ছেলে আমার মতোই হয়েছে, সারা রাত কথা বলে: কোয়েল

“আমি তো এখন ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছি। তখনই আমাদের সকলের করোনা হল! কী ভয়ঙ্কর সময়, ডাক্তার বললেন বাচ্চাকে নিয়ে আমায় কোয়রান্টিনে থাকতে হবে।এ ছাড়া উপায় নেই। সারা ক্ষণ মাস্ক পরে থাকতাম। রানেও তখন অসুস্থ, সারাক্ষণ কাশছে, জ্বর। তবে যা-ই হোক, মনের জোর কখনও হারাইনি!”

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ১৪:৫৪
Share:

কোয়েল মল্লিক।

ভোর সাড়ে ৩টে। জেগে আছে সাড়ে তিন মাসের ছেলে আর মা। মায়ের নাম কোয়েল মল্লিক, ছেলের নাম বাবা-মা এখনও দিয়ে উঠতে পারছেন না। একশোর উপর নামের তালিকা তৈরি হয়েছে, তবু সেখান থেকে একটা নামও খুঁজে পাওয়া দায়। দিন-রাতের আর হিসেব নেই কোয়েলের। পরের বছরের আগে স্টুডিয়োপাড়া নিয়েও একেবারেই ভাবছেন না তিনি। সাড়ে তিন মাসের ছেলের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে, যেমন কোভিড পজিটিভ হওয়ার পরেও ছোট্ট শিশু আর মা এক সঙ্গে নিভৃতবাসে ছিলেন।
“আমি তো এখন ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছি। তখনই আমাদের সকলের করোনা হল! কী ভয়ঙ্কর সময়, ডাক্তার বললেন বাচ্চাকে নিয়ে আমায় কোয়রান্টিনে থাকতে হবে।এ ছাড়া উপায় নেই। সারা ক্ষণ মাস্ক পরে থাকতাম। রানেও তখন অসুস্থ, সারাক্ষণ কাশছে, জ্বর। তবে যা-ই হোক, মনের জোর কখনও হারাইনি!” ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলে গেলেন কোয়েল।
ছেলে হওয়ার পর থেকেই কোয়েল বাবার বাড়িতে। রঞ্জিত মল্লিক আর স্ত্রী দীপা মল্লিকের প্রথম জ্বর হয়। “সাধারণ জ্বর ছিল। ওষুধ খেয়ে ঠিকও হয়ে যায়। আমরা তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাইনি। ওমা! পরে আমার আর রানের টেস্ট হল,দেখলাম করোনা। রানে তো রোজ আমাদের দেখতে আসত। সেখান থেকেই…এত পজিটিভ আমি, করোনার কথা মাথাতেও আসেনি।” আজও বিস্ময় কোয়েলের গলায়।

Advertisement

আরও পড়ুন- ইনস্টাগ্রামে একে অপরকে ‘আনফলো’ করলেন কার্তিক-সারা! কেন?

Advertisement


এর পরেই নিজের বাড়ি ফেরেন কোয়েল, ছেলে-সহ বন্দি করেন নিজেকে। কিন্তু বাচ্চা আর কোভিড পেসেন্ট… কথাটা শেষ না হতেই বললেন কোয়েল, “এক জন বাচ্চা এই সময়ে যে ভাবে বেড়ে ওঠে আমার ছেলে সে ভাবেই বেড়ে উঠেছে। ওর সঙ্গে খুব খেলেছি, এরকম কতদিন গিয়েছে একটানা ঘরের মধ্যেই চার ঘণ্টা ওকে নিয়ে হেঁটেছি, বুঝেছি তখন ও আমার কোলে হাঁটতেই চায়। তখন ভাবিনি আমার শরীর খারাপ, ঘুম আসছে।আমি তো মা, সময় যত শক্ত হয়ে আসে মায়েরা তার চেয়েও শক্ত হয়ে সব কিছুর মোকবিলা করে”,যুদ্ধে জয়ী মায়ের বিশ্বাস সামনে এল।এখন মনে করেন, ওই দিনগুলো ঘন মেঘের মতো কালো। “আমি ওই কালো দিনেও রোজ আড়ালের সূর্যকে দেখতাম, জানতাম সে একদিন সামনে আসবে”,যোগ করলেন কোয়েল।

হাসপাতালের বেডে সদ্যজাত-র সঙ্গে কোয়েল। ছবি- ইনস্টাগ্রাম


কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধ করার একটাই মন্ত্রে বিশ্বাস করেন তিনি, জানালেন কোভিড হলে প্রত্যেক মানুষকেই কোভিড সক্রান্ত যে কোনও খবর, আলোচনা, ইন্টারনেটে কোভিড নিয়ে পড়াশোনা করা— সব কিছু থেকে নিজেকে বাইরে রাখতেই হবে। “আমি সারাক্ষণ স্তব গান শুনতাম। আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী, প্রতি মুহূর্তে ঈশ্বর মেনে চলি। সেই বিশ্বাসের জোর থেকেই ফোন অবধি দূরে রেখেছিলাম। ছেলের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। ওই বয়সের ছেলে যে ভাবে বড় হয় সেই ভাবে বড় করেছি। ওই মন্ত্র গান আমায় শক্তি দিয়েছে”, আত্মবিশ্বাস কোয়েলের কণ্ঠে।
আসতে আসতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন নায়িকা। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লাইট এক্সারসাইজ আরম্ভ করেছেন। “তবে এই মুহূর্তে ডায়েটের কথা একেবারেই ভাবছি না। এখন ছেলেই আমার সমস্ত জীবন জুড়ে। ও কিন্তু আমার মতো হয়েছে, খুব কথা বলে! রাত জেগেও বকতে থাকে! জেগে থাকলে নয় কোলে নিতে হবে, নয় কথা বলে যেতে হবে। এক দিন টেডি বিয়ার বসিয়ে রেখে সরে এসেছিলাম। সে কী রাগ! ওকে বোকা বানানো যায় না”,হাসতে হাসতে বললেন কোয়েল।
রানেকেও অন্য চোখে দেখতে পাচ্ছেন কোয়েল। “ছেলেকে রানে তো ছাড়তেই চায় না। এখন বাড়িতেই আছে তাই সময়ও দিতে পারছে। ছেলের বেবি কটের উপরে নিজেই পেরেক দিয়ে ফিট করে খেলনা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ওখানেই ছেলে আর বাবার সংসার চলছে, গল্প হচ্ছে। ছেলে বাবাকে কথা বলিয়েই ছাড়বে!”
শুনেছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর কোভিড পজিটিভ রিপোর্টের কথা। বললেন, “রাজকে টেক্সট করব। এই করোনা আসলে পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষের সামনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। কোনও মানুষ চাকরি হারিয়েছে। কেউ রোজ খাবার অবধি পাচ্ছে না। পরিবারের অনেকের একসঙ্গে করোনা হচ্ছে। তবুও আমি বলব হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। যত কষ্টই হোক না কেন লড়াইয়ে জিততেই হবে। করোনাকে মন থেকে দূর করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। আমি রোজ করোনা-মুক্ত পৃথিবীর প্রার্থনা করছি। আর মন বলছে, নভেম্বরে কিছু না কিছু পজিটিভ হবেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement