Tollywood

অজানা ‘ক্ষত’র খোঁজে দুঃসাহসী অভিযান

বাংলা ফিল্মের দর্শক এতো সাহসী চিত্রনাট্য এর আগে খুব একটা বেশি পায়নি। গল্পের নায়ক লেখক নির্বেদ লাহিড়ীর (প্রসেনজিৎ) মাধ্যমে বাংলা ছবির আদি কালের রোম্যান্সের ধারণা মুহূর্তে ওলটপালট করে দিয়েছেন ছবির পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সত্যিই এমন বোল্ড নায়ক চরিত্র বাংলা সিনেমায় খুব একটা দেখা যায়নি৷

Advertisement

সুদীপ দে

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ১১:০২
Share:

বাংলা ফিল্মের দর্শক এতো সাহসী চিত্রনাট্য এর আগে খুব একটা বেশি পায়নি। গল্পের নায়ক লেখক নির্বেদ লাহিড়ীর (প্রসেনজিৎ) মাধ্যমে বাংলা ছবির আদি কালের রোম্যান্সের ধারণা মুহূর্তে ওলটপালট করে দিয়েছেন ছবির পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সত্যিই এমন বোল্ড নায়ক চরিত্র বাংলা সিনেমায় খুব একটা দেখা যায়নি৷
অতীতে দু-একজন বাঙালি লেখকের সঙ্গে অনেকেই হয়তো এই নির্বেদ লাহিড়ীর মিল খুঁজে পাচ্ছেন। ছবির পরিচালকও এই মিল খুঁজে পাওয়াটাকে মোটেই কাকতালীয় বলে মনে করছেন না। বরং শরীরী পরত পেরিয়ে মনের ক্ষত খুঁজে পাওয়ার অভিযানে সামিল হতে পারেন আপনিও। এ বার একটু ছবির গল্পে চোখ রাখা যাক।
গল্প শুরু হয় দুই অল্প বয়সী ছেলে-মেয়ে ঋষভ-সোহাগের ‘লভ অ্যাডভেঞ্চার’-এর ঘটনার মধ্যে দিয়ে৷ বাড়িতে ‘গল্প’ দিয়ে ওড়িশার সমুদ্রসৈকতে পৌঁছে যায় তারা৷ ঘটনাচক্রে তাদের সঙ্গে সেখানে দেখা হয়ে যায় কলকাতা থেকে ‘হারিয়ে যাওয়া’ লেখক নির্বেদ লাহিড়ীর৷ আর এই যুবক-যুবতীর মধ্যে নির্বেদ খুঁজে পান তাঁর ফেলে আসা অতীতকে। এখান থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে কুড়ি বছর আগের কলকাতা।
গল্পের নায়ক নির্বেদ লাহিড়ী সাম্প্রতিক অতীতের একজন খ্যাতনামা লেখক। একটি নামী পত্রিকা অফিসে তিনি চাকরি করেন। মহিলাদের কাছে পেতে তিনি ভালবালেন, মহিলারাও পছন্দ করেন তাঁর সান্নিধ্য৷ মহিলাদের শরীর ছোঁয়ার জন্য কোনও রকম ভণিতার আশ্রয় নেন না নির্বেদ। কিন্তু স্ত্রী সৃজিতার প্রতিও (রাইমা) তাঁর ভালবাসা একেবারে খাঁটি। আবার অন্যের তরুণী স্ত্রী অন্তরার (যে চরিত্রে রয়েছেন পাওলি দাম) শরীরকে উপভোগ করাটা তাঁর কাছে টানটান উত্তেজনায় ভরা একটা শর্ট টাইম জার্নি। অন্তরার স্বামীকে চাকরি পাইয়ে দিয়ে তাঁর উপর দাবি যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায় নির্বেদ লাহিড়ীর। আর স্বামীর নিম্নমধ্যবিত্ত মানসিকতার নিরুত্তাপ জীবনযাপন অন্তরাকে আরও নির্বেদের ঘনিষ্ঠ করে তোলে।

Advertisement

একাধিক দুঃসাহসী সংলাপে ভর করে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘ক্ষত’র চিত্রনাট্য শরীর, প্রেম আর অদ্ভুত এক রহস্যে মোড়া৷

ছবির মোড় ঘুরছে অন্তরার স্বামী অলোকেশের আত্মহত্যা আর অন্তরার মানসিক ভারসাম্য হারানোর ঘটনায়। এই দুই অঘটনের দায় গিয়ে পড়ে নির্বেদ লাহিড়ীর উপর। আর এখানেই গল্পের জমাট ভাবটা যেন হঠাত্ কেটে যাচ্ছে! এই আত্মহত্যার কেন কোনও পুলিশি তদন্ত হল না! কেন সরাসরি নির্বেদ লাহিড়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ধরা গেল না! তার উত্তর পাওয়া গেল না।

Advertisement

আরও পড়ুন...
এক ‘কাবালি’ থেকেই এত টাকা আয় করলেন রজনীকান্ত!

তবে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের উপস্থাপনা, দৃশ্যপট নির্বাচনের গুণে, ছবির সুন্দর সঙ্গীত-আবহসঙ্গীতে অনায়াসেই ঢাকা পড়েছে ছবির এমন দু’একটা ছোটখাটো ত্রুটি। অনুপম রায়ের লেখা ও সুর করা গানগুলি ছবিটিকে আরও ছন্দময়, সুন্দর করে তুলেছে। সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে নির্বেদ লাহিড়ীর চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দুর্দান্ত অভিনয়। গল্পের নির্বেদ লাহিড়ী একজন ভাল-মন্দের আলো-আঁধারে খেলে বেড়ানো রক্তমাংসে গড়া স্বাভাবিক মানুষ। সাংঘাতিক বলিষ্ঠ এই চরিত্রটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছেন প্রসেনজিৎ। প্রসেনজিতের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে রাইমা এবং অন্তরার চরিত্রে পাওলির অভিনয় কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের চিত্রনাট্যকে আরও পরিণত করেছে।

শরীরের ক্ষত দেখা যায়, স্পর্শ করা যায়। সারিয়েও তোলা যায়। কিন্তু মানুষের মনের ক্ষত বেশিরভাগ সময়ই অদেখা, অজানাই রয়ে যায়। কিন্তু ‘ক্ষত’র পরিচালককে অসংখ্য ধন্যবাদ, শরীরের বাধা পেরিয়ে মনের ক্ষতস্থানে আলোকপাত করার জন্য। বলিষ্ঠ চিত্রনাট্য এবং পরিচালনার মধ্যে দিয়ে প্রেমিক বাঙালী মনের অ্যাডভেঞ্চারের অজানা দিকটাকে সামনে আনার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন