ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা ভাল বললে ভয় হয়

বাংলাদেশের প্রথম সারির নায়িকা সমানতালে কাজ করছেন এপার বাংলাতেও। জয়া আহ্‌সান এ বার প্রযোজনাতেও আসছেন কলকাতা তাঁর কাছে এত দিন অ্যাওয়ে গ্রাউন্ড ছিল। ধীরে ধীরে পরিবেশটা আত্মস্থ হয়েছে। কাছের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সেটাতেই কি জয়া আহ্সান ভয় পাচ্ছেন?

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৪
Share:

কলকাতা তাঁর কাছে এত দিন অ্যাওয়ে গ্রাউন্ড ছিল। ধীরে ধীরে পরিবেশটা আত্মস্থ হয়েছে। কাছের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সেটাতেই কি জয়া আহ্সান ভয় পাচ্ছেন?

Advertisement

‘বিসর্জন’ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। জয়ার অভিনয় নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা হচ্ছে চারিদিকে। তা হলে ভয়টা কীসের? ‘‘সকলেই খুব ভাল বলছেন। বিশেষ করে এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষজন। তাতেই ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে, আমি ঠিকঠাক এগোচ্ছি তো? অনেক দিন হল টলিউডে কাজ করছি। সকলের সঙ্গে আলাপ-বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। আমার যাতে খারাপ না লাগে তার জন্য এঁরা তো আমাকে ভাল বলবেনই। হয়তো সত্যিটা চেপে যাবেন। এটাতেই ভয় পাচ্ছি,’’ কারণটা খোলসা করলেন জয়া।

‘বিসর্জন’ নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও ভাল। ‘‘সেটাতে অবশ্য জোর পাচ্ছি কিছুটা। আমরা সিনেমা হল ভিজিট করতে গিয়েছিলাম। দেখলাম, সাত-আট বছর পর অনেকে শুধু এই সিনেমাটা দেখবেন বলে হলে এসেছেন। এগুলো দেখে ভাল লাগে,’’ বললেন জয়া।

Advertisement

একটা সময় জয়ার অভিযোগ ছিল, টালিগঞ্জ তাঁকে ভাল করে ব্যবহার করতে পারছে না। বাংলাদেশে যে ধরনের ছবি করতে তিনি অভ্যস্ত, সেগুলোও খুব নিয়মিত হয় না। অভিনয় নিয়ে একটা অপ্রাপ্তি ছিল। ‘বিসর্জন’ কি সেই আক্ষেপ খানিকটা হলেও মেটালো? জবাব দিলেন, ‘‘অবশ্যই। বরং কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়) চ্যালেঞ্জটা দেওয়ার পর আমি বেশ ভয়েই ছিলাম। মনে হচ্ছিল, চরিত্রটার প্রতি ঠিকমতো জাস্টিস করতে পারব তো?’’

আরও পড়ুন: ময়ূরাক্ষীর কিনারায় সৌমিত্র-প্রসেনজিৎ

তা হলে কলকাতা তাঁকে ভাল কাজ দিতে পারছে? ‘‘মহিলাপ্রধান চরিত্রের আকাল সব জায়গাতেই। তাই যেটুকু পাওয়া যায়, সেটাই ভাল,’’ হেসে বললেন জয়া।

কলকাতা ক্রমশ তাঁর নিজের এলাকা হয়ে উঠছে। এর পর আবির চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’তে তাঁকে দেখা যাবে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘কণ্ঠ’ ছবিতেও তাঁর কাজ করার কথা। কলকাতা-ঢাকা সময় ভাগাভাগিটা কীভাবে করছেন? ‘‘সবটাই নির্ভর করে কাজের উপর। মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে কিছু কাজ আছে। সেগুলো মিটিয়ে আবার কলকাতায় চলে আসব,’’ বললেন জয়া। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার কাজও শুরু করে দিয়েছেন জয়া। হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলির গল্প নিয়ে প্রথম ছবি তাঁর। বললেন, ‘‘সরকার থেকে হঠাৎই অনুদান মঞ্জুর হয়ে গেল। ‘দেবী’ গল্পটা নিয়ে ছবি করব। প্রযোজনা একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা আমার কাছে। দেখা যাক, কতটা কী করে উঠতে পারি।’’ ছবিতে জয়া নিজেও অভিনয় করবেন। ‘দেবী’ গল্পে রানুর চরিত্রটা করছেন তিনি।

অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ দিয়ে টলিউডে শুরু করেছিলেন জয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ছবিটা আমার প্রথম সন্তানের মতো বলতে পারেন। ‘আবর্ত’-র মাধ্যমেই তো কলকাতার দরজা আমার কাছে খুলেছিল।’’ নিজের পছন্দের কাজের তালিকায় ‘আবর্ত’, ‘বিসর্জন’, বাংলাদেশের ছবি ‘গেরিলা’কে রাখছেন জয়া।

‘আবর্ত’ দিয়ে টলিউডে পা রাখলেও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনী’ তাঁকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। যদিও ছবি মুক্তির পর তাঁর চরিত্র নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন জয়া। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, সৃজিত যে ভাবে গল্পটা ব্যাখ্যা করেছিলেন, পরদায় দেখে সেটা মেলাতে পারেননি তিনি। ‘রাজকাহিনী’র হিন্দি রিমেক ‘বেগম জান’ নিয়েও একই ধরনের কথাবার্তা বলিউডে ঘুরছে। সেটা জয়া নিজেও সেটা বিলক্ষণ জানেন।

‘বিসর্জন’ আর ‘বেগম জান’ একই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটা দেখেছেন? ‘‘না, দেখা হয়ে ওঠেনি। নিজের ছবি নিয়ে এখনও ব্যস্ত। তবে নিশ্চয়ই দেখব।’’ সত্যি বলছেন? ‘‘আরে, সৃজিত মুম্বই গিয়ে একটা হিন্দি ছবি করল আর সেটা দেখব না! আমাদের সকলেরই দেখা উচিত।’’ সৃজিতের সঙ্গে জয়ার একটা আলাদা সখ্য রয়েছে। সেটা সকলেরই জানা। কিন্তু ‘বেগম জান’ নিয়ে জাতীয় স্তরে প্রতিক্রিয়া একেবারেই ভাল নয়। যাঁরা বাংলা-হিন্দি দু’টো ছবিই দেখেছেন তাঁরা একবাক্যে বলছেন, ‘রাজকাহিনী’র অভিনেতারা অনেক ভাল কাজ করেছেন। জয়ার চরিত্রটার প্রসঙ্গও উঠে আসছে সেই প্রেক্ষিতে। ‘‘আমিও বিষয়টা শুনেছি। কিন্তু ‘বেগম জান’-এর কারও অভিনয় নিয়ে কিছু বলা আমার ঠিক হবে না। কোনও তুলনায় যেতে চাই না,’’ একটু যেন সাবধানী গলায় বললেন জয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন