Kanchan Mallick

‘কাঞ্চনের জীবনে কী হচ্ছে, দেখার জন্য ওঁর পরিবার আছে, আমি আর কী বলব’

পেশাগত জীবন থেকে কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে সম্পর্ক— আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট বিধায়কের প্রাক্তন স্ত্রী অনিন্দিতা দাস।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ১৬:০৬
Share:

কাঞ্চনকে নিয়ে অকপট তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী অনিন্দিতা।

প্রশ্ন: এত কম বয়সে ধারাবাহিকে মায়ের চরিত্র করছেন। এর পর যদি শুধু মায়ের চরিত্রই পান?

Advertisement

অনিন্দিতা: ‘দত্ত অ্যান্ড বৌমা’ ধারাবাহিকে তে মেয়ের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছি আমি। মায়ের চরিত্র করব না, এটা অভিনেত্রী হিসেবে ভাবতে পারি না। আমি তো এই চরিত্র করার সঙ্গে সঙ্গে ‘কন্যাদান’ আর ‘রোজা’ নামের ধারাবাহিকে তিরিশ বছর বয়সের মেয়ের চরিত্রেও অভিনয় করছি! এমন তো নয় যে, মায়ের চরিত্র করেছি বলে অন্য চরিত্রে কেউ আমায় ভাবতে পারছেন না। এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলি?

প্রশ্ন: নিশ্চয়ই।

Advertisement

অনিন্দিতা: অংশুমান চক্রবর্তীর তথ্যচিত্রে কাজ করছি। এখানে একজন ২৫ বছরের গবেষকের চরিত্রে অভিনয় করছি আমি। আর ‘রোজা’ ধারাবাহিক শুরু হবে অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থায়। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। সেখানেও তিরিশ বছরের মহিলার চরিত্র। অভিনয়টাই আসল। বয়স নয়।

প্রশ্ন: ধারাবাহিকে অভিনয় করতে করতে কিন্তু চরিত্ররাই বড় হয়ে ওঠে। অভিনেত্রীর নামটা কোথাও হারিয়ে যায়।

অনিন্দিতা: হ্যাঁ, এরকম হয়। তবে যে অভিনেত্রী একটানা একাধিক চরিত্রে সফল, তাঁকে দর্শক তাঁর নামেই চেনেন। যেমন অপরাজিতা আঢ্য। যেমন তুলিকা দাস।

প্রশ্ন: ১৫ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। তেমন ভাবে কোনও জায়গায় কি পৌঁছনো গেল?

অনিন্দিতা: একদম পৌঁছতে পারিনি! এত দিন পর বিজ্ঞাপনের কাজ করলাম। আমি একেবারেই খুশি নই। যে কাজটা য়ে সময়ে করা উচিত ছিল, সেই সময় সেটা করিনি। ভুল আমার। যে কাজকে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, দেখেছি সেই কাজ শুধু আমার সময় নষ্ট করেছে। এরকম হয়েছে যে, দুটো কাজের সুযোগ এল। আমি আমার সময়ের কথা ভেবে যে একটা কাজ বাছলাম। দেখা গেল সেটা করে কোনও ফল হল না। ধারাবাহিকের জন্য ভাল ছবিতে কাজ করার সুযোগ হারিয়েছি নিজেই।

প্রশ্ন: ধারাবাহিক কেন গুরুত্ব পেল?

অনিন্দিতা: একটানা কাজ। তার পারিশ্রমিকের মধ্যে একটা নিশ্চয়তা থাকে। আমি সেটা ভেবেই ছবি করিনি। কিন্তু পরে দেখেছি সেই ছবি এত উচ্চমানের ছিল যে, তার সঙ্গে অভিনেতা হিসেবে আমার যুক্ত থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। বললাম তো, আমারই ভুল।

প্রশ্ন: আপনি তো ইন্ডাস্ট্রির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। সেটা ভুল নয়?

অনিন্দিতা: একটানা কাজের পারিশ্রমিকের মধ্যে একটা নিশ্চয়তা থাকে। সেটা ভেবেই আমি এখনও ইন্ডাস্ট্রির ৭০ শতাংশ মানুষকে চিনি না। আমি খুব ঘরকুনো। ছুটি পেলেও বাড়িতে থাকি। পার্টিতে যাই না।

প্রশ্ন: আপনার কিন্তু রবীন্দ্রভারতীতে গান শেখানোটাই ঠিক ছিল।

অনিন্দিতা: না। আমি তা চাইনি। আমি ছৌ নাচের গান নিয়ে গবেষণা করেছি। গবেষণার পরেও বিদেশে কাজ করার সুযোগ ছিল। আমি করিনি। অভিনয় করতে ভালবাসি। আর পড়াশোনা করতে পছন্দ করি। এখানে পছন্দর চেয়ে ভালবাসা আগে। তাই অভিনয়। মনে হয়েছিল পড়াতে যতটা ভাল পারব, তার চেয়ে অভিনয়টা বেশি ভাল করব। তাই এই সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন: আফশোস হয় না?

অনিন্দিতা: কোনও আফশোস নেই। জানতাম এ কাজের জন্য প্রচুর ধৈর্য লাগে। লড়াই করতে হবে। সেটা মেনেও নিতে হবে। আমি অভিনয় নিয়েই থাকব। ধীরে ধীরে এগোব।

‘দত্ত অ্যান্ড বৌমা’ ধারাবাহিকে কাজ করছেন অনিন্দিতা।

প্রশ্ন: আপনি ‘হারবার্ট’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। সুমন মুখোপাধ্যায়এর সঙ্গে আর কেন কাজ করা হল না?

অনিন্দিতা: নিশ্চয়ই আরও কাজ করতে চাই। ওর সঙ্গেই আমার প্রথম কাজ। আমার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজ করতেও খুব ইচ্ছে হয়।

প্রশ্ন: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হলে বলতে পারবেন কাজ দিতে?

অনিন্দিতা: কে জানে! চেষ্টা করব। আমার ইন্ডাস্ট্রিতে তো কোনও অভিভাবক নেই। যারা আমার হয়ে কাজের কথা বলবে। আমায় ধাক্কা দেবে। আমি খুব মুখচোরা। এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ খোঁজার লড়াইটা তাই চলতেই থাকবে।

প্রশ্ন: কতখানি লড়াই করতে হয়েছে?

অনিন্দিতা: পড়াশোনা সেরে ইন্ডাস্ট্রিতে পাঁচ বছর পরে ফেরা সহজ ছিল না। কোনওদিন টাকাপয়সা জমাতে পারিনি। তখন টাকাও ছিল না তেমন। এমন দিন ছিল, বিকেলবেলা জানতাম না রাতে কী খাব! তবে একাধিক বন্ধু আছে। যারা ওই সময়ে আঁকড়ে ধরেছিল আমায়। এই ঋণ শোধ করতে পারব না কোনওদিন। বন্ধু, পরিবার— এদের জোরেই আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। বন্ধুরা আমায় ধাক্কা দেয়। বলে এটা করতেই হবে। এই ধাক্কাগুলো আমার জীবনে খুব দরকার।

প্রশ্ন: বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে বলেই কি আপনি এত আদুরে?

অনিন্দিতা: হতে পারে। আমি কাজ ছাড়া পরিবারের মধ্যেই নিজেকে আটকে রাখি।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারে এখন কে আছে?

অনিন্দিতা: বাবা-মা আর আমার বিড়াল পুচকি। ও আমার মেয়ে। রাত হলেই অপেক্ষা করে থাকে আমি কখন কাজ থেকে ফিরব।

নিজের পরিবারকে নিয়ে ভাল আছেন তিনি।

প্রশ্ন: বিয়ে করবেন না?

অনিন্দিতা: না। মানুষ পরিবারের জন্য বিয়ে করে। আমার তো পরিবার আছে।

প্রশ্ন: আপনি তো কাঞ্চন মল্লিকের প্রথম স্ত্রী।

অনিন্দিতা: এ বিষয়টা থাক না।

প্রশ্ন: কাঞ্চনকে তো বিয়ে করেছিলেন আপনি। সেটা তো লুকানোর কিছু নেই।

অনিন্দিতা: আমাদের সাড়ে সাত বছরের দাম্পত্য ছিল। বহুকাল বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।

প্রশ্ন: আপনি যে কাঞ্চনের প্রথম স্ত্রী ছিলেন, সেটা তো অনেকেই জানেন না।

অনিন্দিতা: পুরনো কথা বলে কী লাভ?

প্রশ্ন: সম্প্রতি কাঞ্চনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে…।

অনিন্দিতা: (থামিয়ে দিয়ে) দেখুন, ওঁর জীবনে কী হচ্ছে, তা দেখার জন্য ওঁর পরিবার আছেন। এটা তাদের বিষয়। আমি মন্তব্য করার কেউ নই।

প্রশ্ন: কিন্তু শোনা যায় আপনি নাকি কাঞ্চনের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন?

অনিন্দিতা: তাই যদি হয়, তা হলে আমার খেতে না পাওয়ার মতো অবস্থা কী করে হল বলুন তো? এটা হতে পারে না!

প্রশ্ন: আর বিয়ে করবেন না?

অনিন্দিতা: না।

প্রশ্ন: সহবাসে বিশ্বাস করেন?

অনিন্দিতা: হ্যাঁ। যদি দু’জন মানুষ পরস্পরকে ভালবাসে। বিশ্বাস করে। তবেই সহবাস সম্ভব।

প্রশ্ন: আপনি তো মুম্বইয়ে কাজের জন্য যেতে চান।

অনিন্দিতা: অবশ্যই।

প্রশ্ন: কিন্তু মুম্বইয়ে কোনও ভাল চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে দেখলেন সেখানে শয্যাদৃশ্য আছে। কী করবেন?

অনিন্দিতা: মুম্বই থেকে ওয়েব সিরিজ করার জন্য ডাক যে আসেনি, তা নয়। কিন্তু অভিনয়ের সঙ্গে এমন কিছু করতে হত, যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই কাজ হয়নি। আরোপিত চারটে শয্যাদৃশ্য নিয়ে যে প্রযোজক বা পরিচালক ছবির প্রস্তাব করতে আসেন তাঁদের ছবিতে আমি কাজ করতে পারি না। তবে খোলামেলা দৃশ্য যদি চিত্রনাট্যের চাহিদা হয়, তা হলে আমি করতে রাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন