না!
আসলে শিল্পের প্রেক্ষিতে, সৃষ্টির অভিনবত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। গুলজারের সঙ্গে শান্তনু মৈত্রের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথের কথা আর সুর নিয়ে কাজ করেছেন। ‘‘গুলজার সাব রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কাজ করলেন, সেখানে আমি গাইলাম। শ্রেয়া গাইল...এ যে কী পাওয়া! অথচ বাজারে হয়তো এই অ্যালবামের সাঙ্ঘাতিক কোনও বিক্রি হল না,’’যোগ করলেন শান।
আশা অডিয়ো থেকে আকৃতি কক্করের সঙ্গে জয় সরকারের সুরে তাঁদের পুজোয় ডুয়েট গান আসছে।
কথা বলতে বলতে মনে হয় আপনি নিজের ব্যাপারে যেমন স্বচ্ছ, ঠিক তেমনই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বাস্তব জায়গা, ব্যর্থতার জায়গাগুলো কী অনায়সে প্রকাশ করছেন!‘‘অবশ্যই আমার ভিডিও ভাইরাল না হলে আমি বলব হয়নি। শ্রোতাদের বোকা বানাতে চাইলে আমি মিথ্যেবাদী হয়ে যাব,’’সাফ জবাব দিলেন শান।
আশা অডিয়ো থেকে আকৃতি কক্করের সঙ্গে জয় সরকারের সুরে তাঁদের পুজোয় ডুয়েট গান আসছে। সে প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘‘খুব ভাল কাজ হয়েছে। জয় (সরকার) দারুণ মিউজিশিয়ান।’’
তিনি জানেন আজকের ইন্ডাস্ট্রি লাইক আর ভিউ-এর ওপর চলে। ‘‘একটা পঞ্জাবি গান বা অশ্লীল শব্দ দিয়ে গান গাইলেই সেটা হিট গান।’’কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ অন্য পথে নিজেকে খুঁজছেন। সেই খোঁজার নাম রবীন্দ্রনাথ। ছোটবেলায় তাঁর রবীন্দ্রনাথ ভাল লাগত না। যেমন বিটলস্-ও শুনতেন না তিনি।
আরও পড়ুন, সোশ্যাল ওয়ালে সলমনকে অনুরোধ, ‘দাবাং ৩ চাই না’
কিন্তু আজ?
‘‘জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে রবীন্দ্রনাথের শব্দ, সুর বোঝা যায়।মনে হয় ওখানে সব চাওয়া সব পাওয়া আছে,’’বললেন শান। এখন তাই রবীন্দ্রনাথের গানের ইংরেজি অনুবাদের গান গাওয়ার কাজে হাত দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকার দিতে দিতেই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে নিজের গানের ভাবনা ভাগ করে নিতে চাইলেন শান। ‘‘পাশের বাড়ির মেয়েটা গাইছে বলে আমাকেও গাইতে হবে এই ভেবে প্লিজ কেউ গান করবেন না। দীর্ঘদিনের শিক্ষা আর রেওয়াজ সবচেয়ে জরুরি। এখন প্রচুর শিল্পী, প্রচুর গান। আপনাকে এই ভিড়ের মাঝে হয় সবচেয়ে ভাল, নয় সবচেয়ে খারাপ হতে হবে! তবেই জায়গা করা যাবে...’’
একি রাগ? নাকি অভিমান?
ফ্লোরিডায় ভোর পেরিয়ে ঝলমলে সকাল!
আজ ওখানকার মানুষ‘সবচেয়ে ভাল’শানদার গায়কের অপেক্ষায়।কুয়াশার ভেতর থেকে তিনি রোদ হয়ে বেরিয়ে আসবেন!
ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।