টানা বিয়ের মরসুমে বিয়েবাড়িতে অনেকের সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল। তাদের অনেকের মতে বিয়ের এই অনুষ্ঠান টাকার শ্রাদ্ধ। দু’জোড়া এমন কাপলকে পেয়েছিলাম যাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে হল, আরে সম্পর্কের এটাও তো একটা দিক। লিভিং টুগেদার। সোজা বাংলায় এক সঙ্গে থাকা।
ভারতে এখনও বিয়ে না করে এক সঙ্গে থাকা নিয়ে সমাজের অনেক খুঁতখুঁতানি আছে। তাই হয়তো অনেকেই সমাজের চাপে মন্ত্র পড়ে বিয়ে করে নেন।
আমি এক কাপলকে চিনি য়াঁরা বিয়ে না করেও এক সঙ্গে থাকেন। কোনও সন্তান সন্ততির পরিকল্পনা নেই। পরষ্পরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সমাজে পরিচিত করেন না। তার বদলে বলেন পার্টনার। আবেগগত ভাবে তাঁরা পরষ্পরের পাশে থাকতে চান, দিতে ছান মানসিক আশ্রয়।
এই জুটি কি পরিবারের স্বীকৃতি পেয়েছ? না প্রথম থেকে পায়নি। দুই সাথীরই পরিবার খুব রক্ষণশীল ছিল তাঁদের গ্রহণ করার ব্যাপারে। কিন্তু সময় যত এগোল, বয়স যত বাড়ল দুই পরিবারেরই রক্ষণশীলতা শিথিল হয়ে এল। ভারতীয় পরিবারে লিভ ইন করে স্বীকৃতি পাওয়া অত সোজা ব্যাপার নয়। সম্পর্ক নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকলে পার্টনাররা ক্রমে ক্রমে গ্রহণযোগ্যতা পাবেনই।
লিভ ইন করার অনেক সুবিধাও আছে। বহু বছর এক সঙ্গে থাকার পর বিচ্ছেদ চাইলে তার জন্য ডিভোর্সের জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না। বিয়ের জন্য বিরাট টাকাকড়ি খরচ হয়নি বলে কোনও আপশোসও থাকে না।
আমি আর এক ডিভোর্সি কাপলকে চিনি। তাঁদের মধ্যেকার পুরুষটির আগের পক্ষের ছেলেমেয়ে রয়েছে। সেই কাপলটি নতুন করে বিয়ের মধ্যে না গিয়ে লিভ টুগেদার করতে চান। ছেলেমেয়েরাও বাবার এই লিভ ইনের স্টেটাস মেনে নিয়েছে। লিভ ইন করলে সন্তানসন্ততিদের সম্পত্তি ভাগাভাগিতেও কোনও অসুবিধে হয় না।
আর সব থেকে ব়ড় কথা হল, ‘লিভ ইন’ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছেন এই প্রজন্ম। বিয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে অর্থহীন আর সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই মনে করেন না তাঁরা। তাঁদের মতে ‘বন্ডিং’টাই বড় কথা—সে লিভ ইন হোক কি বিয়ে। অনেকে অল্প সময়ের জন্য হলেও আলাদা আলাদা শহরে থাকছেন, যাতে পরের বার দুজনের মধ্যে দেখা করার বাসনা প্রবল হয়।
সুখী লিভ ইনের কয়েকটা টিপস
১) প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনারা বিয়ে ছাড়াই এক সঙ্গে থাকতে চান কিনা।
২) কয়েকটা নিয়ম আগেই তৈরি করে নিন। যেমন কে বিল মেটাবেন, কে কবে বাড়ির কাজ করবেন
৩) এক জন অপর জনের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাবেন না।
৪) লিভ ইন সম্পর্কের জন্য বন্ধু বিচ্ছেদ করবেন না।
৫) এক জন অন্য জনের পছন্দ -অপছন্দকে গুরুত্ব দিন।