ফুটবল, সিনেমা, অমিতাভ, ইতিহাস, শুরু ফিল্ম উৎসব

ব্রিটিশ পরিচালক আছেন, আর যুবভারতী স্টেডিয়ামে ব্রিটেনের চ্যাম্পিয়ন-হওয়া অনূর্ধ ১৭ ফুটবলের কথা উঠবে না, তাও কি হয়? মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আমরা অনূর্ধ ২০ বিশ্বকাপের জন্যও প্রস্তুত।

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

আলিঙ্গন: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে তারকাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

উৎসবে যে রকম হয়ে থাকে! বিকেল সোয়া ৪টায় উদ্বোধন, তার আগে দুপুর থেকেই ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মেন গেটের সামনে ১৫ জন পুলিশ। ভিতরে পুলিশকে সাহায্য করছেন দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেন। পাশাপাশি বসে সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শাহরুখ, অমিতাভরা ঢুকতেই প্রবল উল্লাস, মোবাইল ফোনে ফ্ল্যাশের ছড়াছড়ি। শেষ লগ্নে তাঁর ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারো মাসে তেরো পার্বণের কথা টানলেন, ‘‘অনেকেই বলে, কেন বছর বছর ফিল্ম উৎসব হবে? কিন্তু উৎসব হবে। এটা আমাদের ঐতিহ্য।’’ বিশেষ অতিথি ব্রিটিশ পরিচালক মাইকেল উইন্টারবটম ও সব অভ্যাগতদের জানালেন, ‘‘২০১২ সালের আগে এই উৎসবের এত আন্তর্জাতিক জৌলুস ছিল না। এখন হলিউড-বলিউড-টলিউড-টেলিউড সকলে এর অংশ।’’

Advertisement

ব্রিটিশ পরিচালক আছেন, আর যুবভারতী স্টেডিয়ামে ব্রিটেনের চ্যাম্পিয়ন-হওয়া অনূর্ধ ১৭ ফুটবলের কথা উঠবে না, তাও কি হয়? মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আমরা অনূর্ধ ২০ বিশ্বকাপের জন্যও প্রস্তুত। এই প্রতিশ্রুতিটি রক্ষিত হতেই পারে। তার আগে শাহরুখ খান গত তিন বছরের মতো প্রতিশ্রুতি দিলেন, সামনে বছর তিনি বাংলায় বলবেন। কিন্তু ধুতি-পাঞ্জাবি চাই। কাজল তাঁর পিতৃদত্ত মুখোপাধ্যায় পদবীর কথা বলেছেন (সোমু মুখোপাধ্যায় ও তনুজার কন্যা তিনি), গ্যালারিতে চিৎকার উঠল, ‘আই লাভ ইউ, কাজল।’ স্বতঃস্ফূর্ত নায়িকার জবাব, ‘আই লাভ ইউ টু।’ এই চিৎকারের মাঝেই মঞ্চে শিভালরি দেখালেন বাজিগর। উপহার হিসেবে পাওয়া কালীঘাটের পট ও উত্তরীয় কাজলের কাছ থেকে নিয়ে এক পাশে গুছিয়ে রাখলেন তিনি। তার একটু আগে দেব উত্তরীয় দিয়ে বরণ করেছেন শাহরুখকে, প্রসেনজিৎ অমিতাভকে। কলকাতা-মুম্বইয়ের এই তারকামিলনও প্রত্যাশিত। তারই মাঝে উৎসব কমিটির চেয়ারপার্সন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাঁর এখানে ভয় লাগছে। মাধবী মুখোপাধ্যায় মঞ্চে উঠছেন, চারুলতাকে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন অমিতাভ বচ্চন।

সব প্রত্যাশা অবশ্য মেটেনি। যেমন, কমল হাসন রাজনীতির কথা বলেন কি না, সে নিয়ে কলকাতার মিডিয়ার হরেক স্পেকুলেশন ছিল। কমল তাঁকে আমন্ত্রণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন।

Advertisement

বাকি থাকলেন সেই ৬ ফুট ২। এ বারে তাঁর গবেষণামুলক বক্তৃতাটি সিনেমার গান নিয়ে। ১৯৩৫ সালে নীতিন বসু যে ‘ভাগ্যচক্র’ ছবিতে প্রথম প্লে ব্যাকের জন্ম দেন, সে সব বলে শচীন দেব বর্মন, পঞ্চমদা থেকে রহমান অবধি টানা ইতিহাস। এই ইন্ডোর স্টেডিয়ামেই যে রবীন্দ্রসঙ্গীত অবলম্বনে ‘ইয়ারানা’ ছবিতে তাঁর লিপে ছুকর মেরে মনকো গান, মনে করিয়ে দিলেন সেটিও। অমিতাভ বচ্চনের এ ভাবে ইতিহাস ছুঁয়ে যাওয়াটাও প্রত্যাশিত।

প্রত্যাশাই জন্ম দিয়েছে সুস্বপ্নের। অমিতাভ তাঁর বক্ততায় নৌশাদের সুরে, বড়ে গুলাম আলির কণ্ঠে কৃষ্ণভজনের কথা এনেছেন। গোরক্ষকদের তাণ্ডবনৃত্যের ভারতে সিনেমার উজ্জ্বল উদ্ধার। মহেশ ভট্টও জানিয়েছেন, ‘‘ক্ষমতা গল্পগুলিকে তার বয়ানে আমাদের দিয়ে বলাতে চায়, কিন্তু সিনেমা সব সময় সে রাস্তায় হাঁটে না।’’

সিনেমার হাঁটা অন্য রকম। উদ্বোধনী ছবি ‘ইয়েলো’ শুরুর আগে লন্ডনের উড়ান ধরবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানশেষে বেরিয়ে গিয়েছেন। শাহরুখেরও দেরি হয়ে গিয়েছে, দ্রুত ধরতে হবে মুম্বইগামী উড়ান। প্রোটোকলের তোয়াক্কা না করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে তুলে নিলেন নিজের গাড়িতে।

উৎসবে যেমন হয়ে থাকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন